নবম শ্রেণির বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর : লেন্সের সম্মুখে বস্তু স্থাপন করলে প্রতিবিম্ব কখনো সম্মুখে হয় আবার কখনো পেছনে বা বিপরীত দিকে সৃষ্টি হয়। আবার একই দিক থেকে প্রধান অক্ষের সমান্তরাল আলোক রশ্মি উত্তল লেন্সে প্রতিসরিত হলে যেদিকে ফোকাস বিন্দু পাওয়া যায় অবতল লেন্সে ফোকাস বিন্দু তার বিপরীত দিকে পাওয়া যায়। তাই বস্তুর দূরত্ব, প্রতিবিম্বের দূরত্বের সাথে ফোকাস দূরত্বের সম্পর্ক নির্ণয় করার জন্য চিহ্ন বিবেচনা করা হয়।
নবম শ্রেণির বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
১. দর্পণ কী কাজে ব্যবহৃত হয়?
উত্তর: দর্পণ মূলত প্রতিবিম্ব দেখার কাজে ব্যবহৃত হয়।
দর্পণে অভীষ্ট প্রতিবিম্বের আকারের উপর নির্ভর করে সমতল, অবতল বা উত্তল দর্পণ ব্যবহার করা হয়। বস্তুর আকারের সমান প্রতিবিম্ব দেখতে হলে সমতল দর্পণ, বিবর্ধিত সোজা বিম্ব দেখতে হলে অবতল দর্পণ এবং গাড়ি ড্রাইভিং-এর সময় খর্বিত বিম্ব দেখতে হলে উত্তল দর্পণ ব্যবহৃত হয়।
২. কোনো একটি নির্দিষ্ট মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক বিভিন্ন হতে পারে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, কোনো একটি নির্দিষ্ট মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক বিভিন্ন হতে পারে। প্রতিসরাঙ্ক দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। যথা—মাধ্যমদ্বয়ের প্রকৃতি ও আলোর রং। সুতরাং মাধ্যমদ্বয় অপরিবর্তিত থাকলেও যদি আলোর রঙ পরিবর্তিত হয় তবে কোনো নির্দিষ্ট মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক ভিন্ন হবে।
৩. আলোর প্রতিসরণের দ্বিতীয় সূত্রে যে ধ্রুব সংখ্যার কথা বলা হয়েছে সেটি আসলে কী?
উত্তর: আলোর প্রতিসরণের দ্বিতীয় সূত্রে যে ধ্রুব সংখ্যাটির কথা বলা হয়েছে, সেটি হলো নির্দিষ্ট রঙের জন্য প্রথম মাধ্যমের সাপেক্ষে দ্বিতীয় মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক। অর্থাৎ বিভিন্ন রঙের জন্য এই প্রতিসরাঙ্কের মাত্রা বিভিন্ন হয়।
৪. মানব চক্ষুর রেটিনায় রড ও কোন কোষ না থাকলে কী কী অসুবিধা ঘটবে বলে মনে হয়?
উত্তর: মানব চক্ষুর রেটিনায় রড ও কোন কোষ না থাকলে বিভিন্ন আলোর ও উজ্জ্বলতার বস্তু দেখতে আমাদের অসুবিধা হতো।
রড ও কোণ কোষ আলোক গ্রাহক এবং বর্ণ গ্রাহক হিসেবে কাজ করে। এগুলো থেকে আগত আলোকরশ্মি শোষণ করে অপটিক স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কের দর্শনকেন্দ্রে প্রেরণ করে। ফলে বস্তুটিকে আমরা দেখতে পাই। যদি এ কোষগুলো রেটিনায় না থাকে তাহলে উজ্জ্বল বা অনুজ্জ্বল আলো এবং রঙিন বস্তু দেখতে অসুবিধা হবে।
৫. লেন্সের ফোকাস দূরত্ব বা প্রতিবিম্বের দূরত্ব নির্ণয়ের সময় ধনাত্মক বা ঋণাত্মক চিহ্ন ব্যবহার করা হয় কেন?
