Question: crossing brooklyn ferry summary in bangla
কবি পরিচিতি
ওয়াল্ড হুইটম্যান ১৮১৯ সালের ৩১ মে লং আইল্যান্ডের ওয়েস্ট চিল নামক স্থানের ছোটো একটি খামারবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ওয়াল্টার ও মা লুইসা ভন ভেলসর মোটামুটি শিক্ষিত ছিলেন। নয় জন সন্তান ছিল তাঁদের। এদের মধ্যে দু’জন ছিল মানসিক অসুস্থ। হুইটম্যানের পিতা প্রথমে একটি স্থাপন করেন। পরবর্তীতে ইমারত নির্মণের কাজে সহায়তা করতেন শ্রমিকদের সাথে। হুইটম্যানের মা ছিলেন সন্তাদের খুবই কাছাকাছি।
তিনি উদারনৈতিক ধর্মীয় সংধঠন ভ্রাতৃসংঘ দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিলেন, যা পরবর্তীতে হুইটম্যানের মধ্যে প্রভাব ফেলে। হুইটম্যান তাঁর কবিতায়, ‘তোমাকে’, ‘তুমি’ এসব শব্দ নানা ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন, এসবই ভ্রাতৃসংঘের স্মৃতি, এমনকি তিনি তাঁর লেখায় যে নবম মাস কথাটি ব্যবহার করেছেন সেটিও এই চেতনারই ফলশ্রুতি, এটি ভ্রাতৃসংঘের স্মৃতিকে স্মরণ করায়। তাঁর ছেলেবেলায় লং আইল্যান্ডের ছোটো খামার আর প্রতিবেশী ব্রুকলিন শহর তাঁর কাছে অভিন্ন হৃদয় বন্ধুর মতো ছিল।
দুটো স্থান বিশেষ করে এ দুটো জায়গার পরিবেশ, প্রকৃতি, মানুষজন যুবক হুইটম্যানের মধ্যে যথেষ্ঠ প্রভাব ফেলেছিল। তাঁর কবিতা ‘There was a child went Forth’ আমাদের সামনে তাদের গার্হস্থজীবন ব্যবস্থা, মা বাবা ও পরিবার পরিজনদের ছবি স্পষ্ট করে তোলে। একজন সমালোচকের মতে, “এই টগবগে তরুণ কেমন যেন একটু অলস যার সর্বদা স্বপ্নের জগতে নিমগ্ন থাকে।” মাত্র এগারো বছর বয়সে হুইটম্যান বিদ্যালয় পরিত্যাগ করে নানাবিধ কর্মের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন।
কখনো অফিস বেয়ারা, কখনো বা ছপাকানার সহকারী বালক কিংবা গ্রাম্য পাঠশালার শিক্ষক, সত্যি কথা বলতে কি সে সময়ে হুইটম্যান বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার উপযুক্ত ছিলেন না। এরপর সতেরো বছর বয়সে তিনি সাংবাদিকতার পেশা বেছে নেন। হুইটম্যান বিভিন্ন ধরনের পত্রপত্রিকায় কাজ করেন।
এ সময়ই তাঁর ‘ Leaves of Grass’ লিখিত হয়। সাতাশ বছর বয়সে তিনি ‘ব্রুকলিন ডেইলি ঈগল’ পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত হন। কিন্তু এ কর্মে তিনি দুবছরের বেশি টিকে থাকেননি। বিশেষ করে রাজনৈতিক কারণে সেখান থেকে তিনি সরে আসেন। মূলত তিনি ছিলেন গণতন্ত্রবাদী। পত্রিকায় কাজ করার সময় তিনি আমেরিকাকে আরো ব্যপকভাবে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পেলেন। সেসবই যেন তাঁর সঙ্গীতকে আরো প্রাণবন্ত করে তুলল। মাঝেমধ্যেই হুইটম্যান উদ্দেশ্যহীনভাবে এখানে সেখানে যত্রতত্র ঘোরাফেরা করতেন, বিনা কারণেই খেয়া নৌকায় নদী পারাপার করতেন।
