গুগল এ্যাডসেন্স এ্যাপ্রুভ করাতে না পেরে আমরা গুগলের চৌদ্দগুষ্ঠি তো কম উদ্ধার করি না। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছি আমাদের এ্যাডসেন্স কেন এপ্রুভ হয় না? কেনই বা আমাদের ওয়েবসাইটে, এ্যাপে বা ইউটিউব চ্যানেলে কি সমস্যা থাকায় গুগল আমাদের এ্যাডসেন্স আবেদন গ্রহণ করছে না?
এ্যাডসেন্স না পাওয়াটা সত্যিই খুব কষ্টের। আমরা অনেকেই অনেক চেষ্টা করেও অনেক সময় একটি এ্যাডসেন্স পেতে ব্যর্থ হই। কিন্তু কেন? কোর্সটিকায় আজ আমরা এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজবো। পাশাপাশি এ্যাডসেন্স সমস্যার যাবতীয় গ্রহণযোগ্য সমাধান জানার চেষ্টা করবো। তাহলে চলুন, শুরু করি।
►► আরো দেখুন: গুগল এ্যাডসেন্স কত প্রকার?
►► আরো দেখুন: গুগল এ্যাডসেন্স কেন এ্যাপ্রুভ হয় না? কারণটা কি?
►► আরো দেখুন: এ্যাডসেন্সে এ্যাড লিমিট কেন হয়? জানা আছে কি?
►► আরো দেখুন: এ্যাডসেন্স এ্যাড ইউনিট: সর্বোচ্চ কয়টি এ্যাড ইউনিট বসাতে পারবেন?
►► আরো দেখুন: গুগল এ্যাডসেন্স নিয়ে কমন কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
►► আরো দেখুন: Adsense Ad Placements: কোথায় Ad বসাবেন, কোথায় বসাবেন না?
►► আরো দেখুন: সেরা ১০ টি এ্যাড নেটওয়ার্ক : এ্যাডসেন্সসহ আরো অনেক
প্রথম দিকে গুগল যখন বাংলা আর্টিকেলকে এ্যাডসেন্সের আওতায় নিয়ে আসে তখন এ্যাডসেন্স পাওয়া খুবই সহজ ছিল। এক কথায় সাবমিট দিলেই কাজ হয়ে যেত। কিন্তু বর্তমানে এ্যাডসেন্স পাওয়াটা অনেক কঠিন। আর সময় যত যাচ্ছে, গুগলের এ্যাডসেন্স নীতিমালা আরো কঠোর হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে যে কঠোর থেকে কঠোরতর হবে, তা আর বলার অপেক্ষার রাখে না।
বিভিন্ন কারণ যেমন: কপি-পেস্ট কনটেন্ট, অপ্রয়োজনীয় টপিক, ওয়েবসাইটের করুণ দশা এবং গুগল এ্যাডসেন্সের পলিসি লঙ্ঘণের কারণে একটি এ্যাডসেন্সের আবেদন প্রত্যাখ্যান হতে পারে। আপনি গুগল এ্যাডসেন্স পাচ্ছেন না, এর জন্য এতগুলো কারণের দরকার নেই। যেকোন একটি সমস্যা থাকলেই আপনি আপনার ওয়েবসাইটের জন্য কাঙ্খিত এ্যাডসেন্স পেতে ব্যর্থ হবেন।
আর ঠিক এজন্যই এ্যাডসেন্স এখন অনেকটা সোনার হরিণের মতো অধরা একটি বিষয়। কিন্তু সোনার হরিণ যেমন অসম্ভব কোন বস্তু, গুগল এ্যাডসেন্স কিন্তু একেবারেই তা নয়। আপনি যদি গুগলের গাইডলাইন সঠিকভাবে মেনে চলতে পারেন, তাহলে একটি এ্যাডসেন্স হতে পারে আপনার জন্যও। একটি ওয়েবসাইটের এ্যাডসেন্স আবেদন বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক কারণে রিফিউজড হতে পারে। আমরা সেই বিষয়গুলো পয়েন্ট আকারে নিচে তুলে ধরছি।
১. গুগলের নীতিমালা না মানা
