তোলপাড় গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর শওকত ওসমান : মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের অত্যাচারের মাত্রা অনুধাবন করে একজন কিশোর কীভাবে তাদের প্রতিরোধ করার জন্যে সংকল্পবদ্ধ হয়— ‘তোলপাড়’ গল্পে তাই ব্যক্ত হয়েছে। গ্রামের ছেলে সাবু বাড়ির সামনের সড়কে শহর থেকে জীবন রক্ষার্থে পালিয়ে আসা হাজার হাজার মানুষ দেখে স্তম্ভিত হয়।
সে দেখতে পায় নারী, শিশু, বৃদ্ধ নির্বিশেষে সবাই শহর থেকে পালাচ্ছে। বাঙালিদেরকে পাকিস্তানিরা হত্যা করছে বলে জানা যায়। পুত্রবধূ ও শিশু-নাতি-নাতনিদের নিয়ে পলায়নপর এক বৃদ্ধ আক্ষেপ করে বলেন, ইসলামের নামে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করে সেই পাকবাহিনীর হাতে পুত্রদের হারাতে হলো। মানুষের প্রতি হানাদার বাহিনীর এই নিষ্ঠুরতা অনুভব করে কিশোর সাবু ক্ষুব্ধ হয়। পাকিস্তানিদের প্রতি তার ঘৃণা বাড়তে থাকে। তাদের মোকাবিলা করার জন্যে তার কিশোর মন চঞ্চল হয়ে ওঠে।
তোলপাড় গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন—১: রিকশায় ধাক্কা খেয়ে পড়ে গিয়ে আমিন সাহেব পায়ে ভীষণ ব্যথা পেলেন। ফারুক তাঁকে উঠিয়ে পরিচয় জিজ্ঞেস করায় তিনি বললেন, আমি মুক্তিযোদ্ধা আমিন। ফারুক তাঁকে সালাম জানিয়ে কাছের বন্ধুদের ডেকে এনে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। মুক্তিযোদ্ধা আমিন সুস্থ হয়ে ফারুককে কিছু বখশিশ দিতে চাইলে ফারুক একজন মুক্তিযোদ্ধার সেবা করতে পারাকেই বড় বখশিশ বলে জানায়।
ক. সাবুর মায়ের নাম কী?
খ. ‘আর এখন কিছু করতে না পারলে অসোয়ান্তি’—সাবুর এই মনোভাবের কারণ ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে ‘তোলপাড়’ গল্পের মিসেস রহমানের কোন ঘটনার মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর ফারুকের ভূমিকা ‘তোলপাড়’ গল্পের সাবুর ভূমিকারই প্রতিচ্ছবি? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সাবুর মায়ের নাম জৈতুন বিবি।
খ. আগে ফায়-ফরমাশ খাটতে বিরক্ত লাগলেও যুদ্ধের সময় অসহায় মানুষকে সাহায্য করতে না পারলে অসোয়াস্তি হয় সাবুর।
শহর থেকে হাজার হাজার মানুষ জীবন বাঁচাতে সাবুদের গ্রাম পার হয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। মানুষের এ পরিস্থিতি দেখে সাবুর মনে তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করার ভাবনা উপস্থিত হয়। আলোচ্য উক্তিতে সাবুর মানসিক অবস্থাকেই নির্দেশ করা হয়েছে।
গ. বিপদগ্রস্ত হয়ে অন্যের সাহায্য প্রাপ্তির দিক দিয়ে উদ্দীপকের মুক্তিযোদ্ধা আমিন ও ‘তোলপাড়’ গল্পের মিসেস রহমান দুজনের সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
‘তোলপাড়’ গল্পে মুক্তিযুদ্ধকালীন সাধারণ মানুষের দুরবস্থার চিত্র ফুটে উঠেছে। গল্পে শহরে পাকিস্তানিদের আক্রমণের শিকার হয়ে সাধারণ মানুষের পালিয়ে যাওয়ার চিত্র লক্ষ্য করা যায়। মিসেস রহমানও তাদের একজন। তিনি শহর থেকে পালিয়ে আসার পথে সাবুর কাছে সাহায্য পান।
উদ্দীপকের মুক্তিযোদ্ধা আমিন একজন বয়স্ক মানুষ, যার সঙ্গে মূল গল্পের মিসেস রহমানের বেশকিছু মিল রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা আমিনকে ফারুক আহত অবস্থায় স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছে। সে জন্য তাকে আমিন সাহেব কিছু বখশিশ দিতে চাইলে ফারুক তা নেয়নি। ‘তোলপাড়’ গল্পেও মিসেস রহমানের বখশিশ না নিয়ে তার পাশে এসে সাবু সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। সুতরাং উভয় চরিত্রের মধ্যেই সাহায্য প্রাপ্তির পাশাপাশি কৃতজ্ঞতাবোধ বিদ্যমান। এদিক থেকে উভয়ের মধ্যে মিল রয়েছে।
ঘ. ‘তোলপাড়’ গল্পের সাবুর ভূমিকা পালন করার ভাবনাই উদ্দীপকের ফারুকের মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে।
‘তোলপাড়’ গল্পের সাবু পাকিস্তানিদের অত্যাচারের ভয়ে শহর থেকে পালিয়ে আসা মিসেস রহমান নামের এক বয়স্ক মহিলাকে সহযোগিতা করে। মিসেস রহমান ক্লান্ত হলে তাকে পানি পান করিয়ে তৃপ্ত করেছে সাবু। উদ্দীপকে মুক্তিযোদ্ধা আমিনকে হাসপাতালে নিয়ে ফারুকও মহান দায়িত্ব পালন করেছে। মুক্তিযোদ্ধা আমিন তাকে বখশিশ দিতে চাইলেও সে তা গ্রহণ করেনি। মুক্তিযোদ্ধার সেবা করতে পারাটাকেই সে বখশিশ বলে মনে করেছে।
গল্পের সাবু মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। মিসেস রহমান তাকে টাকা দিতে চাইলেও সাবু টাকা গ্রহণ করেনি; বরং সে তার মায়ের দোহাই দিয়ে টাকা নেওয়া থেকে বিরত থেকেছে। উদ্দীপকের ফারুকের মধ্যেও একই মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। ফারুকের ভূমিকা ‘তোলপাড়’ গল্পের সাবুর ভূমিকারই প্রতিচ্ছবি।
সৃজনশীল প্রশ্ন—২: বারো বছরের বালক অজয়দের এলাকায় ডাকাত দল মাঝে মাঝেই বিভিন্ন বাড়িতে ডাকাতি করে, বহু লোক হত্যা করে। এরপর তারা বিভিন্ন বাড়ি থেকে যুবতি মেয়েদের অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে। তারা এলাকার মানুষকে দিনের পর দিন নির্মম নির্যাতন করে। অজয় বয়সে ছোট হলেও ডাকাত দলের এ অত্যাচার ও নির্মমতা দেখে তার মনে ঘৃণা ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তাদের মোকাবিলা করার জন্য তার কিশোর মন চঞ্চল হয়ে ওঠে।
ক. ঢাকা থেকে গাবতলি গ্রামের দূরত্ব কত ছিল?
