প্রতিবছরের মতো কোর্সটিকায় এবারও ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিটি বইয়ের সমাধান দেওয়া শুরু হয়েছে। কোর্সটিকায় আজকে তোমাদের জন্য ৯ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী বই ২য় অধ্যায় সমাধান শেয়ার করা হবে। ৯ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের এই অধ্যায়ের নাম হচ্ছে তাপমাত্রা ও তাপ। আজকে তাপমাত্রা ও তাপ অধ্যায়টি তোমাদের কাছে সহজভাবে তুলে ধরা হবে।
এই অধ্যায় আলোচনা শেষে তোমরা পেয়ে যাবে এই অধ্যায়ের সমস্যা সমাধান PDF। এই অধ্যায়ের বাড়ির কাজ ও এই অধ্যায়ে থাকা সমস্যাগুলোর সমাধান পিডিএফে দেওয়া হয়েছে। এখানে, তাপমাত্রা ও তাপ অধ্যায়ে থাকা প্রতিটি বিষয় সহজভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ৯ম শ্রেণি বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের সমাধান এভাবে পড়লে বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ বইটি তোমরা সহজে আয়ত্বে আনতে পারবে।
৯ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী বই ২য় অধ্যায় সমাধান
আমাদের চারপাশে আমরা নানা ধরনের শক্তি দেখি, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এই শক্তি আমরা নানাভাবে ব্যবহার করি। তাপ ঠিক সেইরকম একটি শক্তি । আমাদের জীবনে আমরা সবাই এই শক্তির সঙ্গে পরিচিত এবং কোথাও না কোথাও সেটি ব্যবহার করেছি। আমরা তাপ প্রয়োগ করে রান্না করি, চা-কফি খাওয়ার জন্য তাপ দিয়ে পানি গরম করি, কাপড় ধুয়ে তাড়াতাড়ি শুকাতে চাইলে রোদে কাপড় দিই।
অনেক সময় ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য বাড়তি তাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করি, রোদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিই, গরমের সময় কালো কাপড় না পরার চেষ্টা করি। এই তালিকা আরও অনেক দীর্ঘ করা সম্ভব। তাই স্বাভাবিকভাবেই তাপশক্তিটুকু কীভাবে এসেছে সেটি নিয়ে আমাদের সবার কৌতূহল রয়েছে। কিংবা অন্যভাবে বলতে পারি ঠিক কী কারণে তাপশক্তি গরম পানিতে আছে, কিন্তু ঠাণ্ডা পানিতে নেই সেটি আমাদের সবার জানা প্রয়োজন।
একসময় এই ব্যাপারটি নিয়ে বিজ্ঞানীদের মনে অনেক প্রশ্ন ছিল, কিন্তু এখন আমরা জানি, সব পদার্থ অণু- পরমাণু দিয়ে তৈরি, এবং এই অণু-পরমাণুগুলোর গতি বা কম্পনকে সামগ্রিকভাবে আমরা তাপ হিসেবে দেখি। অণু-পরমাণুগুলো যত বেশি ছোটাছুটি করবে, সেটি তত বেশি উত্তপ্ত বলে মনে হবে। এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানির ভেতরকার পানির অণুগুলো স্থির হয়ে নেই, সেগুলোও ছোটাছুটি করছে।
