প্রতিবছরের মতো কোর্সটিকায় এবারও ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিটি বইয়ের সমাধান দেওয়া শুরু হয়েছে। কোর্সটিকায় আজকে তোমাদের জন্য ৯ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী বই ১ম অধ্যায় সমাধান শেয়ার করা হবে। ৯ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের এই অধ্যায়ের নাম হচ্ছে বল, চাপ ও শক্তি। আজকে বল, চাপ ও শক্তি অধ্যায়টি তোমাদের কাছে সহজভাবে তুলে ধরা হবে।
এই অধ্যায় আলোচনা শেষে তোমরা পেয়ে যাবে এই অধ্যায়ের সমস্যা সমাধান PDF। এই অধ্যায়ের বাড়ির কাজ ও এই অধ্যায়ে থাকা সমস্যাগুলোর সমাধান পিডিএফে দেওয়া হয়েছে। এখানে, বল, চাপ ও শক্তি অধ্যায়ে থাকা প্রতিটি বিষয় সহজভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ৯ম শ্রেণি বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের সমাধান এভাবে পড়লে বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ বইটি তোমরা সহজে আয়ত্বে আনতে পারবে।
৯ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী বই ১ম অধ্যায় সমাধান
আগের শ্রেণিতে তোমরা গতি-সংক্রান্ত রাশিগুলো সম্পর্কে একটু ধারণা পেয়েছ এবং সময়ের সাপেক্ষে এই রাশিগুলো কীভাবে পরিবর্তন হয় সেটি সহজ কিছু গাণিতিক সমীকরণ দিয়ে প্রকাশও করতে শিখেছ। অর্থাৎ তোমাদেরকে সরণ, বেগ, ত্বরণ এরকম রাশিমালার সংজ্ঞার কথা বলে তাদের মাঝে সম্পর্কের সমীকরণগুলো শেখানো হয়েছে।
কিন্তু সেই গতিটা কোথা থেকে এসেছে তার পেছনের বিজ্ঞানটুকুর একটুখানি আভাস দেওয়া হলেও সেটি ব্যাখ্যা করা হয়নি। এই অধ্যায়ে প্রথমবারের মতো তোমাদেরকে সেই গতি কোথা থেকে আসে এবং বলের সঙ্গে তার সম্পর্ক কী সেটি বলা হবে। তোমরা দেখবে নিউটনের তিনটি যুগান্তকারী সূত্র দিয়ে কীভাবে গ্রহ-উপগ্রহ থেকে শুরু করে, রকেট কিংবা গাড়ি এমনকি ক্রিকেট বল পর্যন্ত সব কিছুর গতি বিশ্লেষণ করা যায়।
নিউটনের প্রথম সুত্র
নিউটনের প্রথম সূত্রটিকে অনেক সময় জড়তার সূত্র বলা হয়। বস্তুর ওপর কোনো বল প্রয়োগ করা না হলে বস্তুটির গতি কেমন হয়, এই সূত্রটি সেই বিষয়টি ব্যাখ্যা করে। সূত্রটি জানার আগে আমাদের স্থিতি জড়তা এবং গতি জড়তা বলতে কী বোঝাই সেটি জানা প্রয়োজন।
স্থিতি ও গতি জড়তা
তোমরা যদি বাসে কিংবা ট্রেনে দাঁড়িয়ে থাক, এবং হঠাৎ বাস কিংবা ট্রেনটি চলতে শুরু করে তখন তোমরা লক্ষ করে থাকবে যে তোমরা পিছন দিকে পড়ে যেতে চাও। বাস কিংবা ট্রেনের মেঝেতে স্পর্শ করে থাকা তোমার শরীরের নিচের অংশ সামনের দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করলেও শরীরের উপরের অংশ তার আগের অবস্থানেই স্থির থাকতে চায়, সেজন্য তোমার শরীরের উপরের অংশ পেছন দিকে হেলে পড়ে, এবং তুমি পড়ে যেতে উদ্যত হও।
একটি গ্লাসের ওপরে এক টুকরো শক্ত কাগজ বা কার্ডবোর্ডের ওপর একটি মুদ্রা রেখে তুমি যদি টান দিয়ে কাগজটি সরিয়ে নাও, দেখবে মুদ্রাটি কাগজের সঙ্গে চলে না এসে গ্লাসের ভেতরেই পড়েছে। অর্থাৎ, কাগজটি সরে গেলেও মুদ্রাটি তার আগের অবস্থানেই থাকার চেষ্টা করেছে। এই যে, স্থির থাকা একটি বস্তু স্থির হয়েই থাকতে চায়, এই ঘটনাকে ‘স্থিতি জড়তা’ (Static Inertia) বলে।
তোমরা নিশ্চয় খেয়াল করেছ যে, চলন্ত গাড়ি হঠাৎ ব্রেক করে থামিয়ে দেয়া হলে আমাদের দিকে হেলে পড়তে চায়। ব্রেক করার কারণে শরীরের নিচের অংশ গাড়ির সঙ্গে থেমে গেছে কিন্তু আমাদের শরীরের উপরে গেছে, এজন্য সেটি সামনে হেলে পড়ে। তোমরা কি কখনও কাউকে চলন্ত বাস বা ট্রেন থেকে নামতে দেখেছ?