একটি এ্যাডসেন্স পেতে হলে আপনাকে আপনার পছন্দমত নয়, বরং গুগলের পছন্দমত সাইট তৈরি করতে হবে। আর গুগলের পছন্দমত সাইট তৈরি করতে হলে আপনাকে অবশ্যই তাদের নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। তা না হলে এ্যাডসেন্সের মায়া আজীবনের জন্য ছেড়ে দিতে হবে। এ্যাডসেন্সের জন্য গুগলের প্রধান নীতিমালাগুলোর কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলো।
- সাইটের ডিজাইন: আপনার ওয়েবসাইটের ডিজাইন অবশ্যই প্রফেশনাল হতে হবে। দেখতে যেনতেন ওয়েবসাইটে গুগল কখনোই এডসেন্স দেয় না। তাই ওয়েবসাইটটি চমৎকার করে সাজান।
- রঙ নির্ধারণে সচেষ্ট হোন: আপনার ওয়েবসাইটে যে রঙ ব্যবহার করবেন, তা যেন অবশ্যই দৃষ্টি নন্দন হয়। এমন রঙ যা চোখে বাজে লাগে বা দৃষ্টিকটু লাগে তা ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। বিশেষ করে ওয়েবসাইটের কনটেন্ট পড়তে অসুবিধা হয় এমন রঙ সর্বদাই পরিত্যাগ করুন।
- নেভিগেশন মেনু: ওয়েবসাইটের নেভিগেশন বা মেনুবার পরিচ্ছন্ন এবং নির্ঝঞ্ঝাট রাখুন। মেনুবার এমনভাবে সাজান, যাতে করে একজন ভিজিটর খুব সহজেই আপনার ওয়েবসাইটের পেজগুলো নেভিগেট করতে পারে।
২. মৌলিক কনটেন্ট না থাকা
গুগল ইউনিক বা মৌলিক কনটেন্টকে পাগলের মতো ভালোবাসে। আর সত্যিকার অর্থেই মৌলিকতাকে কে না ভালোবাসে? আপনার ওয়েবসাইটে এমন সব কনটেন্ট রয়েছে, যা ইতোমধ্যে আরো হাজার হাজার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে, সেক্ষেত্রে গুগল আপনাকে কখনোই এ্যাডসেন্স দেবে না।
কপি-পোস্টের প্রশ্নে গুগল খুবই কঠোর। যদি আপনি কারো কোন লেখা ফেয়ার ইউজের জন্য হুবহু ব্যবহার করেন, তাহলে লেখকের ক্রেডিট দিন। আর যদি ফেয়ার ইউজের জন্য না হয়, তাহলে লেখকের অনুমতি নিন। এ ধরনের কপি-পেস্ট গ্রহণযোগ্য হলেও মূল লেখকের এট্রিবিউট লিংকিং অবশ্যই দিতে হবে।
অন্য ওয়েবসাইট থেকে কপি-পেস্ট তো নয়ই বরং নিজে যা লিখবেন তার মধ্যেও সর্বদা মৌলিকতা বজায় রাখুন। আপনি যতই ইউনিক কনটেন্ট লিখবেন, আপনার ওয়েবসাইটের প্রতি মানুষের আগ্রহ তত বাড়বে। এটাই হবে আপনার ওয়েবসাইটের সার্থকতা।
বর্তমানে অনলাইনে অনেক টুল পাওয়া যায়, যেগুলো থেকে আপনি আপনার লেখার নকল বা প্লেজারিজম পরীক্ষা করতে পারেন। এমন একটি জনপ্রিয় টুল হচ্ছে Plagiarism Checker । এর মাধ্যমে আপনি আপনার কনটেন্টের কতটুকু অংশ নিজে লিখেছেন এবং কতটুকু অংশ অন্য ওয়েবসাইট থেকে কপি করেছেন, তা চেক করতে পারবেন। প্রতিটি আর্টিকেল লেখা শেষে এমন একটি টুল ব্যবহার করুন।
৩. আর্টিকেল দীর্ঘ না করা
মৌলিক আর্টিকেলের পাশাপাশি দীর্ঘ বা বড় আর্টিকেল গুগলের পছন্দের আরেকটি জায়গা। আপনি যদি ৩০০-৪০০ ওয়ার্ডের আর্টিকেল লিখে গুগল এ্যাডসেন্স পেতে চান, তাহলে ধরে নিন এডসেন্স আপনার জন্য না। এ্যাডসেন্স পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই দীর্ঘ আর্টিকেল লিখতে হবে। অন্ততপক্ষে এ্যাডসেন্স পাওয়ার আগে আপনার প্রতিটি আর্টিকেল ১২০০ / ১৫০০ / ২০০০ অথবা এর বেশি ওয়ার্ডের লিখতে হবে।
