হিসাববিজ্ঞান ২য় অধ্যায় : মানুষ সুপ্রাচীনকাল থেকেই দৈনন্দিন জীবনে হিসাবব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে আসছে। আদিকালে প্রত্যেকে তার প্রাত্যহিক জীবনের প্রয়োজনগুলো মেটানোর জন্য নিজেদের মধ্যে পণ্য বিনিময় করত। যে ঘটনাগুলো কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন করে কেবল এ ঘটনাগুলো থেকেই লেনদেনের জন্ম হয়।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে সকল ঘটনাই লেনদেন হবে না। ব্যবসায়ের প্রকৃত আর্থিক চিত্র পাওয়ার জন্য শুধু অর্থ সম্পর্কিত ঘটনাগুলোই ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের লেনদেন হিসেবে চিহিত করা হয়। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে হিসাব লিপিবদ্ধকরণের ক্ষেত্রে লেনদেন শব্দটির অর্থ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হিসাববিজ্ঞান ২য় অধ্যায়
ব্যবসায় জগতে বিভিন্ন ধরনের ঘটনা উদ্ভব হলেও অর্থের অঙ্কে পরিমাপযোগ্য ঘটনা যা ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন করে সেই সমস্ত ঘটনাকেই লেনদেন হিসাবে হিসাবের বইতে লিপিবদ্ধ করা হয়। লেনদেন শব্দটির আভিধানিক অর্থ হলো গ্রহণ ও প্রদান অর্থাৎ দেয়া ও নেয়া ইংরেজিতে যাকে বলা হয় Give and Take।
সংঘটিত প্রতিটি ঘটনায় একাধিক পক্ষ জড়িত থাকে। এক পক্ষ সুবিধা গ্রহণ এবং অন্যপক্ষ সুবিধা প্রদান করে। সুতরাং বলা যায়, কোনো দ্রব্য সামগ্রী ও সেবাকর্মের বিনিময়ের ফলে কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হলে লেনদেনের সৃষ্টি হয়।
লেনদেনের প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য
- লেনদেন হতে হলে ঘটনাকে অবশ্যই অর্থের অঙ্কে পরিমাপযোগ্য হতে হবে।
- কোনো ঘটনা তখনই লেনদেন হিসেবে গণ্য হবে যখন তার দ্বারা ব্যবসায় বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন সাধিত হবে।
- প্রতিটি লেনদেনে দুটি পক্ষ থাকতে হবে। একপক্ষ সুবিধা গ্রহণ করবে এবং অন্যপক্ষ সুবিধা প্রদান করবে।
প্রতিটি লেনদেন স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থাৎ একটি আরেকটি হতে সম্পূর্ণ আলাদা হবে। - দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান উভয় ধরনের লেনদেন হতে পারে।
- ভবিষ্যতে ঘটতে পারে এমন ঘটনা ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন সাধন করলে অবশ্যই তা লেনদেন বলে গণ্য হবে। যেমন : অনাদায়ী পাওনা সঞ্চতি, বাট্টা সঞ্চিতি ইত্যাদি।
- প্রতিটি লেনদেনই হিসাব সমীকরণে প্রভাব বিস্তার করে। হিসাব সমীকরণ হলো : সম্পদ = দায় + মালিকানা স্বত্ব।
হিসাব সমীকরণ
কোনো প্রতিষ্ঠানের একটি নির্দিষ্ট সময়ের মোট সম্পদের পরিমাণ, মালিকানা স্বত্ব ও বহির্দায়ের সমান হবে। যে সমীকরণের মাধ্যমে এই সমতা প্রমাণ করা হয় তাকেই হিসাব সমীকরণ বলা হয়।
সম্পদ : সম্পদ বলতে বোঝায় অর্থনৈতিক পরিসম্পদ যা কোনো ব্যবসায়ের মালিকানাধীন থাকে এবং যা মুনাফা অর্জনের কাজে ব্যবহৃত হয়।
দায় : দায় হচ্ছে ব্যবসায়ের আর্থিক দায়বদ্ধতা যা ব্যবসায়ের একটি নির্দিষ্ট সময় পরে অবশ্যই পরিশোধ করতে হয়। অর্থাৎ ব্যবসায়ের মোট সম্পদের উপর তৃতীয় পক্ষের দাবিই হচ্ছে দায়।