তিনি তাঁর ভাই জেফের সাথে একবার ট্রেন জার্নি করেন বাল্টিমোর থেকে কাম্বারলেন অবধি। কোচে আরোহণ করে পার্বত্য এলাকা ঘরে বেড়ালেন। ওহিওর নিন্ম অঞ্চলে নৌকা ভ্রমণ করলেন, মিসিসিপি থেকে বন্দর নগরী লুসিয়ানা পর্যন্ত। তিনি নায়াগ্রা জলপ্রপাতও পর্যবেক্ষণ করেন। স্রোতে নৌকা ভাসিয়ে তিনি নেমে আসেন শেষে ব্রুকলিন নদীতে। হুইটম্যান আমেরিকার জীবনযাত্রা, এর নদ নদী, প্রকৃতি, প্রেইরি অঞ্চল, মানুষের কর্মচাঞ্চল্য সবই অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ করেছেন। আমেরিকাকে তিনি মনেপ্রাণে ভালোবেসেছেন, আমেরিকাই ছিল তাঁর ধ্যানজ্ঞান।
১৮৪৮ ব্রুকলিনে ফিরে এসে তিনি আবার সাংবাদিবতার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করলেন। ১৮৫৫ সালের ৪ জুলাই তাঁর ‘Leaves of Grass’ – এর প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হলো। বইটি এক হাজার কপিও বিক্রি হলো না। এমনকি এ বিষয়ে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ সমালোচনাও প্রকাশিত হলো না। আরো নতুন কবিতা সংযোজন করে ১৮৫৬ সালে ‘Leaves of Grass’ – এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হলো। এটা দেখে এমার্সন পত্র লিখে জানিয়েছিলেন, “শুরুতেই তোমার অগ্রগতিকে শুবেচ্ছা জানাই।”
এরপর আমেরিকায় গৃহযুদ্ধ শুরু হলে, হুইটম্যান পত্যক্ষ করলেন এই এই বীভৎসতা, তাঁর স্বপ্নের আমেরিকা যেন আহতদের চিৎকার আর মৃত জনদের পরিবারের হাহাকারে ভরে গেল। এ ঘটনা তাঁর চিন্তাজগতে ব্যাপক ছাপ ফেলে যায়। এরই মাঝে আততায়ীর হাতে নিহত হলেন আব্রাহাম লিংকন, নিপীড়িত জনদের এই মহান নেতার মৃত্যুতে কবিতা ‘ও ক্যাপটেন মাই ক্যাপটেন’।
১৮৬৫ সালে তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে একটি প্রাইভেট সংস্থায় সেক্রেটারি হিসেবে যোগ দেন। ১৮৭৩ সালে তাঁর বয়স যখন চুয়ান্ন সে সময় হঠাৎ করেই তিনি স্টোক করলেন এবং বাতে পঙ্গু হওয়ার পর্যায়ে পৌছলেন এবং প্রায় শক্তিহীন হয়ে পড়লেন। এ সময়েই তাঁর মা মারা গেলেন, হুইটম্যান নিজেকে খুবই অসহায় ভাবতে লাগলেন এবং ওয়াশিংটন থেকে নিজের জন্মস্থনে ফিরে এলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি নিউজার্সির ক্যামডেনে স্থায়ী হলেন।
এ সময়েই তাঁর ‘ Prayer of Columbus’ লেখা হয়। কোনো মহিলাকে হুইটম্যান বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন কি না এমন প্রমাণ মেলে না। তবে উইলিয়াম ব্লেকের জীবনী রচয়িতা আলেকজান্ডার জিলক্রিস্ট এর সুন্দরী বিধাব হুইটম্যাকে প্রেমপত্র পাঠান, কিন্তু হুইটম্যান খুবই সন্মানের সাথে তাঁর পত্রের উত্তর প্রদান করেছিলেন। হুইটম্যানের অন্যান্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে ‘ডেমোক্রেটিক ভিসতাস’, ‘নভেম্বর বাউস’ ‘এ ব্যাকওয়ার্ড গ্ল্যান্স,’ ‘ওভার ট্রাভেল রোড’ বিখ্যাত। ‘সং অভ সাইলেন্স’ তাঁর অন্যতম মহৎকর্ম। ১৮৯২ সালের ২৬ মার্চ এই মহান কবি পরলোকগমন করেন।
হুইটম্যানের বিখ্যাত কিছু কবিতা
- Song of Myself
- I Sing the Body Electric
- I Hear America Singing’.
