ডিজিটাল প্রযুক্তি ৭ম শ্রেণি শিখন অভিজ্ঞতা ২ সেশন ২ : আমরা আগের সেশনে পড়া গল্পে জেনেছিলাম বাণিজ্যিক কাজে হাসি দইয়ের অপব্যবহারের কারণে আফজাল হোসেন আদালতে মামলা করে ক্ষতিপূরণ দাবি করার কথা ভাবছেন।
তবে আফজাল হোসেন ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারতেন না যদি তার ট্রেডমার্ক না করা থাকত। আমরা এর আগে ষষ্ঠ শ্রেণিতে কপিরাইট ও পেটেন্ট সম্পর্কে জেনেছিলাম। কিন্তু ট্রেডমার্ক জিনিসটা কী?
ডিজিটাল প্রযুক্তি ৭ম শ্রেণি শিখন অভিজ্ঞতা ২ সেশন ২
ট্রেডমার্ক কী?
উত্তর: ট্রেডমার্ক হল কোন এক স্বতন্ত্র প্রতীক বা লোগো বা নাম বা সেøাগান যেটি দিয়ে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদকে একই ধরনের অন্য কোন বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ থেকে পার্থক্য করা যায়।
একটি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদকে বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করার সময় তাদের সেই সম্পদের জন্য নির্দিষ্ট ট্রেডমার্ক নিবন্ধন করেন। ফলে অন্য কেউ চাইলেই ইচ্ছেমতো তার সেই বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ নকল করে বাজারজাত করতে পারে না।
এর ফলে স্বত্বীধিকারীর অধিকার সংরক্ষিত হয় ও অন্য কেউ তার বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের অপব্যবহার করতে গেলে তিনি আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন। বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (World Trade Organization বা WTO) -এর একটি সদস্য দেশ। তাই এই সংস্থার করে দেওয়া নিয়ম অনুসরণ করে বাংলাদেশে ট্রেডমার্ক নিবন্ধনের সুযোগ আছে।
স্বত্বাধিকারীর অধিকার সংরক্ষণ
এক্ষেত্রে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের ট্রেডমার্ক নিবন্ধনের জন্য ৫ টি ধাপ অনুসরণ করতে হয়-
ক) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে ট্রেডমার্ক নিবন্ধনের আবেদন ফর্ম সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে সেটি প্রথমে পূরণ করতে হয়। এই ফর্মে বিস্তারিত জানাতে হয় কেন এই বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের স্বত্বাধিকারী হিসেবে ট্রেডমার্ক নিবন্ধন করতে চাচ্ছি আমরা।
খ. অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা আবেদনটি যাচাই-বাছাই করবেন যে সম্পদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেটি আসলেই একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ কি না, সম্পদটি ট্রেডমার্ক পাবার যোগ্য কি না, একই রকম অন্য বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের সঙ্গে এই ট্রেডমার্ক হুবহু মিলে যাচ্ছে কি না ইত্যাদি।
গ, অধিদপ্তর আবেদনটি গ্রহণযোগ্য হিসাবে পেলে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেবে ও অন্য কোনো একই ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের ট্রেডমার্ক ধারণকারী কোনো স্বত্বীধিকারীর এই নতুন ট্রেডমার্কের ব্যাপারে আপত্তি আছে কি না, সেটি জানতে দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।
ঘ. অন্য কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের স্বত্বাধিকারী নিজের ট্রেডমার্কের সঙ্গে নতুন ট্রেডমার্কের মিল খুঁজে পান, তাহলে তিনি নিজের আপত্তি জানাতে পারেন। এ জন্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে আবেদন ফর্ম পূরণ করে তাকে জমা দিতে হয়। এ সময় তিনি যুক্তি প্রদান করেন, কেন নতুন ট্রেডমার্কটি গ্রহণযোগ্য হবে না। এরপর অধিদপ্তর দুই পক্ষের সকল যুক্তি বিবেচনা করে এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেন।
ঙ. সবশেষে যদি অধিদপ্তর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় যে আবেদনকারীকে এই ট্রেডমার্ক প্রদান করা হবে, তাহলে ট্রেডমার্কের নিবন্ধন সম্পন্ন হয়। নিবন্ধিত হবার প্রমাণপত্র হিসেবে একটি ট্রেডমার্ক সনদ এ স্বত্বাধিকারীর নামে প্রদান করা হয়।
আমরা এই শিখন অভিজ্ঞতার একদম শেষে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদকে যথাযথভাবে বাণিজ্যিক ব্যবহারের উপযোগী করতে যাচ্ছি তাই না? এবারে একটি কাজ করি। সেই বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের জন্য মনের কল্পনা থেকে ট্রেডমার্ক হিসেবে কোনো লোগো বা ছবি বা ডিজাইন পরের পৃষ্ঠায় এঁকে ফেলি-