উত্তর: লেন্সের সম্মুখে বস্তু স্থাপন করলে প্রতিবিম্ব কখনো সম্মুখে হয় আবার কখনো পেছনে বা বিপরীত দিকে সৃষ্টি হয়। আবার একই দিক থেকে প্রধান অক্ষের সমান্তরাল আলোক রশ্মি উত্তল লেন্সে প্রতিসরিত হলে যেদিকে ফোকাস বিন্দু পাওয়া যায় অবতল লেন্সে ফোকাস বিন্দু তার বিপরীত দিকে পাওয়া যায়। তাই বস্তুর দূরত্ব, প্রতিবিম্বের দূরত্বের সাথে ফোকাস দূরত্বের সম্পর্ক নির্ণয় করার জন্য চিহ্ন বিবেচনা করা হয়।
৬. অবতল লেন্সকে অপসারী লেন্স বলা হয় কেন?
উত্তর: অপসারী শব্দের অর্থ কোনো বিন্দু থেকে চারদিকে ছড়িয়ে পড়া। অবতল লেন্স সাধারণত একগুচ্ছ আলোকরশ্মি অপসারী করে থাকে বলে একে অপসারী লেন্স বলা হয়। চিত্রে, অবতল লেন্সে সমান্তরাল রশ্মিগুচ্ছ প্রতিসরণের পর ঋ বিন্দু হতে আসছে বলে মনে হয়।
৭. ক্ষীণদৃষ্টি এবং দীর্ঘদৃষ্টির মধ্যকার পার্থক্য উল্লেখ কর।
উত্তর: ক্ষীণদৃষ্টি এবং দীর্ঘদৃষ্টির মধ্যকার পার্থক্য নিম্নে দেওয়া হলো—
ক্ষীণদৃষ্টি:
১. চোখের লেন্সের অভিসারী ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে অথবা চোখের লেন্সের ফোকাস দূরত্ব কমে গেলে ক্ষীণদৃষ্টি দেখা দেয়।
২. অক্ষিগোলকের ব্যাসার্ধ বৃদ্ধি পেলে এ ত্রুটি হয়।
৩. অবতল লেন্সের চশমা ব্যবহারের দ্বারা এ ত্রুটি দূর করা যায়।
৪. অবতল লেন্সের চশমার ফোকাস দূরত্ব হবে ক্ষীণদৃষ্টির দীর্ঘতম দূরত্বের সমান।
দীর্ঘদৃষ্টি:
১. চোখের লেন্সের অভিসারী ক্ষমতা কমে গেলে অথবা চোখের লেন্সের ফোকাস দূরত্ব বেড়ে গেলে দীর্ঘদৃষ্টি দেখা দেয়।
২. অক্ষিগোলকের ব্যাসার্ধ হ্রাস পেলে এ ত্রুটি হয়।
৩. উত্তল লেন্সের চশমা ব্যবহারের দ্বারা এ ত্রুটি দূর করা যায়।
৪. উত্তল লেন্সের চশমার ফোকাস দূরত্ব হবে দীর্ঘদৃষ্টির নিকটতম দূরত্বের সমান।
৮. লেন্সের ক্ষমতা -2D বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: লেন্সের ক্ষমতা -2D বলতে বোঝায় লেন্সটি অবতল এবং এটি প্রধান অক্ষের সমান্তরাল একগুচ্ছ আলোক রশ্মিকে এমনভাবে অপসারিত করে যে, এগুলো লেন্স থেকে ৫০ সেমি দূরের কোনো বিন্দু থেকে অপসৃত হচ্ছে বলে মনে হয়।
৯. কোনো ব্যক্তি দীর্ঘ দৃষ্টিসম্পন্ন হলে কাছের ও দূরের দেখার ক্ষেত্রে কীরূপ সমস্যা হয়?
উত্তর: কোনো ব্যক্তি দীর্ঘ দৃষ্টিসম্পন্ন হলে দূরের বস্তু দেখতে কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু কাছের বস্তুসমূহ স্পষ্ট দেখতে অসুবিধা হয়। এজন্য তিনি তখন বই বা খবরের কাগজ পড়তে পারেন না। এ ত্রুটি দূরীকরণে তিনি উত্তল লেন্সের চশমা ব্যবহার করতে পারেন।
১০. চোখ ভালো রাখার প্রধান উপায় কী কী?
