নবম শ্রেণির বিজ্ঞান ৩য় অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর : হৃৎপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণের ফলে হৃৎপিণ্ড থেকে ধমনীর মাধ্যমে রক্ত প্রবাহকালে ধমনীগোত্রে কোন ব্যক্তির সিস্টোলিক রক্তচাপ যদি সব সময় ১৬০ মিলিমিটার পারদস্তম্ভ বা তার বেশি এবং ডায়াস্টোলিক সবসময় ৯৫ মিলিমিটার পারদস্তম্ভ বা তার বেশি থাকে, তবে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলে। একে ডাক্তারি ভাষায় হাইপারটেনশন বলে।
রক্ত তঞ্চনে অণুচক্রিকা বা থ্রম্বোসাইট এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ কারণে অণুচক্রিকার সংখ্যা হ্রাস পেলে কোনো রক্তবাহিকা বা টিস্যু কেটে গেলে রক্ত তঞ্চন ঘটতে বিলম্ব হবে। এতে রক্তক্ষরণ ঘটবে। এছাড়া রক্ত জালিকার প্রাচীরে ছিদ্র সৃষ্টি হলে অণুচক্রিকা মেরামতি ঘটায়।
নবম শ্রেণির বিজ্ঞান ৩য় অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
১. শ্বেত রক্তকণিকা কীভাবে জীবাণু প্রতিহত করে?
উত্তর: দেহে রোগজীবাণু প্রবেশ করলে শ্বেতরক্ত কণিকা ফ্যাগোসাইটোসিস পদ্ধতিতে জীবাণুকে গ্রাস করে ধ্বংস করে। লিম্ফোসাইট শ্বেতকণিকা অ্যান্টিবডি গঠন করে বাইরের জীবাণু দ্বারা আক্রমণকে প্রতিহত করে।
২. হাইপারটেনশন বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: শরীর ও মনের স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তচাপ যদি বয়সের জন্য নির্ধারিত মাত্রার উপরে অবস্থান করতে থাকে, তবে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বলে।
হৃৎপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণের ফলে হৃৎপিণ্ড থেকে ধমনীর মাধ্যমে রক্ত প্রবাহকালে ধমনীগোত্রে কোন ব্যক্তির সিস্টোলিক রক্তচাপ যদি সব সময় ১৬০ মিলিমিটার পারদস্তম্ভ বা তার বেশি এবং ডায়াস্টোলিক সবসময় ৯৫ মিলিমিটার পারদস্তম্ভ বা তার বেশি থাকে, তবে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলে। একে ডাক্তারি ভাষায় হাইপারটেনশন বলে।
৩. মানুষের হৃৎপিণ্ডের গঠন বর্ণনা কর।
উত্তর: মানুষের হৃৎপিণ্ডের প্রশস্ত প্রান্তটি ওপরের দিকে এবং ছুঁচালো প্রান্তটি নিচের দিকে বিন্যস্ত থাকে।
মানুষের হৃৎপিণ্ডটি চারটি প্রকোষ্ঠ নিয়ে গঠিত। ওপরের প্রকোষ্ঠ দুটিকে যথাক্রমে ডান ও বাম অ্যাট্রিয়াম এবং নিচের প্রকোষ্ঠ দুটিকে যথাক্রমে ডান ও বাম ভেন্ট্রিকল বলে। অ্যাট্রিয়াম দুটি আন্তঃঅ্যাট্রিয়াম পর্দা দিয়ে এবং ভেন্ট্রিকল দুটি আন্তঃভেন্ট্রিকল পর্দা দিয়ে পৃথক থাকে। অ্যাট্রিয়ামের প্রাচীর পাতলা। ভেন্ট্রিকলের প্রাচীর পুরু ও পেশিবহুল।
৪. লোহিত কণিকা অধিক পরিমাণ অক্সিজেন পরিবহনে সক্ষম কেন?
উত্তর: লোহিত কণিকায় প্রচুর পরিমাণে হিমোগ্লোবিন আছে বলে তা অধিক পরিমাণ অক্সিজেন পরিবহনে সক্ষম। পরিণত লোহিত কণিকা দ্বি-অবতল ও চাকতি আকৃতির। এগুলো রক্তরসে প্রকৃতপক্ষে হিমোগ্লোবিন ভর্তি ভাসমান ব্যাগ এবং চাপ্টা আকৃতির। হিমোগ্লোবিনের কাজ হচ্ছে অক্সিজেন পরিবহন করা।
৫. রক্তে অণুচক্রিকার সংখ্যা হ্রাস পেলে কী ঘটবে?