মূল বইয়ের অনুশীলনীর সমাধান
আবেদনকারীর নাম: সাইফুল ইসলাম।
জাতীয়তা: বাংলাদেশী
ঠিকানা: মিরপুর, ঢাকা।
মোবাইল নম্বর: ০১৭——–
ইমেইল: saifulislam@gmail.com
পণ্যের বিবরণ: আমাদের কোম্পানির নাম হচ্ছে ‘টেস্টি ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড’। আমরা বিভিন্ন প্রকার খাদ্য সামগ্রী তৈরি করে থাকি। আমের শরবত তার মধ্যে অন্যতম। উল্লেখিত ডিজাইনটি আমাদের প্রস্তুতকৃত একটি ম্যাঙ্গো-জুসের লোগো।
স্বাক্ষর ও তারিখ: সাইফুল ইসলাম, ৩ মার্চ, ২০২২
আগামী সেশনের প্রস্তুতি
বাংলাদেশ বা বিশ্বে ট্রেডমার্কের ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অপব্যবহারের ফলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কোম্পানি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। পত্রপত্রিকা বা অনলাইন সংবাদ মাধ্যম থেকে আমরা এ রকম কিছু ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করি পরের সেশনের জন্য। পাশাপাশি এই ঘটনাগুলোর কোনটি বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের ক্ষেত্রে হয়েছে ও কোনটি বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের ক্ষেত্রে হয়েছে সেটিও ভাবি।
বাংলাদেশ বা বিশ্বে ট্রেডমার্কের ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অপব্যবহার সম্পর্কিত কিছু সংবাদ:
১. কপিরাইট আইনে মামলা করলেন জেমস
কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা করেছেন শীর্ষ সংগীত তারকা জেমস। বুধবার (১০ নভেম্বর) ঢাকার নিম্ন আদালত মামলাটি গ্রহণ করেন। এ মামলায় সমন জারি করে বাংলালিংক কর্তৃপক্ষকে হাজির হতে আদেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালত। সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আদালতে গিয়ে মামলার আবেদন করেন রকস্টার জেমস। তাপস কুমার পাল জানান, ‘জেমস বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী। তার অসংখ্য জনপ্রিয় গান আছে। তার কাছ থেকে কোনো ধরনের অনুমতি না নিয়েই জেমসের গান বাংলালিংক তাদের ওয়েলকাম টিউন, বিজ্ঞাপনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যবহার করে আসছে। বাংলালিংকের এই কর্মকাণ্ড কপিরাইট আইন ভঙ্গের সামিল। এ কারণে তিনি মামলা করছেন।’ সূত্র: দৈনিক ইনকিলাব।
কপিরাইটের অপব্যবহার: আলোচ্য সংবাদে দেখা যাচ্ছে যে বিখ্যাত শিল্পী জেমসের গান তার অনুমতি ছাড়াই বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে বাংলালিংক নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এর ফলে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন শিল্পী জেমস।
২. মেটার বিরুদ্ধে ট্রেডমার্ক মামলা ঠুকে দিল মেটাএক্স
ফেসবুকের প্যারেন্ট কোম্পানি মেটা প্লাটফর্মস ইনকরপোরেটেডের বিরুদ্ধে ট্রেডমার্ক লঙ্ঘনসংক্রান্ত মামলা ঠুকে দিয়েছে ভার্চুয়াল-রিয়ালিটি সেবাদাতা কোম্পানি মেটাএক্স এলএলসি। তাদের অভিযোগ ফৌজদারি ট্রেডমার্ক নীতিমালা লঙ্ঘন করে ‘মেটা’ শব্দটি ব্যবহার করছে ফেসবুকের মূল কোম্পানি। আর্থিক ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠানের পণ্য ও সেবায় মেটা নামটির ব্যবহার বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করেছে ভার্চুয়াল রিয়ালিটি কোম্পানিটি। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সূত্র: বণিকবার্তা
ট্রেডমার্কের অপব্যবহার: আলোচ্য সংবাদে দেখা যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক তাদের কোম্পানির নামের সাথে ‘মেটা শব্দটি যুক্ত করেছে, যা বাজারে বিদ্যমান অপর একটি কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব করে। এর ফলে মেটাএক্স নামের উক্ত কোম্পানি অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান ফেসবুকের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
আরো দেখো: ডিজিটাল প্রযুক্তি সবগুলো অধ্যায়ের উত্তর
সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, ওপরে দেওয়া Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে তোমার ডিজিটাল প্রযুক্তি ৭ম শ্রেণি শিখন অভিজ্ঞতা ২ সেশন ২ উত্তর সংগ্রহ করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post