বড় আর্টিকেলের সাথে সাথে আপনার লেখাকে আরো বেশি তথ্যবহুল ও ব্যাখামূলক করতে হবে। এর ফলে আপনার লেখার সাথে পাঠক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পাবে। দীর্ঘ কনটেন্টের আরো একটি বড় গুণ হচ্ছে এগুলো এসইও ফ্রেন্ডলি। অর্থাৎ, আপনার আর্টিকেল যত বড় হবে, আপনার ওয়েবসাইট গুগলে তত র্যাঙ্ক পাবে।
৪. কপিরাইট কনটেন্ট ব্যবহার করা
কপিরাইট শব্দটি শুধুমাত্র ওয়েবসাইটের লেখনীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আপনার ওয়েবসাইটের টেক্সট, ইমেজ, অডিও, ভিডিও এমনকি লিংকও এই কপিরাইটের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং এ সবকিছুতেই কপিরাইট লঙ্ঘণ হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
এমন কোন ছবি যা আপনার নয়, তা আপনি আপনার ওয়েবসাইটে ব্যবহার করতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, অন্যের লেখা বই যা তার কপিরাইটের আওতায় আছে, তার পিডিএফ শেয়ার করতে পারবেন না। এমনকি কপিরাইট করা এলিমেন্টের লিংকও ফ্রিতে আপনি আপনার ওয়েবসাইটে প্রদর্শন করাতে পারবেন না।
গুগল কপিরাইটের বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সাথে দেখে। টেক্সট থেকে শুরু করে অডিও, ভিডিও বা ইমেজ কোন ক্ষেত্রেই কপিরইটেড কনটেন্ট ব্যবহার করবেন না।
৫. ওয়েবসাইট ধীরগতিতে লোড হওয়া
আপনার ওয়েবসাইট কি খুব ধীরগতিতে লোড হয়? যদি উত্তর হয় হ্যাঁ, তাহলে ধরে নিন এটি আপনার এডসেন্স না পাওয়ার অন্যতম একটি প্রধান কারণ। বেশ কিছু কারণে একটি ওয়েবসাইট কমগতিতে লোড হয়ে থাকে। যেমন অতিরিক্ত পপআপ ব্যবার করা, কনটেন্টে অতিরিক্ত ইমেজ ব্যবহার করা অথবা নিম্নমানের হোস্টিং ব্যবহার করা।
যথন আপনি খুবই নিম্নমানের হোস্টিং ব্যবহার করবেন, আপনার ওয়েবসাইট অনেক স্লাে হয়ে যাবে। এর ফলে আপনার ওয়েবসাইটটি খুবই কম গতিতে লোডিং হবে। ধীরগতিতে লোড হওয়া ওয়েবসাইটে কোন ভিজিটরই প্রবেশ করতে চায় না। সুতরাং এসকল ওয়েবসাইটে গুগল বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে না। এছাড়া অপেক্ষাকৃত স্লো সাইট হওয়ায় গুগল সার্চে আপনার ওয়েবসাইটটি অনেক পিছিয়ে যাবে। ফলে আপনি অনেক বড় অংকের একটি ভিজিটর হারাবেন।
৬. বাধ্যতামূলক পাঁচটি পেজ না থাকা
আপনার ওয়েবসাইটের পরিচিতি এবং বৈশিষ্ট বহন করে এমন ৫ টি পেজ ওয়েবসাইটে যদি না থাকে, তাহলে আপনি এ্যাডসেন্স পাবেন না। এই গুরুত্বপূর্ণ পেজগুলা যথাক্রমে: About Us, Privacy Policy, Terms and Condition এবং Contact Us। গুগল এ্যাডসেন্স পেতে হলে এই পেজগুলো আপনাকে অবশ্যই তৈরি করতে হবে এবং যথাযথ তথ্য দিয়ে সাজাতে হবে।