উত্তর: চোখ ভালো রাখার উপায় হলো:
১. পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ও খনিজ লবণ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ চোখ ভালো রাখার প্রধান উপায়।
২. দিনে বেশ কয়বার ঠাণ্ড পানি দিয়ে চোখ ধুতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে চোখে যেন পিচুটি না জমে।
৩. চোখের খুব কাছে বা দূরে রেখে বই পড়তে নেই। এতে চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হতে পারে।
১১. সঠিক পুষ্টি গ্রহণ চোখের জন্য দরকারি—ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: সঠিক পুষ্টি গ্রহণ চোখের জন্য খুবই দরকারি। কারণ সঠিক পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার চোখকে রোগমুক্ত রাখে। চোখের স্বাভাবিক দৃষ্টির জন্য উপকারি খাবার হলো ভিটামিন এ, সি ও ই সমৃদ্ধ খাবার; ফ্যাটি এসিড যুক্ত খাবার, জিংকসমৃদ্ধ খাবার, গাঢ় সবুজ শাকসবজি ও বিভিন্ন ফল চোখের জন্য খুবই ভালো। এ ধরনের খাবার চোখকে রোগমুক্ত রাখতে সহায়তা করে। তাই বলা যায়, চোখকে রোগমুক্ত ও সুস্থ রাখার জন্য সঠিক পুষ্টি গ্রহণ চোখের জন্য দরকারি।
১২. ড্রাইভার কীভাবে শরীর না ঘুরিয়ে আশপাশ দেখতে পারে?
উত্তর: ড্রাইভার গাড়িতে অবস্থিত তিনটি দর্পণ ব্যবহার করে শরীর না ঘুরিয়ে আশপাশ দেখতে পারে। গাড়ির সামনের দরজার সম্মুখ দিকে দু’পাশে দুটি দর্পণ এবং অপরটি গাড়ির ভিতরে সামনের দিকে মাঝখানে থাকে। গাড়ির দু’পাশের দর্পণ দু’টি গাড়ির দু’পাশের বস্তু দেখতে সহায়তা করে। অপরদিকে গাড়ির ভিতরের সামনের দিকের দর্পণে পিছনের বস্তুর প্রতিবিম্ব দেখা যায়। ফলে এই তিনটি দর্পণের সাহায্যে ড্রাইভার শরীর না ঘুরিয়েও আশপাশ দেখতে পারে।
১৩. লেন্সের ক্ষমতা বলতে কী বুঝায়?
উত্তর: লেন্সের আলোকরশ্মিকে অভিসারী বা অপসারী করার ক্ষমতাই হলো লেন্সের ক্ষমতা।
প্রকৃত অর্থে একগুচ্ছ সমান্তরাল আলোক রশ্মিকে কোনো লেন্সের অভিসারী (উত্তল লেন্সে) গুচ্ছ অপসারী (অবতল লেন্সে) গুচ্ছ পরিণত করার প্রবণতাই হলো লেন্সের ক্ষমতা। লেন্সের ক্ষমতা ধনাত্মক বা ঋণাত্মক হতে পারে।
১৪. পাহাড়ি রাস্তায় ড্রাইভিং করা বিপজ্জনক কেন?
উত্তর: পাহাড়ি রাস্তা সাধারণত আকাবাঁকা হয়। অনেক সময় এমনও অদৃশ্য বাঁক থাকে যে পরবর্তী রাস্তাটি প্রায় ৯০° কোণে থাকে। এই কারণে পাহাড়ি রাস্তায় ড্রাইভিং করা বিপজ্জনক।
১৫. স্পষ্ট দর্শনের নিকটতম দূরত্ব 25cm-কথাটি বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর: স্পষ্ট দর্শনের নিকটতম দূরত্ব 25cm-কথাটি বলতে বোঝায়, চোখের সাপেক্ষে সবচেয়ে নিকটের 25cm বিন্দু পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুকে চোখ বিনা শ্রান্তিতে স্পষ্ট দেখতে পায়।
চোখের সাপেক্ষে সবচেয়ে নিকটের যে বিন্দু পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুকে বিনা শ্রান্তিতে চোখে স্পষ্ট দেখা যায়, তাকে স্পষ্ট দৃষ্টির নিকট বিন্দু বলে এবং চোখ হতে ঐ বিন্দুর দূরত্বকে স্পষ্ট দৃষ্টির ন্যূনতম দূরত্ব বলে। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে এই দূরত্ব হলো 25cm.
আরও দেখো—নবম ও দশম শ্রেণির বিজ্ঞান সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
নবম-দশম শ্রেণির প্রিয় শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের নবম শ্রেণির বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে উত্তরগুলো সংগ্রহ করে নাও। এছাড়াও অধ্যায়ভিত্তিক জ্ঞানমূলক, অনুধাবনমূলক এবং সৃজনশীল প্রশ্নের সমাধান পেতে উপরে দেওয়া লিংকে ভিজিট করো।
Discussion about this post