ইসলামের ইতিহাস ২য় পত্র ১ম অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন : মুহাম্মদ বিন কাসিমের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ ছিল খলিফা সুলায়মানের ব্যক্তিগত আক্রোশ। মুহাম্মদ বিন কাসিমের মৃত্যুর পিছনে রাজা দাহিরের কন্যা সূর্যদেবী ও পরিমল দেবীর মিথ্যা অভিযোগকে দায়ী করা হয়। তবে এ ঘটনার ঐতিহাসিক কোনো ভিত্তি নেই।
প্রকৃতপক্ষে হাজ্জাজ বিন ইউসুফের প্রতি খলিফা সুলায়মানের ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণেই তার ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা মুহাম্মদ বিন কাসিমকে প্রাণ দিতে হয়েছিল। খলিফার নির্দেশেই তাকে রাজধানী দামেস্কে এনে কারারুদ্ধ করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
ইসলামের ইতিহাস ২য় পত্র ১ম অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
১. আরবদের সিন্ধু বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতের সামাজিক অবস্থার বিবরণ দাও।
উত্তর : নানা রকম ঘৃণ্যপ্রথা ও কুসংস্কার বিদ্যমান থাকায় আরবদের সিন্ধু বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতের সামাজিক অবস্থা সন্তোষজনক ছিল না। আরবদের সিন্ধু বিজয়ের পূর্বে ভারতে হিন্দুধর্মের প্রবল প্রাধান্য ছিল। হিন্দুদের মধ্যে সংকীর্ণ জাতিভেদ প্রথা প্রচলিত ছিল। এ সময় হিন্দু সমাজ চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। যথা- ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শুদ্র। ব্রাহ্মণরা ছিল সর্বোচ্চ পর্যায়ে। আর শূদ্ররা ছিল সর্বনিম্ন পর্যায়ে।
এ জাতিভেদ প্রথা সমাজে শ্রেণিবৈষম্যের সৃষ্টি করে। এ কারণে সমাজে নিম্নবর্ণের হিন্দুরা নানাভাবে অবহেলিত হতো। তাছাড়া সে সময় বহুবিবাহ, সতীদাহ প্রথা, নরবলি, গঙ্গায় শিশু-সন্তান বিসর্জন প্রভৃতি কু-প্রথা প্রচলিত ছিল। এমনকি দাস-দাসী ক্রয়-বিক্রয়ও চলত। সব মিলিয়ে তৎকালীন সামাজিক অবস্থা বিশৃঙ্খল ও শোচনীয় ছিল।
২. তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ ভারতে মুসলিম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ ছিল একটি চূড়ান্ত মীমাংসাত্মক যুদ্ধ। এ যুদ্ধের ফলে স্থায়ীভাবে ভারতবর্ষে মুসলিম আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এ যুদ্ধে মুইজউদ্দিন মুহাম্মদ ঘুরী (ভারতে স্থায়ী মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠাকারী) ও তার বাহিনী দীপ্ত শপথে যুদ্ধ করে এবং পৃথ্বিরাজ (দিল্লি ও আজমিরর রাজপুত এবং চৌহান বংশের রাজা) ও সম্মিলিত রাজপুত্র বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে। ফলে ভারতীয় রাজ্যগুলোর ওপর মুহাম্মদ ঘুরীর চূড়ান্ত সফলতা সুনিশ্চিত হয় এবং ভারতে মুসলিম সাম্রাজ্যের ভিত প্রতিষ্ঠিত হয়।
৩. বর্ণপ্রথা কী? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : হিন্দুদের বর্ণভেদ প্রথা বলতে তাদের মধ্যে প্রচলিত বিভিন্ন শ্রেণিকে বোঝায়। অষ্টম শতাব্দীর প্রারম্ভে হিন্দু সমাজ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্র এই চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এদের মধ্যে ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের ধর্মকর্ম, যাগযজ্ঞ এবং অন্যান্য সকল কাজে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। তারাই আইন-কানুন প্রণয়ন করত এবং শাসনদ-ও ছিল তাদের হাতে।
সমাজে বৈশ্য ও শূদ্ররা ছিল অধঃপতিত ও অসহায়। বেদবাক্য শুনলে কিংবা বেদ গীতা পাঠ করলে তাদেরকে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হতো। আর এই চার শ্রেণির বাইরের লোকদের অপবিত্র মনে করা হতো। হিন্দু সমাজের এ বিচন্তিই বর্ণভেদ প্রথা নামে পরিচিত।
৪. সিন্ধুতে আরবদের সাফল্য সম্পর্কে কী জান?
উত্তর : আরবদের সিন্ধু অভিযান মুসলিম ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ও চমকপ্রদ ঘটনা। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ৭১১ খ্রিস্টাব্দে স্বীয় ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা মুহাম্মদ বিন কাসিমের নেতৃত্বে সিন্ধুতে অভিযান প্রেরণ করেন। ৭১২ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ বিন কাসিম রাজা দাহিরকে পরাজিত করে সিন্ধুতে নিজ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। আরবদের এ সাফল্য রাজনৈতিকভাবে ফলাফল শূন্য হলেও সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক দিক থেকে ফলপ্রসু ছিল।
৫. সুলতান মাহমুদের অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য সম্পর্কে কী জান?