এ্যাডসিভে আমরা বাধ্যতামূলক এই পাঁচটি পেজ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। প্রতিটি পেজের কাজ কি, কিভাবে সাজাবেন এবং কি কি তথ্য দেবেন, তার বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এই আর্টিকেলটি (আসছে) পড়ে সেই সম্পর্কে বিশদ জানুন।
৭. অতিরিক্ত পপআপ ব্যবহার করা
এ্যাডসিভে আপনি কোন কনটেন্ট পড়ছেন, এর মধ্যে যদি হঠাত কোন পপআপ চলে আসে, তাহলে সেটি খুবই বিরক্তিকর। তাই নয় কি? এটা শুধু আপনার আমার ক্ষেত্রে না, সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কেউই অতিরিক্ত পপআপ পছন্দ করে না।
আপনি যদি গুগলের কোন ওয়েবসাইট ব্রাউজ করেন, তাহলে দেখবেন গুগল তাদের কোন ওয়েবসাইটেই বিরক্তির এই পপআপ ব্যবহার করে না। সুতরাং গুগল এটি পছন্দও করে না। আপনার সাইটে যদি এরকম অতিরিক্ত কোন পপআপ থাকে, যা পাঠকের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে এখনি তা সরানো উদ্যোগ নিন।
সর্বদাই মনে রাখুন, এ্যাডসেন্স না পাওয়ার ক্ষেত্রে ১ টি মাত্র কারণই যথেষ্ট। তাই পপআপের এই বিষয়টিকে আপাতদৃষ্টিতে ছোট মনে হলেও এটি সংশোধন করুন। শুধু পপআপই নয়, ব্যবহারকারীর বিরক্তিবোধ হয়, ওয়েবসাইটে এমন কোন উপকরণই রাখা সমীচিন নয়।
৮. যথেষ্ট ট্রাফিক না থাকা
মনে করুন, আপনি এমন জায়গা দোকান দিলেন, যেখানো কোন লোক নেই। তাহলে আপনি আপনার দোকানের পণ্য কার কাছে বিক্রি করবেন? ঠিক একইভাবে গুগল এমন কোন ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দেবে না, যেই ওয়েবসাইটে পর্যাপ্ত ভিজিটর বা ট্রাফিক নেই। কারণ, গুগল তাদের বিজ্ঞাপনদাতাদের প্রচারের বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সাথে দেখে।
মোটামুটি রকম ইনকামের জন্য একটি ওয়েবসাইটে মাসে কমপক্ষে ৫০,০০০ ভিজিটর থাকা জরুরী। অন্ততপক্ষে আমরা আমাদের হিসেবে যা দেখেছি, তাতে করে অন্তত মাসিক ২৫,০০০ ট্রাফিক আপনার ওয়েবসাইটে না থাকলে সেটা কখনোই আপনাকে ভালো একটি ইনকাম এনে দেবে না। তাই আপনার ওয়েবসাইটে যথেষ্ট ভিজিটর থাকতে হবে। ভিজিটর যতই হোক না কেন, আপনাকে চেষ্টা করতে হবে প্রতিদিন গতকালের থেকে বেশি ভিজিটর নেয়ার।
আর এজন্য আপনাকে নির্দিষ্ট একটি টার্গেটে কাজ করতে হবে। কিভাবে ওয়েবসাইটের ভিজিটার বাড়াবেন আর কিভাবে গুগল থেকে আপনার ওয়েবসাইটের জন্য অর্গানিক ট্রাফিক নেবেন, আপনি তা কোর্সটিকায় জানতে পারেন। বাংলা আর্টিকেল র্যাঙ্ক করবেন যেভাবে – জেনে নিন টেকনিকগুলো এই আর্টিকেলটি ভালোভাবে অনুসরণ করুন। আপনার ওয়েবসাইটের ট্রাফিক আগের থেকে অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।
৯. ওয়েবসাইটের বয়স