উত্তর: অণুচক্রিকার সংখ্যা হ্রাস পেলে রক্ত ক্ষরণ ঘটতে পারে।
রক্ত তঞ্চনে অণুচক্রিকা বা থ্রম্বোসাইট এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ কারণে অণুচক্রিকার সংখ্যা হ্রাস পেলে কোনো রক্তবাহিকা বা টিস্যু কেটে গেলে রক্ত তঞ্চন ঘটতে বিলম্ব হবে। এতে রক্তক্ষরণ ঘটবে। এছাড়া রক্ত জালিকার প্রাচীরে ছিদ্র সৃষ্টি হলে অণুচক্রিকা মেরামতি ঘটায়।
৬. মানুষের লোহিত রক্তকণিকা ও শ্বেত কণিকার পার্থক্য উল্লেখ কর।
উত্তর: নিচে মানুষের লোহিত কণিকা ও শ্বেত কণিকার পার্থক্য উল্লেখ করা হলো:
লোহিত কণিকা:
ক. লোহিত কণিকা দ্বি-অবতল ও চাকতি আকৃতির।
খ. এরা নিউক্লিয়াসবিহীন।
গ. হিমোগ্লোবিন থাকে।
ঘ. প্রধান কাজ-O2 ও CO2 পরিবহন করা।
শ্বেত কণিকা:
ক. শ্বেত কণিকার নির্দিষ্ট কোনো আকার নেই।
খ. এরা নিউক্লিয়াসযুক্ত।
গ. হিমোগ্লোবিন থাকে না।
ঘ. প্রধান কাজ দেহের জীবাণু ধ্বংস করা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
৮. মানুষের রক্তের গ্রুপ জানার প্রয়োজনীয়তা কী? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: রক্ত সঞ্চারণে কোনো দাতার রক্ত গ্রহীতার দেহে সঞ্চারণের পূর্বে উভয়ের রক্তের গ্রুপ জানা জরুরি।
ভিন্ন গ্রুপের রক্ত গ্রহীতার রক্তকে জমাট বাঁধিয়ে প্রাণহানি ঘটাতে পারে। এছাড়া রক্তের গ্রুপ জানা থাকলে বিপদে আপদে রক্ত দান ও গ্রহণ করা সহজ হয়।
৯. স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তনালির মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধে না কেন?
উত্তর: স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তনালির মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধে না কারণ—
i. রক্তে বেসোফিল শ্বেতকণিকা হেপারিন নামক এক প্রকার পদার্থ নিঃসৃত করে যা রক্তনালির মধ্যে রক্তকে জমাট বাঁধতে দেয় না।
ii. রক্তনালির গাত্র খুবই মসৃণ, এর ফলে রক্তের অণুচক্রিকা অবিকৃত থাকে এবং অণুচক্রিকা থেকে থ্রম্বোপ্লাসটিন নির্গত হয় না।
১০. লিম্ফোসাইট ও মনোসাইটের মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখ?
উত্তর: লিস্ফোসাইট ও মনোসাইটের মধ্যে দুটি পার্থক্য নিম্নরূপ:
লিম্ফোসাইট:
১. বড় নিউক্লিয়াসযুক্ত ছোট রক্তকণিকা।
২. অ্যান্টিবডির দ্বারা দেহে প্রবেশ করা রোগজীবাণুকে ধ্বংস করে।
মনোসাইট:
১. ছোট, ডিম্বাকার ও বৃক্কাকার নিউক্লিয়াসযুক্ত বড় রক্তকণিকা।
২. ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় রোগজীবাণুকে ধ্বংস করে।
১১. ফুসফুসীয় শিরা ও ফুসফুসীয় ধমনির মধ্যে কী পার্থক্য দেখা যায়?