মালিকানা স্বত্ব : মোট সম্পদের উপর মালিকের যে দাবি তাই হচ্ছে মালিকানা স্বত্ব। মালিকানা স্বত্বকে চারটি উপাদান অর্থাৎ মালিকের বিনিয়োগ, রেভিনিউ বা আয়, উত্তোলন এবং ব্যয় বা খরচ প্রভাবিত করে।
হিসাব সমীকরণে ব্যবসায়িক লেনদেনের প্রভাব
কোনো ঘটনা লেনদেন হলে তা হিসাব সমীকরণের উপাদানগুলোকে পাঁচভাবে প্রভাবিত করে থাকে। যথা :
১. মোট সম্পদ বাড়লে মোট দায় অথবা মালিকানা স্বত্ব বাড়বে।
২. মোট সম্পদ কমলে মোট দায় অথবা মালিকানা স্বত্ব কমবে।
৩. একটি সম্পদ বাড়লে অপর একটি সম্পদ কমবে।
৪. মালিকানা স্বত্ব বাড়লে মোট দায় কমবে।
৫. মালিকানা স্বত্ব কমলে মোট দায় বাড়বে।
ব্যবসায়িক লেনদেনের উৎস এবং তদ্সংক্রান্ত দলিলপত্রাদি
প্রতিটি লেনদেনের সমর্থনে এক বা একাধিক প্রমাণপত্র থাকে। লেনদেনের সত্যতা নিশ্চিত করতে এ সকল প্রমাণপত্র ব্যবহার করা হয়।
চালান : চালান হচ্ছে পণ্য ক্রয় এবং বিক্রয়ের একটি প্রামাণ্য দলিল। পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বিক্রেতা চালান যথাযথভাবে প্রস্তুত করে তার এক কপি
ক্রেতাকে মালের সাথে প্রেরণ করে। চালানে ক্রেতার নাম ও ঠিকানা, মালের পরিমাণ, মালের বিবরণ, মালের মূল্য এবং মূল্য পরিশোধের শর্ত ইত্যাদি লিপিবদ্ধ থাকে। এই চালানের উপর ভিত্তি করে ক্রয় জাবেদা ও বিক্রয় জাবেদা লেখা হয়।
ভাউচার : আয় ও ব্যয় সংক্রান্ত লেনদেনের হিসাব লিপিবদ্ধ করার জন্য যে প্রমাণপত্র ব্যবহৃত হয় তাকে ভাউচার বলে। ভাউচার দুই প্রকার। ক. ডেবিট ভাউচার ও খ. ক্রেডিট ভাউচার।
ক. ডেবিট ভাউচার : পণ্য ক্রয় ও বিভিন্ন খরচ লিপিবদ্ধের জন্য যে ভাউচার ব্যবহার করা হয় তাকে ডেবিট ভাউচার বলে।
খ. ক্রেডিট ভাউচার : পণ্য বিক্রয় ও বিভিন্ন আয় লিপিবদ্ধের জন্য যে ভাউচার ব্যবহার করা হয় তাকে ক্রেডিট ভাউচার বলে।
ক্যাশমেমো : নগদ মূল্যে পণ্য ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্যাশমেমো ব্যবহার করা হয়। তিন প্রস্থে ক্যাশমেমো তৈরি করা হয়। প্রথম প্রস্থ ক্রেতাকে দেয়া হয়, দ্বিতীয় প্রস্থ বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের হিসাব বিভাগে, তৃতীয় প্রস্থ বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় বিভাগে সংরক্ষিত থাকে।
ডেবিট নোট : ধারে ক্রয়কৃত পণ্য কোনো কারণবশত বিক্রেতার নিকট ফেরত পাঠানো হলে উক্ত ফেরত পণ্যের বিবরণ, মূল্য এবং ফেরত পাঠানোর কারণ উল্লেখ করে ক্রেতা বিক্রেতার নিকট যে চিঠি পাঠায় তাকে ডেবিট নোট বলে।
ক্রেডিট নোট : ধারে বিক্রয়কৃত পণ্য কোনো কারণবশত ক্রেতার নিকট ফেরত আসলে উক্ত ফেরত পণ্যের পূর্ণ বিবরণ, মূল্য এবং ফেরত পাঠানোর কারণ উল্লেখ করে বিক্রেতা ক্রেতার নিকট যে চিঠি পাঠায় তাকে ক্রেডিট নোট বলে। অর্থাৎ ধারে বিক্রয়কৃত পণ্য ফেরত আসলে ক্রেডিট নোট প্রস্তুত করা হয়।
►► আরো দেখো: হিসাববিজ্ঞান বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর
উপরে দেয়া ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে ৯ম ও ১০ম শ্রেণির হিসাববিজ্ঞান ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ডাউনলোড করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post