আপনার ওয়েবসাইট কি শিশু? অর্থাৎ আপনার ওয়েবসাইটের বয়স কি ১৫ দিন অথবা ২-৩ মাস? তাহলে ধরে নেয়া যায় আপনার ওয়েবসাইটি এখনো শিশু অবস্থায় আছে। আরো কিছুটা সময় নিন এবং এটির বয়স বাড়তে দিন। গুগল প্রধানত নতুন ওয়েবসাইটকে এডসেন্স দেয় না।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় অনেকে ১০-১৫ দিন বয়সের ডোমেইন এ্যাডসেন্স এ্যাপ্রুভ করিয়ে ফেলেন। কিন্তু এই বিষয়গুলো একেবারেই মিরাকল। অর্থাৎ, এগুলো খুব একটা হয় না। তবে কখনো কখনো হয়। এডসেন্স পেতে হলে একটি ওয়েবসাইটের বয়স কমপক্ষে ছয় মাস থেকে এক বছর হওয়া বাঞ্চনীয়। তবে এর চেয়ে কম বয়সের ওয়েবসাইট যে এডসেন্স পায় না, বিষয়টা একদমই এমন নয়।
১০. এ্যাফিলিয়েট ও পর্নোগ্রাফি থাকা
অনেকেই ব্লগ বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এ্যাফিলিয়েট লিংক শেয়ার করেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে গুগল কখনোই একাধিক নেটওয়ার্ক সমর্থন করে না। আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইটে কোন প্রকার এফিলিয়েট লিংক শেয়ার করেন, তাহলে গুগল কখনোই আপনাকে এ্যাডসেন্স দেবে না।
আবার আপনি এ্যাডসেন্স পাওয়ার আগে এ্যাফিলিয়েট ব্যবহার করলেন না, কিন্তু এ্যাডসেন্স পাওয়ার পরে এ্যাফিলিয়েট শুরু করলেন, তাহলেও গুগল আপনার এক্টিভ এ্যাডসেন্স একাউন্টটি সাসপেন্ড করে দেবে। তাই এ্যাফিলিয়েট লিংক সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করতে হবে।
উল্লেখ্য, আপনার ওয়েবসাইটে কোন প্রকার পর্নোগ্রাফি থাকতে পারবে না। পর্নোগ্রাফিকে গুগল খুবই অপছন্দ করে। তাই পর্নোগ্রাফি সম্বলিত ছবি, ভিডিও, অডিও বা লিংক আপনার ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারবেন না। গুগল এ্যাডসেন্স টিম পরিচ্ছন্ন ইন্টারনেটের বিষয়ে খুবই তৎপর।
অন্যান্য কিছু কারণ
আপনার ওয়েবসাইটে এলকোহল বা মাদককে প্রচার করে এমন কনটেন্ট কোনমতেই রাখা যাবে না। যে কোন ধরনের মাদক এমনকি সিগারেটকে প্রোমোট করে এমন কোন ওয়েবসাইটকে গুগল এ্যাডসেন্স দেয় না। আপনার সামগ্রিক ওয়েবসাইট এই কেন্দ্রিক হতে পারবে না এবং নির্দিষ্ট কোন একটি আর্টিকেল বা কনটেন্টও মাদককে প্রচার করতে পারবে না।
শুধু তাই নয়, ধর্মীয় উগ্রতা ছড়ায়, জঙ্গীবাদকে সমর্থন করে কিংবা নির্দিষ্ট কোন জাতি বা গোষ্ঠিকে আক্রমণ করে এমন কোন লেখা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। মরণাস্ত্র বা যুদ্ধাস্ত্র সম্পর্কিত কোন পোস্ট যা মানুষকে উগ্রতার দিকে ঠেলে দেয়, এমন কনটেন্ট থেকে সর্বদা বিরত থাকতে হবে।
আপাতদৃষ্টিতে এগুলো খুবই ঠুনকো কারণ বলে আপনার মনে হতে পারে। কিন্তু গুগলের গাইডলাইন এবং নীতিমালা ভালো করে পড়ে দেখুন, এই বিষয়গুলো খুবই কঠোরতার সাথে উল্লেখ করা হয়েছে। যার সাথে সাথে এ্যাডসেন্স পূর্ববতী এবং পরবর্তী সময়কে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
কেন গুগলের নীতিমালা খুবই কঠিন?