যারা এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ তারা মাটিতে পা দিয়ে কিন্তু থেমে যায় না খানিকটা দূরত্ব দৌড়ে যায়, তারা জানে মাটিতে নেমে গেলে তাদের পা থেমে যাবে কিন্তু শরীরের বাকি অংশ তখনও গতিশীল রয়ে যাবে, তাই শরীরের নিচের অংশ সমান বেগে ছুটিয়ে না নিলে সে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাবে । এই যে, গতিশীল একটি বস্তু আগের মতো গতি বজায় রাখতে চায়– এই ঘটনাকে “গতি জড়তা’’ (Dynamic Inertia) বলে ।
নিউটনের প্রথম সূত্র: সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা
স্থিতি জড়তা ও গতি জড়তাকে একত্রে বলা হয় জড়তা অর্থাৎ স্থির বস্তুর স্থির থাকার এবং গতিশীল বস্তুর গতিশীল থাকার যে প্রবণতা, সেটিই হচ্ছে জড়তা। নিউটন তার গতির প্রথম সূত্রে এই জড়তার বিষয়টি বলেছেন।
» নিউটনের প্রথম সূত্র : বাইরে থেকে বল প্রয়োগ করা না হলে, স্থির বস্তু স্থিরই থাকবে, এবং সরল রেখায় সমবেগে চলমান বস্তু সরল রেখায় সমবেগে চলতে থাকবে।
এই সূত্রটির প্রথম অংশটুকু নিয়ে আমাদের সমস্যা নেই, দৈনন্দিন জীবনে এটি আমরা সব-সময়ই দেখে থাকি যে স্থির একটি বস্তুকে ধাক্কা না দিলে সেটি স্থির থাকে, নিজ থেকে নড়াচড়া করে না। তবে দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা থেকে পরের অংশটুকু বুঝতে আমাদের একটু সমস্যা হতে পারে, কারণ গতিশীল কোনো বস্তুকেই আমরা অনন্তকাল চলতে দেখি না।
এই সমস্যার উত্তর কিন্তু নিউটনের প্রথম সূত্রের শুরুতেই দেয়া আছে, এখানে ‘বাইরে থেকে বল প্রয়োগ’ করার কথা বলা হয়েছে। তুমি যখনই কোনো একটা বস্তুকে গতিশীল করবে, তখন ঘর্ষণ কিংবা বাতাসের বাধা ইত্যাদি বল গতির উল্টোদিকে কাজ করে গতিটিকে কমিয়ে দেবে মহাশূন্যে বাতাস নেই বলে বাতাসের ঘর্ষণ নেই, তাই সেখানে যদি কোনো বস্তুকে ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া যেত, তাহলে সেটি অনন্তকাল ধরে একই বেগে চলতে থাকত।
নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র
কোনো বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করা না হলে বস্তুর গতি কেমন হয় সেটি নিউটনের প্রথম সূত্রে বলা হয়েছে। তোমরা দেখবে বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করা হলে বস্তুর গতি কেমন হয় সেটি নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রে ব্যাখ্যা করা হবে। আগের শ্রেণিতে তোমরা জেনেছ যে বেগের পরিবর্তন করতে হলে সেখানে বল প্রয়োগ করতে হয়, নিউটনের প্রথম সূত্র সেই বিষয়টি আবার নিশ্চিত করেছে। প্রথম সূত্রে কিন্তু বলের বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞা কী কিংবা কীভাবে বল পরিমাপ করতে হয় সে সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি, বল পরিমাপের পদ্ধতি পাওয়া যায় নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র থেকে।
নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রটি জানার আগে তোমাদের নতুন একটি রাশির সঙ্গে পরিচিত হতে হবে, সেটি হচ্ছে ভরবেগ।
ভরবেগের ধারণা
যদি কেউ বাইসাইকেলে করে 1 ms⁻¹ বেগে তোমার দিকে আসে তাহলে তুমি ইচ্ছে করলেই তার সাইকেলের হ্যান্ডেলে হাত রেখে সেটাকে থামিয়ে দিতে পারবে। কিন্তু কেউ যদি 1 ms⁻¹ বেগে একটা গাড়ি চালিয়ে নিয়ে আসে তুমি কিন্তু তাহলে হাত দিয়ে ধরে গাড়িটা থামাতে পারবে না, যদিও সাইকেল আর গাড়ি দুটোই কিন্তু ঠিক একই বেগে গতিশীল ছিল। দুটোর পার্থক্যটা আসলে ভরের, সাইকেল যেমন- কম ভরের বা হালকা একটি বস্তু, গাড়ি মোটেই তা নয়, সেটি অনেক বেশি ভরের একটি বস্তু। অর্থাৎ বল প্রয়োগ করে গতি পরিবর্তন করার বেলায় বেগের পাশাপাশি এখানে ভর কম বা বেশি হওয়ার একটি ব্যাপার আছে।
যদি কেউ একটি ছোটো পাথর 1 ms⁻¹ বেগে তোমার দিকে ছুঁড়ে দেয় তুমি খুব সহজেই সেই পাথরটা ধরে ফেলতে পারবে। এবারে সে যদি একটা গুলতি দিয়ে সেই একই পাথর তোমার দিকে 100 ms⁻¹ বেগে ছুড়ে দেয়, তুমি নিশ্চয়ই সেটি ধরার সাহস করবে না। যদিও দুটো একই পাথর, অর্থাৎ তাদের একই ভর, কিন্তু দুই ক্ষেত্রে পাথরটি একই বেগে গতিশীল নয়। বোঝাই যাচ্ছে, পার্থক্যটা এক্ষেত্রে বেগের অর্থাৎ, বল প্রয়োগ করে গতি পরিবর্তন করার বেলায় ভরের পাশাপাশি এখানে বেগ কম বা বেশি হওয়ার একটি ব্যাপারও আছে।
এই দুটি উদাহরণ থেকে তোমরা বুঝতে পারছ যে, বল প্রয়োগ করে বস্তুর গতি পরিবর্তন, বস্তুর ভর এবং বস্তুর বেগ দুটোর উপরেই নির্ভরশীল সে কারণে ভর এবং বেগের সমন্বয়ে একটি নতুন রাশির প্রয়োজন হয়, তার নাম ভরবেগ ৷ এটি আসলে ভর এবং বেগের গুণফল। তোমাদের ধারণা হতে পারে, যেহেতু ভর এবং বেগ নামে দুটি রাশি রয়েছে, তাই তাদের গুণফল দিয়ে আরেকটি নতুন রাশি সৃষ্টি করার কোনো প্রয়োজন ছিল না।
আমাদের দৈনন্দিন পরিচিত জীবনের জন্য তোমাদের ধারণা সত্যি, কিন্তু তোমরা জেনে অবাক হবে, যখন কোনো বস্তুর বেগ আলোর বেগের কাছাকাছি পৌঁছে যায় তখন ভরবেগ আর শুধু ভর এবং বেগের গুণফল নয়। শুধু তাই নয় আলোর কণার (ফোটন) ভর শূন্য কিন্তু তার ভরবেগ শূন্য নয়। উপরের ক্লাসে গিয়ে তোমরা সেটি আরও বিস্তারিতভাবে জানবে। আপাতত আমরা ভরবেগ বলতে ভর ও বেগের গুণফলই বোঝাব।
নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র: সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা
নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র পদার্থবিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূত্রগুলোর একটি । এই সহজ সরল সূত্রটি দিয়ে আমাদের পরিচিত জগতের গতি সংক্রান্ত প্রায় সব কাজই করে ফেলা যায়। বাচ্চাদের মার্বেল খেলা থেকে শুরু করে মহাকাশগামী রকেট দুটিই এই সূত্রটি দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। তোমরা ইতোমধ্যে পরমাণুর কত ক্ষুদ্র জেনেছ, আবার আলোর বেগ কত বেশি সেটিও জেনেছ, এই দুটি ক্ষেত্রে_অর্থাৎ পরমাণুর আকারের সঙ্গে তুলনীয় মাত্রার অতি ক্ষুদ্র দৈর্ঘ্য কিংবা আলোর বেগের সঙ্গে তুলনীয় মাত্রার অতি বৃহৎ গতির ক্ষেত্রে নিউটনের সূত্র কার্যকর হয় না।
প্রথম ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় কোয়ান্টাম তত্ত্বের, আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় আপেক্ষিক তত্ত্বের, পরের একটি অধ্যায়ে তোমরা এই দুটি বিষয় সম্পর্কেই জানতে পারবে। দৈনন্দিন জীবনে আমরা যেহেতু এর কাছাকাছি মাত্রাতেও যাই না, তাই এদের প্রয়োজনটুকুও আমরা আলাদাভাবে অনুভব করতে পারি না। আমাদের চারপাশের দৃশ্যমান জগতের প্রায় সব কাজ-কর্মে নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র একেবারে নিখুঁতভাবে ব্যবহার করা যায়।
মৌলিক বলের ধারণা
তোমাদের ধারণা হতে পারে পৃথিবীতে অনেক ধরনের বল রয়েছে। একটি রেল-ইঞ্জিন যখন যাত্রীবোঝাই রেলগাড়ি টেনে নিয়ে যায় সেটি একটা বল, ঝড়ে যখন ঘরবাড়ি উড়ে যায় সেটি একটা বল, চুম্বকের আকর্ষণ বা বিকর্ষণ একটি বল, ক্রিকেটারেরা যখন ছক্কা মারেন তখন ব্যাট দিয়ে ক্রিকেট বলে যেটা প্রয়োগ করেন সেটি একটি বল, ক্রেন যখন কোনো ভারী মালামাল টেনে তুলে সেটিও একটি বল–তুমি আসলে বলে শেষ করতে পারবে না।
তোমার চারপাশে এত বিভিন্ন রূপের বল দেখা গেলেও বিজ্ঞানের চমকপ্রদ ব্যাপারটি হলো, প্রকৃতিতে আসলে মাত্র চার রকমের বল রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে : মহাকর্ষ বল, তড়িৎ চৌম্বক বা বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বল, দুর্বল নিউক্লিয় বল ও সবল নিউক্লিয় বল। আশপাশের বলগুলোকে বিশ্লেষণ করা হলে দেখা যাবে ঘুরে-ফিরে এই চার রকমের বাইরে কোনোটা নয়। এদের বলা হয় মৌলিক বল। তার মাঝে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা শুধু মহাকর্ষ বল আর বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বল অনুভব করি, অন্য দুটি প্রকৃতিতে থাকলেও সহজে আমাদের চোখে পড়ে না।
আজকে ৯ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী বই ১ম অধ্যায় সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হলো। এখানে অধ্যায়টি সহজ ও বিস্তরভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনা শেষে তোমাদের একটি পিডিএফ দেওয়া হয়েছে। বল, চাপ ও শক্তি অধ্যায়টি নিয়ে আলোচনা শেষে যেসকল সমস্যা রয়েছে ও যেসকল বাড়ির কাজ দেওয়া রয়েছে পিডিএফে তোমরা সেগুলোর সমাধান পেয়ে যাবে।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post