নবম শ্রেণির বিজ্ঞান ৯ম অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর : জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে হাজার হাজার একর আবাদি জমি নষ্ট হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদি সব রকমের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে ও কর্মসংস্থানের উপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। কর্মসংস্থানের চাপ সামলানোর জন্য নতুন নতুন শিল্প-কারখানা তৈরি হচ্ছে যার কারণে আবাদি জমিসহ বনভূমি উজাড় হয়ে যাচ্ছে। বিপুল জনসংখ্যার জন্য চাহিদার ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
নবম শ্রেণির বিজ্ঞান ৯ম অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
১. জলবায়ু পরিবর্তনে ঋতুচক্রে কী পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে?
উত্তর: জলবায়ু পরিবর্তনে ঋতুচক্রে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এখন আশ্বিন মাসেও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে এবং তা অসময়ে বন্যার কারণ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। অন্যদিকে শীতকাল ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। গ্রীষ্মকালে অনেক বেশি গরম পড়ছে এবং মাঝে মাঝে দেশের কোনো কোনো এলাকায় দিনের তাপমাত্রা ৪৫-৪৮° সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে। অন্যদিকে শীতের সময় কখনো কখনো তাপমাত্রা অনেক বেশি কমে যাচ্ছে।
২. জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপারে IPCC তাদের মূল্যায়ন রিপোর্টে কী বলেছে?
উত্তর: জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত প্রভাব মূল্যায়নের জন্য গঠিত Intergovernmental Panel on Climate Change (IPCC) তাদের চতুর্থ মূল্যায়ন রিপোর্ট (AR4) অনুযায়ী জলবায়ুজনিত পরিবর্তনের প্রভাব অনেক মারাত্মক এবং তা ধীরে ধীরে বেড়েই চলছে। পৃথিবীর তাপমাত্রা গত ১০০ বছরে প্রায় ০.৭৪° সেলসিয়াস বেড়েছে। এ রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী দুই দশকে বায়ুম-লের তাপমাত্রা গড়ে প্রতি দশ বছরে ০.২-০.৩° সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়ে যাবে।
৩. জনসংখ্যা বৃদ্ধি বাংলাদেশে কী প্রভাব ফেলছে?
উত্তর: জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে হাজার হাজার একর আবাদি জমি নষ্ট হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদি সব রকমের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে ও কর্মসংস্থানের উপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। কর্মসংস্থানের চাপ সামলানোর জন্য নতুন নতুন শিল্প-কারখানা তৈরি হচ্ছে যার কারণে আবাদি জমিসহ বনভূমি উজাড় হয়ে যাচ্ছে। বিপুল জনসংখ্যার জন্য চাহিদার ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
৪. একটি এলাকার জনসংখ্যা কখন বৃদ্ধি পায়?
উত্তর: একটি এলাকায় যে কয়জন লোক মৃত্যুবরণ করে তার চেয়ে বেশি জš§গ্রহণ করে, তাহলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া বহির্গমনের ফলে একটি দেশের জনসংখ্যা কমে যায় আর বাইরে থেকে আগমনের ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
৫. অপরিকল্পিত নগরায়ন কী সমস্যা সৃষ্টি করছে?
উত্তর: অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে শহর এলাকায় আবাসন সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে এবং এর ফলে আশপাশের আবাদি জমি ধ্বংস করে বা জলাভূমি ভরাট করে নগরায়ন করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই ভালো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পানি সরবরাহসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধা না থাকায় জীবনযাপনে নানাবিধ সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
৬. বনভূমি উজাড় হচ্ছে কেন?
উত্তর: বনভূমি উজাড় হওয়ার মূল কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, অন্ন, বস্ত্র ইত্যাদি সবরকম চাহিদা বৃদ্ধি পায়। আর প্রতিটি চাহিদাই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বনভূমি উজাড়ের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
৭. এসিড বৃষ্টি পরিবেশে কী ক্ষতি করে?
উত্তর: এসিড বৃষ্টি পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে। এমনকি এসিডের প্রতি সংবেদনশীল অনেক গাছ মরে যায়। এছাড়া কিছু অতি প্রয়োজনীয় উপাদান (যেমন—Ca, Mg) এসিড বৃষ্টিতে দ্রবীভূত হয়ে মাটি থেকে চলে যায় যা ফসল উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। এসিড বৃষ্টি হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় পানিসম্পদ ও জলজ প্রাণীসমূহ। মাছের রেণু বা পোনা এসিডের প্রতি সংবেদনশীল। এসিডের মাত্রা বেশি হলে পুরো জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে। মানুষের শরীরের জন্যও এসিড বৃষ্টি ক্ষতিকর। মানবদেহে হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের সমস্যা, অ্যাজমা ও ব্রঙ্কাইটিসের মতো মারাত্মক রোগের সৃষ্টি করে এসিড বৃষ্টি।
৮. কী কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে?
উত্তর: সূর্যের আলো পৃথিবীকে উত্তপ্ত করে। উত্তাপের অনেকটা বিকিরিত হয়ে বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে হারিয়ে যায় মহাশূন্যে। এর ফলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উত্তাপ মোটামুটি একরকম থাকে। কিন্তু বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে গেলে অবস্থা এ রকম থাকে না। কার্বন ডাইঅক্সাইড পৃথিবী থেকে বিকিরিত তাপের খানিকটা ধরে রাখে। এতে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। আর বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বাড়লে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
৯. কী ব্যবস্থা অবলম্বনের মাধ্যমে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায়?
