৬ষ্ঠ শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি ১ম অধ্যায় : আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হই, যার অনেক কিছুই উপযুক্ত তথ্যের মাধ্যমে আমরা সমাধান করতে পারি। ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়ের শুরুতেই আমরা আমাদের আশেপাশের কিছু সমস্যা খুঁজে বের করার চেষ্টা করবো এবং সে সমস্যাগুলো কীভাবে উপযুক্ত তথ্যের মাধ্যমে সমাধান করা যায় সেটিও অনুসন্ধান করে অন্যদের সচেতন করবো!
৬ষ্ঠ শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি ১ম অধ্যায়
গত এক সপ্তাহে তুমি কী কী সমস্যার সম্মুখীন হয়েছ তা তোমার পাশের বন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করো এবং সবাই মিলে ১০টি সমস্যা চিহ্নিত করো। আমরা বলছিলাম তথ্যের মাধ্যমে আমরা আমাদের সমস্যাগুলো সমাধান করব। তাহলে প্রথমে আমরা তথ্য কী, তথ্যের উৎস কী এবং তথ্য অনুসন্ধানের বিভিন্ন উপায় নিয়ে আলোচনা করব।
তথ্য যাচাই এর ক্ষেত্রে কোনো মানবীয় উৎস থেকে তথ্য নিলে তার গোপনীয়তার ব্যপারে লক্ষ্য রাখতে হবে। তথ্য যাচাই এর পর দেয়ালিকা, পোস্টার, পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা ইত্যাদির মাধ্যমে উপস্থাপন করা যাবে।
প্রথম সেশন (মূল বই: পৃষ্ঠা ১)
তোমার সুবিধার জন্য নিচে একটি সারণি বানিয়ে দেওয়া হলো যেটিতে তুমি একজনের তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। (মূলবই পৃষ্ঠা- ০১)
ফর্ম-এর নাম:
প্রথম শ্রেণি সেশনের প্রথম জরিপ
তোমার জন্ম মাস কী?
ফেব্রুয়ারি
তোমার বাড়িতে কয়টি পোষা প্রাণী আছে?
২টি/১টি
তোমার প্রিয় খেলোয়াড় কে?
সাকিব আল হাসান/ লিওনেল মেসি
চলো এবার তাহলে আমরা কিছু অনুশীলন করি। আগে উদাহরণটি দিয়ে বলি। (মূলবই পৃষ্ঠা- ০২)
তোমার সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তুমি আগামীকাল বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য ব্যাগে কী কী নেবে।
তোমার যে তথ্যের প্রয়োজন, তা হলো- কাল কী কী সেশন হবে।
তোমার উৎস হলো- তোমার ক্লাস / সেশন রুটিন।
এবার আমরা নিজেরা কিছু সমস্যা চিহ্নিত করি, যেগুলো সমাধানের জন্য আমাদের তথ্যের প্রয়োজন এবং সেগুলোর জন্য উপযুক্ত উৎস কী হতে পারে তা লিখি।
সিদ্ধান্ত/সমস্যা
১. উদাহরণ- ১ : আগামীকালের সেশনের জন্য ব্যাগে কী কী শিক্ষা উপকরণ নেব?
২. উদাহরণ- ২ : আমার বিদ্যালয়ে যাওয়ার তিনটি রাস্তার মধ্যে আজ কোন রাস্তা দিয়ে বিদ্যালয়ে যাব?
৩. উদাহরণ-৩ : শীতের শেষে একটি বনভোজনের আয়োজন চলছে, এই সময় টেলিভিশনের সংবাদে দেখা গেল দেশের কয়েকটি জেলায় বৃষ্টি হচ্ছে, এখন বনভোজনের তারিখ কী পেছানো উচিত?
৪. উদাহরণ-৪ : পহেলা বৈশাখের সময় বেড়াতে যাবে?
৫. উদাহরণ-৫ : ডিজিটাল প্রযুক্তি বইটি হারিয়ে গেলে কী করতে হবে?
৬. উদাহরণ-৬: গাড়িতে করে বেড়াতে যাওয়ার সময় রাস্তা হারিয়ে গেলে সঠিক জায়গায় কীভাবে পৌঁছাবে?
যে তথ্য প্রয়োজন
১. কাল কী কী বিষয়ের সেশন হবে?
২. কোন রাস্তা উন্নয়ন কাজ চলার কারণে বন্ধ আছে/কোন রাস্তায় পানি উঠেছে/কোন রাস্তায় বেশি যানজট/কোন রাস্তায় সবচেয়ে কম সময় লাগবে?
৩. বনভোজনের দিন কী বৃষ্টি হতে পারে?
৪. এই বছর পহেলা বৈশাখ কবে হবে?
৫. বইটি কোথায় পাওয়া যাবে?
৬. সঠিক রাস্তা কোনটি?
