ডিজিটাল প্রযুক্তি ৭ম শ্রেণি শিখন অভিজ্ঞতা ২ সেশন ১ : ষষ্ঠ শ্রেণিতে আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ ও স্বত্বাধিকারীর অধিকার সম্পর্কে জানতে পেরেছি। কিন্তু যখন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক কাজে অন্য কাউকে নিজের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ আমরা ব্যবহার করতে দেব, আমাদের কিছু নীতিমালা তৈরি করে নেওয়া উচিত। এর ফলে কেউ আমাদের এই বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ অপব্যবহার করতে পারবে না।
তুমি কি মৈমনসিংহ গীতিকার নাম শুনেছ? এটি একটি সংকলনগ্রন্থ, যাতে ময়মনসিংহ অঞ্চলের পালাগান লিপিবদ্ধ করা আছে। এই পালাগানগুলো প্রাচীনকাল থেকে মানুষের মুখে মুখে প্রচারিত হয়ে আসছিল ময়মনসিংহ অঞ্চলে।
ডিজিটাল প্রযুক্তি ৭ম শ্রেণি শিখন অভিজ্ঞতা ২ সেশন ১
এই বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ প্রথমে চন্দ্রকুমার সাহা সংগ্রহ করা শুরু করেন। এরপর ড. দীনেশ চন্দ্র সেন সবগুলো পালাগান একত্র করে সম্পাদনা করেন ও গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেন। যদি এই কাজ না করা হতো তাহলে আজ হয়তো আমরা এই অসাধারণ সংকলন পেতাম না।
কেমন হয় যদি আমরা নিজেরাই আমাদের এলাকায় কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদকে যথাযথভাবে বাণিজ্যিক ব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে পারি? এই শিখন অভিজ্ঞতায় আমরা সেটা করার চেষ্টা করব।
ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক কাজে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের ব্যবহার
হাসির বাবা আফজাল হোসেনের একটি দই তৈরির কারখানা আছে। এই কারখানায় তৈরি দই বাজারে “হাসি দই’ নামে বিক্রি হয়। আজ হাসি এই দই কিনে হঠাৎ অবাক হয়ে আবিষ্কার করে দইয়ের স্বাদ অন্যরকম লাগছে। ভালো করে প্যাকেট লক্ষ্য করে দেখল সেখানে “হাসি দই” এর পরিবর্তে ‘হাস দই’ লেখা । অথচ প্যাকেট দেখতে একই রকম, একই রং, একই সাইজ, লেখার ফন্টও একই রকম, সবকিছুই মিল আছে, শুধু ‘হাসি”্র জায়গায় “হাস” লেখা।
সেটা খুব ভালো করে খেয়াল না করলে হঠাৎ বোঝার উপায় নেই এটা যে হাসি দই না! হাসি খুব চিন্তিত হয়ে বাবার কাছে গিয়ে প্যাকেট দেখিয়ে পুরো ঘটনা খুলে বলল। আফজাল হোসেন সবকিছু শুনে বললেন, তোমাকে অনেক ধন্যবাদ হাসি এই ব্যাপারটি লক্ষ্য করার জন্য।
তবে আমাদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আমাদের হাসি দইয়ের স্বাদ অন্য দইয়ের তুলনায় আলাদা, তার কারণ, এই দই তৈরির ফরুলা আমার উদ্ভাবন করা এবং সেটি বেশ আলাদা অন্যগুলোর তুলনায়।
এ কারণে এই দই তৈরির কৌশল বা ফমুলা একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ । যারা আমাদের কোম্পানির দই নকল করে প্রায় হুবহু একই নামে বাজারে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
যেহেতু আমাদের ট্রেডমার্ক করা আছে, তাই যারা আমাদের এই বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ নকল করে বাণিজ্যিকভাবে ছেড়েছে, তাদের অবশ্যই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ও বাণিজ্যিকভাবে এই পণ্য বাজারে বিক্রি করা বন্ধ করতে হবে। হাসি এখন একটু দুশ্চিন্তামুক্ত হলো।
উপরের গল্পে আমরা দেখতে পাচ্ছি, আফজাল হোসেন একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ তৈরি করেছেন। তিনি যেই ফর্মুলা ব্যবহার করে হাসি দই তৈরি করেছেন, সেটি অন্য দইয়ের ফর্মুলা থেকে ভিন্ন। তাই এটি একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ। এরপর তিনি এটি বাজারজাত করেছেন।
বাজার থেকে যারা হাসি দই কিনছে, তারা কিন্ত শুধু পণ্য হিসেবে ব্যক্তিগত কাজে এটি কিনছে। অর্থাৎ এই দই কেনার সময় তারা দইটি শুধু খাবার অধিকার পাচ্ছেন। এক্ষেত্রে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার হচ্ছে।
ব্যক্তিগত কাজে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ নির্দিষ্ট টাকা দিয়ে কেনার সময় পণ্যটি একজন মানুষ ব্যবহারের সুযোগ পেলেও সেটি বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের অধিকার পান না। অন্যদিকে অন্য একটি প্রতিষ্ঠান যারা প্রায় হুবহু হাসি দইয়ের আদলে বাজারে হাস দই ছেড়েছেন তারা পণ্যটিকে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করছেন।