উত্তর: ভূমিকম্প প্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থা এখনও মানুষের জানা নেই। তবে ভূমিকম্পের সময় আত্মরক্ষা এবং ভূমিকম্পের পর উদ্ধার ও ত্রাণকাজ সম্পর্কে মানুষকে ধারণা দিতে হবে। ভূমিকম্পে করণীয় সম্পর্কে ধারণা, সচেতনতা ও প্রস্তুতি থাকলে প্রাণহানি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
১০. খরা কৃষির জন্য একটি বিরাট হুমকি—ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: খরার কারণে মাটির উপরের পানি শুকিয়ে যেতে থাকে। খরার সময়ে খুব জোরে যখন বাতাস বইতে থাকে তখন উপরের মাটি সরে যায়। শস্যের উপযোগী উপরিভাগের এ মাটি সরে যাওয়ার ফলে চাষাবাদে দারুণ অসুবিধা হয়। তাই খরাকে কৃষির জন্য একটি বিরাট হুমকি বলা হয়।
১১. নদীভাঙন বাংলাদেশে কী সমস্যার সৃষ্টি করে?
উত্তর: নদীভাঙনের ফলে এদেশে হাজার হাজার একর আবাদি জমি, বসতবাড়ি ও অন্যান্য স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এর ফলে প্রতি বছর এদেশের হাজার হাজার মানুষ তাদের ভিটেমাটি ও কাজের সংস্থান হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ে। এতে নদী পাড়ের লোকজনের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে। কাজের সন্ধানে তারা শহরে এসে ভিড় করে।
১২. ভূমিকম্প প্রতিরোধে আমরা কী করতে পারি?
উত্তর: ভূমিকম্প প্রতিরোধে আমাদের করণীয় হলো:
ক. বাড়িঘর ও বড় স্থাপনা ভূমিকম্প সহনশীল উপাদান দ্বারা তৈরি করতে হবে।
খ. উচ্চমাত্রার ভূমিকম্পে স্থাপনার যেন কোনো ক্ষতি না হয় নির্মাণের সময় এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে।
গ. উঁচু স্থাপনার ক্ষেত্রে হালকা উপাদান ব্যবহার করতে হবে।
ঘ. ভূমিকম্পের সময় আত্মরক্ষা এবং ভূমিকম্পের পর উদ্ধার ও ত্রাণকাজ সম্পর্কে মানুষকে ধারণা দিতে হবে।
ঙ. ভূমিকম্পে করণীয় সম্পর্কে ধারণা ও সচেতনতা সৃষ্টির জন্য জনসাধারণকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
১৩. খরার ক্ষয়ক্ষতি কমাতে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়?
উত্তর: খরার ক্ষয়ক্ষতি কমাতে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়—
ক. ভূগর্ভস্থ পানির স্তর পরীক্ষা করে মাটির নিচে থেকে পানি উত্তোলন বন্ধ করে খরা মোকাবিলা করা যেতে পারে।
খ. বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে রাখতে হবে, যাতে দরকারের সময় ব্যবহার করা যায়।
গ. ব্যাপক বনায়ন সৃষ্টি করা গেলে মাটি পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখতে পারবে এবং মাটির আর্দ্রতা বজায় থাকবে।
ঘ. পানির অপচয় রোধে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
ঙ. বন উজাড় বন্ধ করতে হবে। এতে মাটিতে সূর্যকিরণ সরাসরি পড়ে শুকিয়ে যেতে পারবে না।
১৪. মানুষের জীবনধারণের জন্য মানসম্মত ও উন্নত পরিবেশ দরকার কেন?
উত্তর: মানুষের জীবনধারণের জন্য মানসম্মত ও উন্নত পরিবেশ দরকার। আমাদের জীবনধারণের জন্য যেসব আবশ্যকীয় উপাদান রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো বাতাস ও পানি। বাতাস যদি কোনোভাবে দূষিত হয় এবং সেই দূষিত বাতাস যদি অক্সিজেনের সাথে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে তাহলে আমাদের শরীরে প্রাণঘাতি রোগের সৃষ্টি হয়। তেমনি পানিও যদি দূষিত হয় তাও আমাদের জন্য মারাত্মক ক্ষতি সৃষ্টি করে। এই পরিবেশ যদি মানসম্মত ও উন্নত না হয় তবে জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে ও আমাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।
১৫. বৈশ্বিক উষ্ণতা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: বৈশ্বিক উষ্ণতা হলো পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া। বায়ুমণ্ডলে গ্রিন হাউস গ্যাসগুলোর নিঃসরণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণেই বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে এবং জলবায়ুর নানাবিধ পরিবর্তন দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। যানবাহন, শিল্প কারখানা, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে সৃষ্ট ধোঁয়া, রেফ্রিজারেটর, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ইত্যাদি থেকে গ্রিন হাউস গ্যাস যেমন—কার্বন ডাইঅক্সাইড, ওজোন, মিথেন, সিএফসি, নাইট্রাস অক্সাইড, জলীয় বাষ্প ইত্যাদি গ্যাস নিঃসরিত হয়। এ গ্যাসগুলো বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়িয়ে তুলছে।
আরও দেখো—নবম ও দশম শ্রেণির বিজ্ঞান সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
নবম-দশম শ্রেণির প্রিয় শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের নবম শ্রেণির বিজ্ঞান ৯ম অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে উত্তরগুলো সংগ্রহ করে নাও। এছাড়াও অধ্যায়ভিত্তিক জ্ঞানমূলক, অনুধাবনমূলক এবং সৃজনশীল প্রশ্নের সমাধান পেতে উপরে দেওয়া লিংকে ভিজিট করো।
Discussion about this post