- When Lilacs Last in the Dooryard Bloom’d
- O Captain! My Captain!
- A Noiseless Patient Spider
- Whoever You Are Holding Me Now in Hand
- O Me! O Life!
- Out of the Cradle Endlessly Rocking
- Pioneers! O Pioneers!
crossing brooklyn ferry bangla translation
[১]
উত্তাল জোয়ার আমার নীচে! আমি তােমাকে দেখি মুখােমুখি!
সূর্য ডােবার আধা ঘণ্টা আগে পশ্চিমের মেঘ, আমি তােমাকেও দেখি মুখােমুখি।
সাধারণ পােশাক পরা নারী পুরুষের ভিড়, কত অদ্যুত তােমরা আমার নিকট!
খেয়ানৌকার শত শত মানুষ যারা নদী পার হয়ে ঘরে ফিরে, তারা তােমার ভাবনা।
থেকেও বেশি অদ্ভুত আমার নিকট,
তােমরা যারা ভবিষ্যতে এক তীর হতে অন্য তীরে পার হবে তােমরাও আমার নিকট
অদ্ভুত, আরও অদ্ভুত আমার চিন্তায় যা তােমাদের ভাবনা থেকেও বেশি।
[২]
দিবসের প্রতিটি মুহূর্তে সকল বস্তু হতে আমার পরিবর্তনশীল জীবনােপায়,
সহজসরল, বাহুল্য বর্জিত সুসংযুক্ত কর্ম পরিকল্পনা, সেখানে আমি বিচ্ছিন্ন,
প্রত্যেকেই বিচ্ছিন্ন, অথচ আমরা সবাই এ পরিকল্পনার অংশ,
অতীতের সাথে সাদৃশ্য এবং ভবিষ্যতের সাথেও।
মহান সতাটি মালার গুটির মতাে নদী পারাপার, রাস্তায় পদচারণ ও আমার সক্ষম।
দৃষ্টি ও শ্রুতিকে গেথে রেখেছে,
প্রচণ্ড বেগে ধাবমান জলস্রোত আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় অনেক দূরে।
অন্যদেরকেও যারা আমাকে অনুসরণ করে, আমার সাথে তাদের যে বন্ধন।
তাদের নিশ্চয়তা, জীবন, প্রেম, দৃষ্টি, শ্রুতি সবকিছুর সাথে ।
অনেকেই আসবে খেয়াঘাটে এবং এক তীর হতে অন্য তীরে পার হবে,
দেখবে উত্তাল স্রোতের বয়ে চলা,
অন্যরা দেখবে উত্তর ও পশ্চিমে ম্যানহাটানের জাহাজ চলাচল, পূর্বে ও দক্ষিণে
– দেখবে ব্রুকলিনের শিখর,
ছােটো ও বড়াে দ্বীপগুলােকে দেখবে তারা।
পঞ্চাশ বছর পরও এগুলাে দেখবে তারা সূর্য ডােবার আধাঘণ্টা আগে নদী পার
হবার সময়,
শত বছর পরও কিংবা শত শত বছর পরও তারা এগুলাে দেখবে।
উপভোগ করবে সূর্যাস্ত, জোয়ারের প্রবাহ, সাগরে পতিত হওয়া ভাটার টান।
[৩]
সময়, স্থান কিংবা পূরও সক্ষম হয়নি (আমাকে বিচ্ছিন্ন করতে)।
আমি আছি তােমার সাথে, বর্তমান কিংবা ভবিষ্যতের অসংখ্য প্রজন্মের নারী ও