কিন্তু যখন তাপ দেওয়া হয় তখন সেই পানির ছোটাছুটি অনেক বেশি বেড়ে যায়। যদি বেশি তাপ দেওয়া হয়, তখন কোনো না কোনো পানির অণুর গতিবেগ এত বেড়ে যাওয়া সম্ভব যে, সেটি পানি থেকে মুক্ত হয়ে বের হয়ে যেতে পারে। আমরা সেটাকে বাষ্পীভবন বলি।
তাপ সঞ্চালন
আমাদের নানা কাজে তাপশক্তিকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিতে হয় কিংবা সঞ্চালন করতে হয়। তিনটি উপায়ে তাপ সঞ্চালন করা হয়; সেগুলো হচ্ছে তাপের পরিবহণ, পরিচলন এবং বিকিরণ।
পরিবহণ (conduction): কঠিন পদার্থের বেলায় তাপ হচ্ছে অণুগুলোর কম্পন তাই যখন কঠিন পদার্থের এক প্রান্ত উত্তপ্ত করা হয়, তখন সেই প্রান্তের অণুগুলো নিজের জায়গা থেকেই কাঁপতে থাকে। একটা অণু কাঁপতে থাকলে সেটি তার পাশের অন্য অণুকেও কাঁপাতে শুরু করে। সেই অণুটি তখন তার পাশের অপুকে কাঁপায়। এভাবে কম্পনটি কঠিন পদার্থের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পরিবাহিত হয় যেটি তাপের পরিবহণ নামে পরিচিত
পরিচলন (Convection): তরল কিংবা গ্যাসকে উত্তপ্ত করা হলে তার ঘনত্ব কমে সেটি হালকা হয়ে যায়, কারণ তখন তাদের অণুগুলোকে বেশি বেগে ছোটাছুটি করতে হয় বলে বেশি জায়গার প্রয়োজন হয়। একই পরিমাণ তরল বা গ্যাস একটু বেশি জায়গায় নিয়ে থাকলে তার ঘনত্ব কমে যায় বা সেটি হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়, তখন পাশের শীতল তরল বা গ্যাস সেখানে উপস্থিত হয়। এভাবে তরল বা গ্যাসের ভেতর একটা অভ্যন্তরীণ পরিচলন শুরু হয়, সেটি সকল পানিকে খুব ভালোভাবে মিশিয়ে পানিকে উত্তপ্ত করে।
বিকিরণ (Radiation): আমরা যখন রোদে দাঁড়াই, তখন যে তাপ অনুভব করি, সেই তাপ পরিবহণ কিংবা পরিচলন পদ্ধতিতে সূর্য থেকে আমাদের কাছে পৌঁছায়নি, এই তাপ যে পদ্ধতিতে পৌঁছায় তার নাম বিকিরণ বিকিরণের জন্য কোনো মাধ্যমের দরকার হয় না, সেজন্য সূর্য আর পৃথিবীর ভেতরে মহাশূন্য থাকার পরেও দৃশ্যমান আলোর সঙ্গে অদৃশ্য অবলোহিত রশ্মি এবং অতিবেগুনি রশ্মি বিকিরণের মাধ্যমে পৃথিবীতে চলে আসতে পারে।
আপেক্ষিক তাপ
একটা বস্তুতে কী পরিমাণ তাপ সঞ্চিত আছে সেটি নির্ভর করে বস্তুটি তাপমাত্রা, তার ভর এবং তার আপেক্ষিক তাপের উপর। যেহেতু বাতাসের ভর খুবই কম তাই তার তাপ ধারণ করার ক্ষমতা খুবই কম। একটি পদার্থের আপেক্ষিক তাপ কম হলে অল্প তাপ প্রদান করেও অনেক উচ্চ তাপমাত্রায় নেওয়া যায়। অন্যদিকে একটি পদার্থের আপেক্ষিক তাপ বেশি হলে একই তাপমাত্রায় নেওয়ার জন্য অনেক তাপ প্রদান করতে হয়।
তাদের প্রবাহ
দুটি বস্তুর তাপমাত্রা যদি ভিন্ন হয় এবং দুটিকে যদি একটির সংস্পর্শে অন্যটিকে আনা হয়, তাহলে যে বস্তুর তাপমাত্রা বেশি, সেখান থেকে তাপ যে বস্তুর তাপমাত্রা কম সেখানে প্রবাহিত হবে। সে কারণে তাপের প্রবাহের দিক দিয়ে অনেক সময় তাপমাত্রার সংজ্ঞা দেওয়া হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত দুটি তাপমাত্রা একই জায়গায় না পৌঁছাবে ততক্ষণ তাপের প্রবাহ হতেই থাকবে।