ফুসফুসীয় শিরা:
ক. ফুসফুসীয় শিরা ফুসফুস থেকে নির্গত হয়ে হৃৎপিণ্ডের বাম অলিন্দে প্রবেশ করে।
খ. এর মাধ্যমে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পরিবাহিত হয়।
গ. হৃৎপিণ্ডের সাথে এর সংযোগস্থলে কপাটিকা থাকে না।
ফুসফুসীয় ধমনি:
ক. ফুসফুসীয় ধমনি ডান নিলয় থেকে নির্গত হয়ে ফুসফুসে যায়।
খ. এর মাধ্যমে কার্বন ডাইঅক্সাইডযুক্ত রক্ত পরিবাহিত হয়।
গ. হৃৎপিণ্ডের সাথে এর সংযোগস্থলে কপাটিকা থাকে।
১২. রক্ত গ্রহণের পূর্বে দাতা ও গ্রহীতার রক্তের গ্রুপ বিবেচনা করা প্রয়োজন কেন?
উত্তর: অ্যান্টিজেন A বহনকারী মানুষের লোহিত কণিকা অ্যান্টিবডি α এর সংস্পর্শে এবং অ্যান্টিজেন B যুক্ত লোহিত কণিকা অ্যান্টিবডি β এর সংস্পর্শে জমাট বেঁধে যায়। এর ফলে দাতার রক্ত যদি অ গ্রুপের হয় তা হলে গ্রহীতার ই গ্রুপের রক্তের লোহিত কণিকাগুলো জমাট বেঁধে যাবে। এতে গ্রহীতার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এ কারণে রক্ত গ্রহণের পূর্বে দাতা ও গ্রহীতার রক্তের শ্রেণি বিবেচনা করা অবশ্যই প্রয়োজন।
১৩. তঞ্চন ও থ্রম্বোসিস এর মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: দেহ থেকে নির্গত রক্ত যে প্রক্রিয়ায় অর্ধকঠিন জেলির আকারে রূপান্তরিত হয় তাকে তঞ্চন বলে। অপর দিকে রক্তনালির মধ্যে রক্তের তঞ্চনকে থ্রম্বোসিস বলে।
১৪. থ্রম্বোসাইট এর কাজগুলো কী?
উত্তর: থ্রম্বোসাইট-এর কাজগুলো হলো—
i. রক্ত তঞ্চনে সাহায্য করা এদের প্রধান কাজ। রক্ত ক্ষরণের সময় অণুচক্রিকা ভেঙে গিয়ে থ্রম্বোপ্লাসটিন মুক্ত করে। এই পদার্থ প্রোথ্রম্বিনকে থ্রম্বিনে রূপান্তর করে যা পরবর্তীতে ফাইব্রিন জালক সৃষ্টি করে রক্তের তঞ্চন ঘটায়।
ii. অণুচক্রিকা রক্ত জালিকার ক্ষতিগ্রস্ত অন্তঃআবরণীর গায়ে এঁটে গিয়ে মেরামতের কাজ করে।
১৫. হৃদধ্বনি দুটি কী কী? তাদের সৃষ্টির কারণ উল্লেখ কর।
উত্তর: হৃদধ্বনি দুটি হলো—
নিলয় সিস্টোল-এর শব্দ ‘লাব’
নিলয় ডায়াস্টোল-এর শব্দ ‘ডাব’
নিলয় সংকোচনে (সিস্টোল) উভয় নিলয়ের মধ্যে রক্তচাপ বাড়তে থাকে এবং প্রতি নিলয়ের রক্তচাপ সে দিকের অলিন্দে রক্তচাপে অধিক হলে ট্রাইকাসপিড ও বাইকাসপিড কপাটিকা বন্ধ হয়ে যায়। কপাটিকাগুলো বন্ধের সময় হৃদ ধ্বনির প্রথম শব্দ ‘ডাব’ সৃষ্টি হয়। প্রথম নিলয়ের প্রসারণে (ডায়াস্টোল) রক্তচাপ হ্রাস পাওয়ায় সহাবসান ও ফুসফুসীয় ধমনির রক্তের বিপরীতমুখী প্রবাহে সেমিলুনার কপাটিকা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে দ্বিতীয় হৃদধ্বনি ‘ডাব’ এর সৃষ্টি হয়।
আরও দেখো—নবম ও দশম শ্রেণির বিজ্ঞান সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
নবম-দশম শ্রেণির প্রিয় শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের নবম শ্রেণির বিজ্ঞান ৩য় অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে উত্তরগুলো সংগ্রহ করে নাও। এছাড়াও অধ্যায়ভিত্তিক জ্ঞানমূলক, অনুধাবনমূলক এবং সৃজনশীল প্রশ্নের সমাধান পেতে উপরে দেওয়া লিংকে ভিজিট করো।
Discussion about this post