এ্যাডসেন্স পেতে ব্যর্থ হয়ে আমরা অনেকেই গুগলের কঠোর নীতিমালাকে দোষারপ করি। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছি, গুগলের নীতিমালা এত কঠিন কেন? গুগল তাদের এ্যাড নেটওয়ার্ক ওয়েবসাইটগুলোকে সামাজিক এবং শিশুবান্ধব করার চেষ্টায় বদ্ধপরিকর। এ চেষ্টা এজন্য যে, গুগলকে কাছে যারা বিজ্ঞাপন দেয়, তারা যেন গুগলের বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্কে তাদের অর্থ ব্যয় করাকে নিরাপদ মনে করে।
ধরুন আপনি এমন একটি ওয়েবসাইট পরিচালনা করছেন, যেখান মাদক, অস্ত্র, ধর্মীয় উগ্রতা এবং অশ্লীলতাসহ নানা অসামাজিক ব্যাধীকে প্রচার করা হয়। গুগল যদি এমন একটি ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপনদাতাদের দেয়া বিজ্ঞাপন প্রচার করে, তাহলে উক্ত ব্রান্ডের মালিক এই বিষয়টিকে কখনোই ইতিবাচক দেখবেন না। ফলে তিনি গুগল ভিন্ন অন্য কোন বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্কে চলে যাবেন।
আপনার ওয়েবসাইটে যদি যথেষ্ট ভিজিটর না থাকে, তাহলে বিজ্ঞাপনদাতাদের বিজ্ঞানগুলোও যথেষ্ট প্রচার হবে না। এর ফলে বিজ্ঞাপন দেয়ার আসল উদ্দেশ্যই নষ্ট হয়ে যাবে। একজন বিজ্ঞাপনদাতা কখনোই এমন জায়গা তার পণ্যের বিজ্ঞাপন দেবেন না, যেখান থেকে তার ক্রেতা বা গ্রাহক আসার সম্ভাবনা নেই। এই বিষয়গুলো নিয়ে গুগল খুবই তৎপর।
শেষ কথা
গুগলের থেকে এ্যাডসেন্স রিকোয়েস্ট রিজেক্ট হওয়া অবশ্যই ভালো কোন অনুভূতি নয়। তবে একটি বিষয় মাথায় রাখুন, উচু গাছ থেকে আঙুর পাড়তে কষ্ট হলেও তার স্বাদ কিন্তু অসাধারণ। ঠিক একই ভাবে একটি গুগল এডসেন্স পেতে হলে আপনাকে ওপরোক্ত পরীক্ষাগুলোতে উত্তীর্ণ হতে হবে। এরপরে যখন এডসেন্স পাবেন এবং আপনার উপার্জন শুরু হয়ে যাবে, তখন তার সুফল ভোগ করতে পারবেন আজীবন।
কেন আপনার এডসেন্স এপ্রুভ হয় না, আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি সেই উত্তর পেয়েছেন এবং এর সমাধান সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন। সুতরাং আপনার এখন করণীয় কি? ওয়েবসাইটটি পরিষ্কার করুন এবং গুগলের এ্যাডসেন্স নীতিমালার কোন বিষয়গুলো আপনার ওয়েবসাইটে অনুপস্থিত, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন।
অনলাইনে আয়ের দীর্ঘমেয়াদী ইচ্ছা থাকলে এডসেন্স হতে পারে আপনার জন্য অন্যতম সেরা একটি মাধ্যম। আর গুগলের পলিসি মেনে ঠিকঠাকভাবে কাজ করলে এডসেন্স হতে পারে আপনার সোনার ডিম পারা হাঁস।
►► আরো দেখুন: গুগল এ্যাডসেন্স কত প্রকার?
►► আরো দেখুন: গুগল এ্যাডসেন্স কেন এ্যাপ্রুভ হয় না? কারণটা কি?
►► আরো দেখুন: এ্যাডসেন্সে এ্যাড লিমিট কেন হয়? জানা আছে কি?
►► আরো দেখুন: এ্যাডসেন্স এ্যাড ইউনিট: সর্বোচ্চ কয়টি এ্যাড ইউনিট বসাতে পারবেন?
►► আরো দেখুন: গুগল এ্যাডসেন্স নিয়ে কমন কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
►► আরো দেখুন: Adsense Ad Placements: কোথায় Ad বসাবেন, কোথায় বসাবেন না?
►► আরো দেখুন: সেরা ১০ টি এ্যাড নেটওয়ার্ক : এ্যাডসেন্সসহ আরো অনেক
আমরা আছি ইউটিউবেও। গুগল এ্যাডসেন্সের ওপর বাংলায় টিউটোরিয়াল ও আপডেট পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি Subscribe করতে পারেন এই লিংক থেকে।
Discussion about this post