তথ্যের উৎস
১. আমার সেশন রুটিন।
২. টেলিভিশন/পত্রিকা/গুগল ম্যাপ/ কোনো ব্যক্তি যে ওই রাস্তায় নিয়মিত যাতায়াত করে, তার মতামত।
৩. টেলিভিশন/পত্রিকার আবহাওয়া সংবাদ, গুগল ওয়েদার বা অন্যান্য আবহাওয়া বিষয়ক অ্যাপস/ওয়েবসাইট।
৪. বাংলা পঞ্জিকা।
৫. মার্কেট, NCTB ওয়েবসাইট।
৬. গাড়ির GPS চালু করা, গুগল ম্যাপ।
তথ্যের উৎসকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়-
১. মানবীয় উৎস
২. জড় উৎস
মনে করো তোমার বাসায় একজন এসে জানিয়ে গেলেন কেন টিকা দেওয়া প্রয়োজন। আবার তোমার অভিভাবকের মোবাইল ফোনে কখন কোথায় টিকা দিতে হবে তার তথ্য এল। এখানে তোমার বাসায় আসা ব্যক্তি হলেন মানবীয় উৎস। মোবাইল ফোনটি হলো জড় উৎস।
- মানবীয় উৎস হলো যখন একজন মানুষ সক্রিয়ভাবে তোমাকে তথ্য দিচ্ছে।
- জড় উৎস হলো যখন তোমাকে সক্রিয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে তথ্য পেতে হচ্ছে।
আমরা কি জানি জরিপ করতে বা সংবাদ প্রস্তুত করতে ভিন্নভাবে তথ্যকে বিশ্লেষণ করা হয়? এ ক্ষেত্রে তথ্যের উৎসকে অন্য দুই ভাবে দেখা হয়। সেগুলো হলো-
১. প্রাথমিক উৎস বা মূল উৎস!
২. মাধ্যমিক উৎস বা পরোক্ষ উৎস।
৩. তথ্যের “মানবীয় উৎস” এবং “জড় উৎস” এই নামগুলো দিয়েই আমরা অনুমান করতে পারছি কোনগুলো মানবীয় উৎস আর কোনগুলো জড় উৎস | মানবীয় উৎসগুলো বিভিন্ন রকম হতে পারে। নিচের ছকের মানবীয় উৎসগুলো দেখে নিই আর ভেবে দেখি এই ধরনের উৎস থেকে আমরা কখনো তথ্য নিয়েছিলাম কি না।
দ্বিতীয় সেশন (মূল বই: পৃষ্ঠা ৪)
সবাই মিলে ঘরটি পূর্ণ করি। (মূলবই পৃষ্ঠা- ০৪)
জুয়েল তার বাবার ট্যাবলেটে/ল্যাপটপে ইন্টারনেট ব্যবহার করে খুঁজল তার এলাকায় শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব আছে কিনা, সেখানে সে কম্পিউটার শিখতে পারে। এখন ইন্টারনেট বা যে ওয়েবসাইট থেকে জুয়েল তথ্যটি নিল, তা হয়ে গেল তার প্রয়োজনীয় তথ্যের উৎস। এটি কী ধরনের উৎস?
উত্তর : জড় উৎস।
মিতু তার মাকে জিজ্ঞেস করল, মা বাজারে কী আম পাওয়া যায়? মা উত্তর দিলেন।
মা কী ধরনের উৎস?
উত্তর : মানবীয় উৎস।
আরেকটু ভেবে কী বলা যায়, মা কোন ধরনের উৎস? (টিক চিহ্ন দাও)
অভিজ্ঞ/বিশেষজ্ঞ প্রত্যক্ষদর্শী/ভুক্তভোগী।
মিতু ও তার বন্ধুরা মিলে ঠিক করল বিদ্যালয়ে একটি বাগান করবে, কিন্তু তারা জানে না তাদের এলাকার মাটি ও আবহাওয়ার জন্য কোন গাছ উপযোগী কিংবা সেই গাছের যত্ন কীভাবে নিতে হবে। তাদের বিদ্যালয়ের মালি এসে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করলেন। তাহলে বিদ্যালয়ের মালি কী ধরনের উৎস?
উত্তর : মানবীয় উৎস
আরেকটু ভেবে কী বলা যায়, মালি কী ধরনের উৎস? (টিক চিহ্ন দাও) অভিজ্ঞান/বিশেষজ্ঞ/ প্রত্যক্ষদর্শী/ ভুক্তভোগী।
তুমি বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে করোনা ভাইরাস বিষয়ক একটি পোস্টার দেখতে পেলে। করোনা ভাইরাস সম্পর্কে তোমার মনে কিছু প্রশ্ন ছিল, পোস্টার পড়ে তুমি সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেলে। পোস্টার কী ধরনের উৎস?
দলীয় আলোচনা ও সমস্যা/ বিষয়বস্তু চূড়ান্তকরণ। (মূলবই পৃষ্ঠা- ০৮)
আমরা যে বিষয় বা সমস্যা নিয়ে কাজ করতে চাই, সে বিষয়টি নির্ধারণ করে ফেলার পর আমরা দলের মধ্যে কাজ ভাগ করে নেব, কে কোন অংশটুকুর তথ্য খুঁজে নিয়ে আসব তা ঠিক করে নিব।
এখন আমরা নিজের দলের জন্য নিচের ছকটি পুরণ করি-
দলের নাম শাপলা
যে সমস্যাটি কাজ করার জন্য বাছাই করা হয়েছে: করোনা ভাইরাস নিয়ে কী কী ভ্রান্ত ধারণা আছে এবং করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায়গুলো কী কী?