পুরুষের সাথে,
তুমি আকাশ ও নদীর দিকে তাকিয়ে ঠিক যেমনটি অনুভ কর, আমিও তেমন অনুভব করেছিলাম,
জীবন্ত জনসমাগমের তুমি যেমন অন্যতম, আমিও ছিলাম তাদেরই একজন।
নদীর উচ্ছল প্রবাহ ও মনােরম দৃশ্য দ্বারা যেভাবে তুমি প্রাণবন্ত হও, আমিও ঠিক
সেভাবে হই,
রেলিং-এ হেলান দিয়ে যেভাবে তুমি দাঁড়াও, তারপর তীব্রস্রোতে দ্রুত অগ্রসর হও,
আমিও ঠিক সেভাবেই হই,
যেমনটি তুমি দেখ। অগণিত জাহাজের মাস্তুল এবং স্টিমারের মােটা নল, আমিও
ঠিক তেমনটি দেখেছিলাম।
আমিও অসংখ্য, অসংখ্যবার এই পুরাতন নদীটি পার হয়েছিলাম
দেখেছিলাম প্রাপ্তবয়স্ক গাংচিল, দেখেছিলাম তাদের নিশ্চল ডানায় আকাশে উড়া
শরীরকে দুলিয়ে,
দেখেছিলাম কীভাবে উজ্জ্বল হলুদ শরীরের এক অংশ আলােকিত করে এবং বাকি
অংশকে ঘন ছায়ায় রেখে,
দেখেছিলাম তাদের ধীর বৃত্তাকার চলা এবং দক্ষিণ প্রান্তে ক্রমশ মিলিয়ে যাওয়া।
পানিতে গ্রীষ্মের আকাশের প্রতিফলন দেখেছিলাম,
যদি আমার চোখগুলাে আলােক রশ্মির কম্পমান চিহ্ন দ্বারা ধাধা লেগে যেত,
দেখেছিলাম রৌদ্রালােকিত জলে আমার মাথার ছাঁচের মতাে বৃত্তাকার চারপাশে কেন্দ্রচ্যুত আলাের বলয়,
তাকিয়ে ছিলাম দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিম কোণে পাহা দুর আবছায়ার দিকে।
তাকিয়ে দেখেছিলাম বাষ্প যেন বেগুনি আভাযুক্ত পশমের মতাে উড়ছিল,
তাকিয়ে ছিলাম উপসাগরের দিকে জাহাজের আগমন দেখার জন্য ।
দেখেছিলাম তাদের প্রবেশগমন, দেখেছিলাম চতুর্দিকে যারা ছিল আমার কাছাকাছি,
দ্বিমাস্তল আর এক মাস্তুল বিশিষ্ট নৌকার সাদা পাল ও নােঙ্গরবদ্ধ জাহাজগুলাে
দেখছিলাম,
নাবিকেরা পাল টানানাে কিংবা খুঁটি বের করার কাজে ব্যস্ত,
গােলাকার মাস্তুল, জাহাজের দোদুল্যমান গতি, পাতলা সর্পিল নিশান,
ছােটো ও বড়াে স্টিমারের চলমান গতি, পাইলটেরা রয়েছে তাদের জন্য নির্দিষ্ট ঘরে,
জাহাজের গমনপথের পেছনে ফেলে আসা ও ফেনিল জলরেখা, চাকার দ্রুত
কম্পমান ঘূর্ণি,
সকল জাতির পতাকা, সূর্যাস্তে তাদের নামিয়ে ফেলা,
সন্ধ্যালােকে অর্ধবৃত্তাকার তরঙ্গমালা, বিতরণকৃত সুরাপাত্র, উচ্ছলিত ঝিলিক,