উত্তর : সুলতান মাহমুদের ভারত আক্রমণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারতের বিপল ধন-ঐশ্বর্য সংগ্রহ করা। গজনির শাসনব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা এবং এটিকে সমৃদ্ধিশালী ও আকর্ষণীয় নগরীতে পরিণত করা সুলতান মাহমুদের উদ্দেশ্য ছিল।
এছাড়া একটি বিশাল সেনাবাহিনী পোষণের মানসে তার অনেক অর্থের দরকার পড়েছিল। ফলে ভারতীয় উপমহাদেশকে তিনি তার প্রয়োজনীয় অর্থভা-ার মনে করে সেখানে ১৭ বার অভিযান পরিচালনা করেন। আর ভারত হতে সংগৃহীত অর্থ তিনি স্বীয় রাজধানী গজনির উন্নতিকল্পে ব্যয় করেন।
৬. মুহাম্মদ বিন কাসিমের মৃত্যুর কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : মুহাম্মদ বিন কাসিমের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ ছিল খলিফা সুলায়মানের ব্যক্তিগত আক্রোশ। মুহাম্মদ বিন কাসিমের মৃত্যুর পিছনে রাজা দাহিরের কন্যা সূর্যদেবী ও পরিমল দেবীর মিথ্যা অভিযোগকে দায়ী করা হয়। তবে এ ঘটনার ঐতিহাসিক কোনো ভিত্তি নেই। প্রকৃতপক্ষে হাজ্জাজ বিন ইউসুফের প্রতি খলিফা সুলায়মানের ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণেই তার ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা মুহাম্মদ বিন কাসিমকে প্রাণ দিতে হয়েছিল। খলিফার নির্দেশেই তাকে রাজধানী দামেস্কে এনে কারারুদ্ধ করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
৭. ভারতবর্ষকে মৃতত্ত্বের জাদুঘর’ বলা হয় কেন?
উত্তর : ভারতীয় উপমহাদেশে অসংখ্য জাতি, গোষ্ঠী ও নানা ধর্মের মানুষের বসবাস লক্ষ করে ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ (Vincent Smith) এই উপমহাদেশকে ‘নৃতত্ত্বের জাদুঘর’ বলে অভিহিত করেছেন। আর্যদের আগমন থেকে শুরু করে আধুনিককালে ইউরোপীয়দের আগমন পর্যন্ত বহু জাতি ভারতে প্রবেশ করেছে।
প্রাচীন যুগে আর্য, দ্রাবিড়, পারসিক, গ্রিক, শান্ত, কুষাণ, হুন; মধ্যযুগে আরব, তুর্কি, আফগান, মুঘল এবং আধুনিক যুগে পর্তুগিজ, ইংরেজ, ফরাসি প্রভৃতি ইউরোপীয় বণিকদের আগমনের ফলে ভারতবর্ষ বহু জাতিগোষ্ঠীর মহাজনসমাবেশে পরিণত হয়েছে। আর এ কারণে ভিনসেন্ট স্মিথ একে নৃতত্ত্বের জাদুঘর বলে অভিহিত করেছেন।
৮. কুতুবউদ্দিন আইবককে দ্বিতীয় হাতেম তাই বলা হয় কেন?
উত্তর : অসীম উদারতা ও দানশীলতার জন্য কুতুবউদ্দিন আইবেককে দ্বিতীয় হাতেম তাই বলা হত। কুতুবউদ্দিন আইবেক ছিলেন একজন মহানুভব সুলতান। তার বদান্যতা কিংবদন্তির পর্যায়ভুক্ত ছিল। প্রতিদিন তিনি লাখ লাখ টাকা দান করতেন বলে তাকে ‘পাখবকস’ বা লক্ষ টাকা দানকারী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। বদান্যতায় তিনি ছিলেন দ্বিতীয় হাতেম তাই।
৯. ভারতবর্ষকে ‘Wealth of India’ বলা হয় কেন।
উত্তর : প্রাকৃতিক ধনসম্পদে পরিপূর্ণ থাকায় ভারতবর্ষকে ‘Wealth of India’ বলা হয়। প্রাচীনকাল থেকেই বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ ও ঐশ্বর্যের জন্য ভারতবর্ষ বিখ্যাত ছিল। এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পেরও ব্যাপক খ্যাতি ছিল। খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীর মধ্যভাগে ভারত ভ্রমণকারী চীনা পর্যটক ফা-হিয়েন ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বিবরণ দিয়েছেন। অর্থাৎ বিপুল ঐশ্বর্যের জন্য ভারত বর্ষকে Wealth of India বলা হয়।
১০. সুলতান মাহমুদ মন্দির আক্রমণ করেছেন কেন?
উত্তর : সুলতান মাহমুদ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে সোমনাথ মন্দির আক্রমণ করেছেন বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন। ভারতের গুজরাটের কাথিওয়াড়ে অবস্থিত সোমনাথ মন্দির ছিল ধনৈশ্বর্যে পরিপূর্ণ। মুসলিম ঐতিহাসিকদের বিবরণ মতে, মন্দিরের পুরোহিতদের ধারণা ছিল এ মন্দির বিজয় মাহমুদের সাধ্যের বাইরে।
সুলতান মাহমুদ তাই ১২২৬ সালে এই মন্দিরে অভিযান চালিয়ে সফল হন। অন্যান্য মন্দির আক্রমণের পিছনেও অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণ ছিল প্রধান।
আরো দেখো: ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
উপরে দেয়া Answer Sheet বাটনে ক্লিক করে ইসলামের ইতিহাস ২য় পত্র ১ম অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর ডাউনলোড করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post