সমস্যা সম্পর্কিত সম্ভাব্য তথ্যের উৎসের তালিকা: পত্রিকা, টেলিভিশন, ইন্টারনেট, কোনো ব্যক্তি ইত্যাদি।
প্রস্তুতি: প্রস্তুতি হিসেবে দলের মধ্যে কাজ ভাগ করে নিতে হবে। সে অনুযায়ী বাড়ির কাজ হিসেবে প্রত্যেক দল নির্ধারিত বিষয়ে কে, কোন অংশে কী তথ্য খুঁজে পেয়েছে তা খাতায় লিখে রাখি।
আমাদের তথ্য যাচাই হয়ে গেলে নিচের সারণিটি পূরণ করি
যে তথ্য সংগ্রহ করেছিলাম
১। সাধারণ পানি দিয়ে হাত ধুলে জীবাণুমুক্ত হবে।
২। গরম-স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় এ ভাইরাস বাঁচে না।
৩। কেবল মাস্ক পরে হাটলেই বোধহয় করোনা ভাইরাস এর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
যাচাই এর পর যা পেলাম
সাবান পানি দিয়ে হাত ধুলে জীবাণুমুক্ত হবে।
যেকোনো জায়গায় যেকোনো আবহাওয়াতেই কোভিড-১৯ ভাইরাস বিস্তারের ক্ষমতা রাখে।
সঠিক নিয়মে এবং সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করলে করোনা ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
এক্ষেত্রে একজন/দুইজন দায়িত্ব নেব সবার মতামতগুলো বোর্ড, ফ্লিপচার্ট বা একটি কাগজে লিখতে। আলোচনার সুবিধার জন্য কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো- (মূলবই পৃষ্ঠা- ১৩)
অর্জিত অভিজ্ঞতা: উপযুক্ত উৎস কী হতে পারে সেটি বুঝতে অনেক সময় ব্যয় হয়ে গেছে।
পরবর্তীতে কীভাবে কাজে লাগাবো
১। শিক্ষক বা বড় ভাইবোন বা আত্মীয়ের কাছে জিজ্ঞেস করে জেনে নিব উপযুক্ত হতে পারে।
২। এমন বিষয়বস্তু নির্ধারণ করবো যেটি সম্পর্কে যথেষ্ট তথা একাধিক মাধ্যমে আছে, একটিতে না পেলে অন্য আরও মাধ্যমে যেন খুঁজতে পারি।
৩। বন্ধুদের সাথে দলীয়ভাবে আলোচনার মাধ্যমে উপযুক্ত উৎস কী হতে পারে বের করা যেতে পারে।
৪। নির্ভরযোগ্য বা বিশ্বাসযোগ্য উৎস থেকে তথ্যসমূহ সংগ্রহ করা।
অর্জিত অভিজ্ঞতা: ইন্টারনেট থেকে তথ্য খুঁজতে গিয়ে ভুল তথ্য নিয়ে ফেলেছি।
পরবর্তীতে কীভাবে কাজে লাগাবো
১। একটি ওয়েবসাইট থেকে তথ্য নিয়ে আবার আরও কয়েকটি ওয়েবসাইটের সাথে তা মিলিয়ে নিব, যেসব ওয়েবসাইট একই তথ্য নিচ্ছে কিনা।
২। সবার আগে সরকারি ওয়েবসাইট বা যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা দেশ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি সে প্রতিষ্ঠান, বাহি ও দেশের ওয়েবসাইট দেখব।
৩। যে ওয়েবসাইট থেকে তথ্য নিচ্ছি সে ওয়েবসাইটটি ওই নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর তথ্য দেয় কিনা, নাকি এক এক সময় এক রকম তথ্য দেয় এবং কিছু তথ্য একটু বাড়িয়ে, ফুলিয়ে ঝাঁপিয়ে বেশি আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করে। তা যাচাই করবো। সেই ধরনের ওয়েবসাইট থেকে তথ্য নিব না।
৪। তথ্যটি কোনো বইছে আছে কিনা তাও খুঁজে দেখব। যদি পাওয়া যায় সে বইয়ের সাথে ওয়েবসাইটের তথ্যে মিল বা সামজস্যতা খুঁজব।
৫। ওয়েবসাইটে তথ্যটি সর্বশেষ করে প্রকাশিত হয়েছে সেটি দেখে নিব।
প্রথম অধ্যায়ের সবগুলো সেশনের উত্তর সংগ্রহ করে নাও:
১ম সেশন: খুঁজে বের করি একটি দৈনন্দিন সমস্যা
২য় সেশন: সমস্যা পেলাম, এবার খুঁজব সমাধান কোথায় আছে?
৩য় সেশন: দলীয়ভাবে ঠিক করি, আমরা কোন সমস্যাটির সমাধান করতে চাই
ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post