বিস্তত সুদুর ক্রমে ক্ষীণ হতে ক্ষীণতর হচ্ছে, ডেকের পাশে গুদামের ধূসর দেয়াল,
নদীর উপর পুঞ্জীভূত ছায়া, দুপাশে বজরাসহ বড়াে নৌকা, খড় বােঝাই নৌকা,
বিলম্বিত মাল খালাসকারী নৌকা,
রাতের আঁধারে পার্শ্ববর্তী উপকূলে ঢালাই কারখানার চিমনির আগুন উর্ধ্বে।
প্রজ্জ্বলিত চোখ ধাধানাে আলাে যেন,
লাল ও হলুদ আলাের সাথে বৈসাদৃশ্য কালাে অগ্নিশিখা নীচের রাস্তার
ফাটলগুলােতে এবং ঘরের চুড়ায় নিক্ষেপিত।
[৪]
এগুলাে এবং বাকি সবগুলাে দৃশ্যই আমার কাছে একই রকম ছিল, যেমন ছিল।
তােমার কাছে,
আমি ভালােবেসেছিলাম সেই শহরগুলাে, ভালােবেসেছিলাম রাজকীয় ও
মাহিমান্বিত ক্ষিপ্রবেগে ধাবমান সেই নদীকে,
যেসব নারী পুরুষ আমি দেখেছিলাম তার সকলেই আমার ঘনিষ্ঠ ছিল,
অন্যরাও ছিল একই রকম, তারা আমার দিকে ফিরে ফিরে তাকাত কারণ আমি
অধীর আগ্রহে তাদের জন্য অপেক্ষা করেছিলাম,
(সময় আসবে, যদিও আজ আমি এখানে থেমেছি)।
[৫]
এখন আমাদের মাঝে দূরতুটা কী?
আমাদের মধ্যকার হাজার বছরের দূরত্বের হিসাব গুনার প্রয়ােজন কী?
যাইহােক না কেন, ইহা সফল হয়নি, দুরত সফল হয়নি, এবং স্থান ও সফল হয়নি।
আমিও বেঁচে ছিলাম, অসংখ্য পাহাড়ঘেরা ব্রুকলিন আমার,
ম্যানহাটান দ্বীপের রাস্তাগুলােতে আমিও হেঁটেছিলাম এবং ইহার চারপাশের
পানিতে গােসল করেছিলাম, ।
আমিও অনুভব করেছিলাম, অস্বাভাবিক আকস্মিক প্রশ্নগুলাে আমাকে আলােড়িত করে,
দিনের বেলায় মানুষের ভিড়ে তারা আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে,
গভীর রাতে হেটে বাড়ি ফেরার পথে, কিংবা যখন আমি বিছানায় শয়ন করি তখন।
তারা আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে,
আমিও আকস্মিক আঘাতে সমাধানের চিরন্তন ভেলা থেকে চিরতরে হয়েছি চ্যত ।
আমি আমার শরীরে ধারণ করেছি আমার পরিচিতি,
আমি জানতাম আমি যা ছিলাম তাই আমার শরীর এবং আমি জানতাম আমি যা।
হব তাই তবে আমার শরীর।
[৬]
অন্ধকার তার প্রলেপ শুধু তােমার উপরেই ফেলেনি:
অন্ধকার তার প্রলেপ আমার দিকেও ছুড়ে মেরেছিল,
আমার সবচেয়ে ভালাে কাজগুলাে আমার কাছে মনে হয়েছিল নীরস ও সংশয়পূর্ণ।
যেগুলােকে ভাবতাম মহান চিন্তা, তারা কি প্রকৃতপক্ষে তুচ্ছ ছিল না?