বাণিজ্যিক কাজে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ ব্যবহার করতে গেলে অবশ্যই বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদটির যিনি স্বত্বাধিকারী তার থেকে যথাযথ আনুষ্ঠানিক অনুমতি নিয়ে, তার সঙ্গে চুক্তিপত্র করে তবেই বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা যাবে।
মূল বইয়ের অনুশীলনীর সমাধান
ক. মিজান একটি বিখ্যাত বাংলা সিনেমা দেখার জন্য একটি ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করল। সেখানে নির্দিষ্ট ফি পরিশোধ করে তাদের গ্রাহক হলো। কিন্তু ওই ওয়েবসাইটে সিনেমাটি দেখানোর সিনেমার প্রযোজকের কাছ থেকে অনুমতি গ্রহণ করা হয়নি। মিজান এখন খুশি মনে পছন্দের সিনেমা দেখছে।
সিদ্ধান্ত: মিজান ব্যক্তিগত কাজে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ ব্যবহার করছে। কিন্তু ওয়েবসাইটটি সিনেমাটি প্রদর্শনের অনুমতি না নিয়েই তাদের প্ল্যাটফর্মে বাণিজ্যিক কাজে সেটি ব্যবহার করছে। কাজেই তারা নিয়ম মানছে না ও সিনেমার প্রযোজক ওয়েবসাইটের সত্বাধিকারীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।
খ. মিতু প্রয়োজনীয় একটি সফটওয়্যার অনলাইনে খুঁজতে গিয়ে দেখল ৫০ টাকা দিয়ে সফটওয়্যারটি তৈরিকারক কোম্পানি থেকে লাইসেস কিনে নিতে হবে। মিতুর বন্ধু হেনা বলল, আমার কাছেই সফটওয়্যারটি আছে, কেনার কোনো প্রয়োজন নেই, তুই আমার থেকে সফটওয়্যারটি কপি করে নিস। মিতু বলল এটা একদম উচিত হবে না। সফটওয়্যারটি কেনার যথাযথ ওয়েবসাইটে গিয়ে সেটির লাইসেন্স কিনে নিয়ে মিতু এখন ব্যবহার করছে।
সিদ্ধান্ত: সফটওয়্যার একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ। তাই কোন সফটওয়্যার ব্যবহারের আগে অবশ্যই প্রস্তুকারক বা প্রস্তুকারক প্রতিষ্ঠানের অনুমতি নিতে হবে। হেনা প্রথমে সফটওয়্যারটির লাইসেন্স কিনে ব্যবহার করলেও তার বন্ধু মিতুকে লাইসেন্স না কেনার জন্য বলে। কাজেই এটি একটি অবৈধ কাজ। লাইসেন্স ব্যতিত কখনোই সফটওয়্যার ব্যবহার করা উচিৎ না। তাই মিতু যেহেতু লাইসেন্স কিনেই সফটওয়্যারটির ব্যবহার শুরু করেছে, তাই সে সঠিক কাজটিই করেছে।
গ. একটি বিখ্যাত কোমল পানীয় তৈরির কোম্পানি তাদের ফমুলা বাংলাদেশের একটি বাজারজাতকরণ কোম্পানির কাছে চুক্তিবদ্ধ হয়ে প্রদান করল। কিন্তু অন্য আরও একটি কোম্পানি সেই একই কোমল পানীয়র নামে বাজারে পণ্য বিক্রি শুরু করল। তখন যে কোম্পানি এই ফলা কিনে নিয়েছিল, তারা আদালতের দ্বারস্থ হলো।
সিদ্ধান্ত: একটি কোম্পানি যখন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে তাদের পণ্য বাজারজাত করে, তখন তারা তাদের নিবন্ধিত নাম ব্যবহার করে। আর অন্য কেউ নিবন্ধিত কোম্পানির নাম হুবহু বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করতে পারে না । এতে নিবন্ধিত কোম্পানির অধিকার বা স্বত্ব ক্ষুন্ন হয়। এক্ষেত্রে অপর কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত কোম্পানীর নামে পণ্য বাজারজাত করতে চাইলে অবশ্যই অনুমতি নিতে হবে। অন্যথ্যায় নিবন্ধিত কোম্পানি চাইলে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
ঘ. রায়হান একটি ভ্রমণবিষয়ক বই লিখেছে নিজের বিভিন্ন পরিদর্শন করা স্থানের অভিজ্ঞতা নিয়ে। রায়হান একটি প্রকাশক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে মেধাস্বত্ব পাবার শর্তে বইটি প্রকাশের অনুমতি দিয়েছে। সেই প্রতিষ্ঠান এই বছর বইমেলায় বইটি প্রকাশ করেছে ও বইটি পাঠকদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে।
সিদ্ধান্ত: বই একটি মেধাবৃত্তিক সম্পদ। যা একজন লেখক তার মেধা ব্যয় করে লিখে থাকেন। তাই কোন বই যদি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বাজারজাত করা হয়, তাহলে অবশ্যই লেখকের অনুমতি নিতে হবে এবং তাকে মেধাস্বত্ব দিতে হবে। তাই রায়হানের ভ্রমণবিষয়ক বইটি বইমেলায় প্রকাশ করে উক্ত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটি যথাযথ কাজ করেছে।
আরো দেখো: ডিজিটাল প্রযুক্তি সবগুলো অধ্যায়ের উত্তর
সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, ওপরে দেওয়া Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে তোমার ডিজিটাল প্রযুক্তি ৭ম শ্রেণি শিখন অভিজ্ঞতা ২ সেশন ১ উত্তর সংগ্রহ করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post