একটি সুচকে আগুনে উত্তপ্ত করা হলে তার ভেতরে মোট তাপের পরিমাণ খুব বেশি হবে না। সেই তুলনায় একটা বালতি ভরা পানিতে তাপের পরিমাণ অনেক বেশি। কিন্তু গরম সুচটিকে যদি পানিতে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে সুচটির তাপের পরিমাণ কম হলেও সেটি বালতির পানিতে তার তাপ প্রবাহিত করবে।
তাপমাত্রা ও অভ্যন্তরীণ শক্তি
তাপ শক্তিটি সঠিকভাবে জানার জন্য আমাদের তাপমাত্রা বিষয়টি সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। কারণ যে কোনো বস্তুর ভেতরে তাপের কারণে যে অভ্যন্তরীণ শক্তি সঞ্চিত থাকে তার সঙ্গে তাপমাত্রার একটি সম্পর্ক রয়েছে।
তাপ শক্তি
তাপ আমাদের সবচেয়ে পরিচিত এবং প্রয়োজনীয় শক্তির একটি ৷ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা নিয়মিত তাপ সৃষ্টি করি, তাপ ব্যবহার করি, আবার অনেক সময় বাড়তি তাপ অপসারণ করারও চেষ্টা করি। পৃথিবীর বর্তমান সভ্যতায় তাপের সৃষ্টি এবং নিয়ন্ত্রণ অনেক বড়ো ভূমিকা রেখেছে। যানবাহনে জ্বালানি ব্যবহার করে তাপ সৃষ্টি করা হয় সেই তাপ শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে যানবাহন চালানো হয়। বিদ্যুৎশক্তি কেন্দ্রে বেশিরভাগ সময়ে তাপশক্তি ব্যবহার করে জেনারেটর ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ সৃষ্টি করা হয়।
নিউক্লিয়ার শক্তি ব্যবহার করার সময় সেটি তাপ শক্তি হিসেবে পাওয়া যায়। পৃথিবীতে প্রাণ বিকাশের বেলাতেও সঠিক তাপশক্তির প্রাপ্যতা একটি বড়ো ভূমিকা রেখেছে। জীবিত প্রাণীরাও বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য গ্রহণ করে সেটি প্রথমে তাপশক্তি হিসেবে রূপান্তর করে নেয়। দুর্ভাগ্যক্রমে আবার মানুষ শক্তির অপব্যবহার করে পৃথিবীতে অপ্রয়োজনীয় তাপ সৃষ্টি করে সারা পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তন করে পৃথিবীর মানুষকে বিপদের ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে।
অণুর গতি ও তাপমাত্রা
আপাতদৃষ্টিতে তাপশক্তিকে যান্ত্রিক শক্তি থেকে পুরোপুরি ভিন্ন এক ধরনের শক্তি মনে হলেও এই শক্তিটা এসেছে পদার্থের অণু-পরমাণুর সম্মিলিত গতিশক্তি কিংবা কম্পন শক্তি থেকে ৷ কঠিন পদার্থের বেলায় তাপের অর্থ অণুগুলোর কম্পন ৷ তরল পদার্থের বেলায় সেটি হচ্ছে অণুগুলো পরস্পরের সংস্পর্শে থেকে গতিশীল থাকা। গ্যাসের বেলায় সেটি হচ্ছে অণুগুলোর একটি তুলনায় অন্যটির মুক্তভাবে ছোটাছুটি।
তাপশক্তিকে বুঝতে হলে আমাদের প্রথমে তাপমাত্রা বলতে কী বোঝায় সেটিও বুঝতে হবে। তাপ হচ্ছে শক্তির পরিমাণ এবং তাপমাত্রা হচ্ছে কোনোকিছু কতটুকু উত্তপ্ত কিংবা কতটুকু শীতল তার একটি পরিমাপ। কাজেই আণবিক দৃষ্টিতে তাপমাত্রাকে বলা যায় পদার্থের অণুগুলোর কম্পন কিংবা গতিশক্তি কত তার একটি পরিমাপ অণুগুলোর গতি কিংবা কম্পন যত বেশি হবে, বস্তুটির তাপমাত্রা তত বেশি।