তুমি শুধু একাই জানাে না পাপ কী হতে পারে,
আমিও জেনেছিলাম পাপ কী হয়েছিল,
আমিও বুনেছিলাম বিপরীতের প্রাচীন বন্ধন,
আমিও বাচাল, লজ্জিত, ক্ষুব্ধ, বলেছিলাম মিথ্যা, করেছিলাম চুরি, হয়েছি অসন্তুষ্ট
আমি বলতে ভয় পাই না, আমারও আছে ছলনা, ক্রোধ, উগ্র কামনাবাসনা।
আমি ছিলাম স্বেচ্ছাচারী, ব্যর্থ, লােভী, অসার ধূর্ত কাপুরুষ ও হিংসুটে,।
আমার মাঝে উপস্থিত ছিল নেকড়ে, সাপ ও শূকরের হিংস্রতা, ।
ঠক দৃষ্টি, মুখের উক্তি: ব্যভিচারীকামনা ও উপস্থিত ছিল,
প্রত্যাখ্যান, ঘৃণা, হীনতা, অলসতা কোনােটারই কমতি ছিল না,
বাকি সবার মতাে আমিও ছিলাম,
যুবকেরা আমাকে ডাকনামে ডেকেছিল উচ্চস্বরে, স্পষ্টভাবে যখন তারা আসা।
যাওয়ার পথে আমাকে দেখত,
যখন দাড়িয়ে থাকতাম, অনুভব করতাম আমার কাধে তাদের বাহু, কিংবা যখন।
বসে থাকতাম তখন আমার শরীরে তাদের অলসতাপূর্ণ হেলান,।
জনসভায় খেয়াঘাটে কিংবা রাস্তায় অনেক প্রিয়মুখ দেখতাম তবুও কখনাে তাদের।
একটি কথাও বলিনি,
অন্যদের মতােই জীবনযাপন করেছিলাম, একই রকম ঘুম, আহার আর আনন্দ।
নিয়ে,
অভিনেতা অথবা অভিনেত্রীর দিকে ফিরে তাকিয়ে সেই একই অভিনয় করেছিলাম,
সেই একই শাশ্বত ভূমিকা যা আমরা পছন্দমতাে বড়াে করে তৈরি করি,
কিংবা ছােটো করে, কিংবা বড়াে ছােটো উভয় করি।
[৭]
খুবই আপন, তবু আমি তােমার আরাে কাছে আসি,
এখন আমাকে নিয়ে তােমার কী চিন্তা, তােমার সম্বন্ধে আমি অনেক জেনেছিলাম,
আগেই আমি স্মৃতিতে জমা রেখেছিলাম,
তােমার জন্মের পূর্বে তােমাকে নিয়ে আমি গভীরভাবে দীর্ঘদিন ভেবেছিলাম,
কে জানত আমার বাড়িতে কি আসা উচিত। কিন্তু কে জানে আমি এসব উপভােগ করেছি?
কিন্তু কে জানে, আমি তােমাকে দূর থেকে ভালােভাবে দেখেছি, যদিও তােমরা
কেউ আমাকে দেখনি?
[৮]
মাস্তলের মুকুটশােভিত ম্যানহাটান থেকে আমার নিকট কী হতে পারে অধিক
মর্যাদাসম্পন্ন ও প্রশংসনীয়?
নদী, সূর্যাস্ত ও জোয়ারের অর্ধবৃত্তাকার তরঙ্গমালা কী হতে পারে?
সমস্ত শরীর কাঁপিয়ে গাংচিলের উড়ে যাওয়া, সন্ধ্যালােকে খড় বােঝাই নৌকা এবং
বিলম্বিত মাল খালাসকারী জাহাজ হতে পারে কি?
ঈশ্বর কি এগুলােকে অতিক্রম করতে পারে যা আমাকে মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে,
এবং প্রিয় উচ্চস্বরে আমার ডাকনাম ধরে ডাকে আমাকে যেন আমি আরাে
কাছে?
এর চেয়ে কে আমাকে আরাে সূক্ষ্মভাবে বাধতে পারে পরিচিত নরনারীদের সাথে?
কে আমাকে তােমার সাথে মিশিয়ে ফেলতে পারে এবং আমার উদ্দেশ্যকে তােমার
দিকে প্রবাহিত করতে পারে?
আমরা বুঝতে পেরেছি, পারিনি কি বুঝতে?
আমি কি উল্লেখ না করে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, তুমি কি গ্রহণ করনি?
কোন অধ্যয়ন যা শিক্ষা দিতে পারে না, কোন ধর্মোপদেশ যা সফল করতে পারে।
সেটা সফল হয়েছে, হয়নি কি?
[৯]
বয়ে যাও নদী, বয়ে যাও প্রবল জোয়ারের সাথে আর ভাটার টানে।
উচ্ছল, উচু, অর্ধবৃত্তাকার তরঙ্গমালা সূর্যাস্তের বর্ণোজ্জল মেঘমালা!
তােমার উজ্জ্বলতা দ্বারা প্রাবিত কর আমাকে এবং আমার পরের প্রজন্মের নারী পুরুষকে!
অগণিত যাত্রী পার হয় এক তীর হতে অন্য তীরে!
দণ্ডায়মান ম্যানহাটানের উচু মাস্তুল!
দণ্ডায়মান ব্রুকলিনের মনােরম পাহাড় শ্রেণি!
কম্পিত, দ্বিধাগ্রস্ত কৌতূহলী চেতনা, ছুঁড়ে ফেলে দাও জিজ্ঞাসা আর সমাধান!
অমীমাংসীতভাবে কেন রাখ এখানে, সমাধানের চিরন্তন তরী ভাসছে!
সবখানে সমাবেশে, রাজপথে কিংবা প্রতিটি বাড়ির দিকে প্রিয়, অপলক তৃষ্ণার্ত দৃষ্টি!
হে যুবকের কণ্ঠ, মুখরিত হও! মধুর স্বরে ডাকো আমায় ডাক নামে!
বেচে থাক পুরােনাে জীবনে! অভিনয় কর সেই ভূমিকায় যা ফিরে তাকায় ।
অভিনেতা ও অভিনেত্রীর পানে!
অভিনয় কর সেই পুরাতন ভূমিকায় যা ছােটো কিংবা বড়াে হয় মানুষের ইচ্ছাতে।।
ভেবে দেখ, তােমরা যারা এই কবিতা পড়, হয়তাে আমি অনুপস্থিত থেকেও।
তােমাদেরকে দেখি;
শক্ত হও, চল বেগবান স্রোতের সাথে, নদীর রেলিং রক্ষা করবে আলস্যে হেলান
দেয়া ব্যক্তিকে সাগরের পাখিরা উড়ে যাও! উড়ে যাও একপাশে, কিংবা
চক্রাকারে উড়ে আকাশে;
তােমার জলরাশিতে প্রতিফলিত হবে গ্রীষ্মের আকাশ, ধরে রাখ শক্ত করে ইহাকে
যতক্ষণ সকল নমিত দৃষ্টি তোমার থেকে ফিরিয়ে না নেয়!
ছড়িয়ে দাও ঝলমল আলােক বলয় রৌদ্রালােকিত জলে, আমার কিংবা অন্য কারাে।
মাথার ছায়া থেকে!
নিম্ন উপসাগর হতে সাদা পাল তুলে ছােটো, বড়াে আর মাল খালাসকারী
জাহাজগুলাের আসা যাওয়া!