অভ্যন্তরীণ শক্তির ধারণা
কঠিন, তরল এবং গ্যাসের কণার (পরমাণু বা অণু) গতিশক্তি থাকে কারণ সেগুলো গতিশীল ৷ আণবিক বন্ধন কণাগুলোকে টেনে ধরে রাখার চেষ্টা করে বলে তাদের বিভবশক্তিও রয়েছে। গ্যাসের কণাগুলো প্রায় মুক্ত অবস্থায় থাকে বলে তাদের গতিশক্তি সবচেয়ে বেশি। একটি পদার্থের সমস্ত কণার মোট গতিশক্তি এবং বিভবশক্তিকে এর অভ্যন্তরীণ শক্তি বলে। একটি বস্তুর তাপমাত্রা যত বেশি হয়, তার কণাগুলোও তত বেশি গতিশীল হয় বলে অভ্যন্তরীণ শক্তিও তত বেশি হয়।
সাধারণভাবে আমাদের মনে হতে পারে শক্তির প্রবাহ হয় বেশি শক্তি থেকে কম শক্তিতে একটু আগে তোমাদের বলা হয়েছে একটি উত্তপ্ত আলপিনে যেটুকু তাপশক্তি আছে তার থেকে অনেক বেশি তাপ শক্তি রয়েছে এক বালতি পানিতে। আমরা যদি উত্তপ্ত আলপিনটা পানিতে ডুবিয়ে দেই তাহলে কিন্তু আলপিনের অল্প তাপশক্তির খানিকটাই চলে যাবে বালতির পানিতে। তার কারণ তাপ শক্তির প্রবাহ তাপ শক্তির উপর নির্ভর করে না, এটি নির্ভর করে তাপমাত্রার পার্থক্যের উপর।
যদি একটি উত্তপ্ত বস্তু একটি শীতল বস্তুর সংস্পর্শে আসে, তবে উত্তপ্ত বস্তুটি অভ্যন্তরীণ শক্তি হারিয়ে ঠাণ্ডা হয়ে যায় এবং, একইসঙ্গে শীতল বস্তুটি অভ্যন্তরীণ শক্তি অর্জন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠে। যতক্ষণ পর্যন্ত দুটি বস্তুর তাপমাত্রা সমান না হচ্ছে ততক্ষণ তাপশক্তির প্রবাহ চলতে থাকবে। তাপমাত্রার পার্থক্যের কারণে বস্তুর মাঝে স্থানান্তরযোগ্য এই শক্তিই তাপ শক্তি হিসেবে পরিচিত ।
একটি উত্তপ্ত বস্তুকে শীতল বস্তুর সংস্পর্শে রাখা হলে যখন উত্তপ্ত বস্তু থেকে শীতল বস্তুতে তাপশক্তি স্থানান্তরিত হতে থাকে তখন সেই বস্তুটির কণাগুলো গতিশক্তি হারাতে থাকে । আবার, শীতল বস্তু উত্তপ্ত হওয়ার সময় এটির কণাগুলো গতিশক্তি লাভ করে যখন দুইটি বস্তু একই তাপমাত্রায় পৌঁছায়, তখন প্রতিটি কণার গড় গতিশক্তি সমান হয়ে যায় বলে শক্তির এই স্থানান্তর বন্ধ হয়ে যায়। তাপমাত্রা যত বেশি হবে কণাদের এই গড় গতিশক্তিও তত বেশি হবে।
আজকে ৯ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী বই ২য় অধ্যায় সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হলো। এখানে অধ্যায়টি সহজ ও বিস্তরভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনা শেষে তোমাদের একটি পিডিএফ দেওয়া হয়েছে। তাপমাত্রা ও তাপ অধ্যায়টি নিয়ে আলোচনা শেষে যেসকল সমস্যা রয়েছে ও যেসকল বাড়ির কাজ দেওয়া রয়েছে পিডিএফে তোমরা সেগুলোর সমাধান পেয়ে যাবে।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post