ঊর্ধ্বে তােলাে সকল জাতির পতাকা! নামাও যথাযথভাবে সূর্যাস্তে! জ্বালাও তােমার।
ঢালাই কারখানার চিমনি! রাতে ফেল তােমার কালাে ছায়া, গৃহগুলাের চূড়ায়
ফেল হলুদ রক্তিম আলাে! বর্তমান কিংবা ভবিষ্যতে এসবের আবির্ভাব।
ফুটিয়ে তুলবে তােমার রূপ,
সবসময় তুমি প্রয়ােজনে আচ্ছাদিত কর আত্মাকে,
আমার এবং তােমার শরীরে চারপাশে আমাদের জন্যে ছড়িয়ে দেওয়া হােক স্বর্গীয়
সৌরভ,
সমদ্ধ কর নগরীকে—আনাে তােমার মালবাহী জাহাজ, দেখাও তােমার ঐশ্বর্য, হে
বিশাল জলরাশি,
প্রসারিত কর তােমার সত্তাকে, যা থেকে কোনাে কিছুই নয় অধিক আলৌকিক,
রাখ ঐশ্বর্যগুলাে তােমার নিকট যা থেকে কোনাে কিছুই অধিক টেকসই নয়।।
তুমি অপেক্ষা করেছ, তুমি সব সময় অপেক্ষা কর, তুমি নীরব অপরূপ যাজক।
অবশেষে মুক্ত চেতনা আমরা তােমাকে গ্রহণ করি, আমরা এখন থেকে চির অতৃপ্ত।
তুমি আমাদেরকে আর নিরাশ করতে পারবে না, কিংবা লুকাইতেও পারবে না। নিজেকে,
আমরা তােমাকে কাজে লাগাই, পরিত্যাগ করি না—গেঁথে রাখি আমাদের মাঝে।
চিরস্থায়ীভাবে,
আমরা তােমার শেষ তলানি খুঁজিনি, আমরা তােমাকে ভালােবাসি, তােমার মাঝেও |
পূর্ণতা আছে,
তমি সাজিও তােমার অংশগুলােকে অনন্ত জীবনের জন
ছােটো কিংবা বড়ড়া, তুমি সাজাও তােমার অংশগুলােকে আত্মার পরিপূর্ণতায়।
crossing brooklyn ferry summary in bangla
কবি Walt Whitman তাঁর বিখ্যাত কবিতা Crossing Brooklyn Ferry এর মাধ্যমে পানি ও স্থলভাগের প্রতীকী উপস্থাপনা দ্বারা এই বিশ্বজগতের দ্বিতত্তবাদ (Dualism) ফুটিয়ে তুলেছেন। এই কবিতাটির মূল চিত্রকল্প হচ্ছে ফেরি যা স্থান ও সময়ের সার্বজনীন গতির প্রতীক এবং যা অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের আরােহণকারী সকল নারি-পুরুষের আত্মিক একতার প্রতীক।
কবিতার প্রথমেই কবি জোয়ার, মেঘ, সূর্য ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদানগুলাের কথা উল্লেখ করেছেন এবং তাদেরকে কবি মুখােমুখি প্রত্যক্ষ করছেন। সাধারণ পােশাকের নারি-পুরুষের ভিড় এবং নদী পারাপারের দৃশ্যগুলাের সাথে প্রাকৃতিক উপাদানগুলাে মিশে কবির মনে এক আধ্যাত্মিক ভাবের সৃষ্টি হয়েছে।
দ্বিতীয় অংশে কবি এই বিশ্বজগৎকে সুবিন্যস্ত, সুগঠিত ও সুসংযুক্ত মহাপরিকল্পনা বলে উল্লেখ করেছেন যেখানে সবাই বিচ্ছিন্ন হয়েও সংযুক্ত। কবি নিজেকে জন্ম-জীবন- মৃত্যুর চিরন্তন প্রক্রিয়া ও বিপুল জনগােষ্ঠীর অংশ মনে করেন। হাজার বছর পরেও যারা নদীটি পার হবে তাঁদের সাথে নিজেকে অভিন্ন ভাবতে চান এবং ব্রুকলিন ফেরির মাধ্যমেই এই সম্পর্ক স্থাপন করতে চান।
Download This Poem Bangla Summery
Others Poem Bangla Summery
উপরে দেয়া লিংকে ক্লিক করে crossing brooklyn ferry summary in bangla সারাংশ PDF ফাইলে ডাউনলোড করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post