খ. সাবুদের গাবতলি গ্রামে গোটা শহর হুমড়ি খেয়ে পড়ল কেন?
গ. অজয়দের এলাকার ডাকাত দলের সঙ্গে ‘তোলপাড়’ গল্পের কাদের সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়—নির্ণয় কর।
ঘ. “উদ্দীপকের অজয় ও ‘তোলপাড়’ গল্পের সাবু চরিত্রে প্রকাশিত ক্ষোভই অন্যায় দূরীকরণে সক্ষম”—উক্তিটির পক্ষে তোমার মতামত দাও।
২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ঢাকা থেকে গাবতলি গ্রামের দূরত্ব ছিল পঞ্চাশ মাইল।
খ. পাঞ্জাবি মিলিটারিদের অত্যাচারের থেকে বাঁচার জন্য সাবুদের গাবতলি গ্রামে গোটা শহর হুমড়ি খেয়ে পড়ল।
পঁচিশে মার্চের রাতে পাঞ্জাবি মিলিটারিরা ঢাকায় সাধারণ জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা জীবন্ত যাকে পেয়েছে তাকে হত্যা করেছে। তাই ঢাকার অসহায় জনগণ নিজের জীবন রক্ষার জন্য সবাই ঢাকা থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে রওনা হয়। হাজার হাজার মানুষ গাবতলি গ্রামের উপর দিয়ে জেলা বোর্ডের সড়ক অতিক্রম করে নিরাপদ আশ্রয়ের লক্ষ্যে যাত্রা করে এবং অনেকে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য রাস্তায় যাত্রা বিরতি করে। শহরের মানুষের ভিড়ে গ্রামটা ভরে ওঠে। এ কারণে বলা হয়েছে, সাবুদের গাবতলি গ্রামে গোটা শহর যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ল।
গ. অজয়দের এলাকার ডাকাত দলের সঙ্গে ‘তোলপাড়’ গল্পের পাঞ্জাবি মিলিটারিদের সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।
অজয়দের এলাকায় ডাকাত দল হঠাৎ এক রাতে আক্রমণ করে এবং তারা বহু লোককে হত্যা করে। এছাড়া তারা বহু নারীকে অপহরণ করে নিয়ে তাদের জন্য মুক্তিপণ দাবি করে। তারা এলাকার মানুষকে দিনের পর দিন কঠিন নির্যাতন করে। ‘তোলপাড়’ গল্পেও বাঙালি জনগণের ওপর ২৫শে মার্চের রাতে পাঞ্জাবি মিলিটারিরা ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং নির্বিচারে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করে। নারীদের অপহরণ করে নির্মম নির্যাতন চালায়।
উদ্দীপকের অজয়দের গ্রামে ডাকাত দলের আগমন ও ২১শে মার্চে ঢাকা শহরে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ একই রকম। তাদের নির্যাতনের ধরনও একই রকম। এই প্রেক্ষিতে বলা যায় উদ্দীপকের ডাকাত ও পাঞ্জাবিদের মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকের অজয় ও ‘তোলপাড়’ গল্পের সাবু চরিত্রে প্রকাশিত ক্ষোভই অন্যায় দূরীকরণে সক্ষম কথাটির সাথে আমি একমত।
উদ্দীপকে অজয়দের গ্রামে ডাকাত দল আক্রমণ করে বহু মানুষ হত্যা করে। অনেক নারীদের অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে। এতে অজয়ের মনে ঘৃণা ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। ‘তোলপাড়’ গল্পে পাকিস্তানি মিলিটারিরা ২৫শে মার্চ রাতে ঢাকা শহরের শত শত মানুষ হত্যা করে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। এতে সাবুর মনে পাকিস্তানি অত্যাচারীদের প্রতি ঘৃণা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
আমাদের সমাজে উদ্দীপক ও ‘তোলপাড়’ গল্পে উল্লিখিত অন্যায়ের মতো বহু অন্যায় সংঘটিত হয়। শিশু-কিশোর-বৃদ্ধ তথা সর্বস্তরের মানুষের মনে এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভের সৃষ্টি হলে তারা এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেকোনো মানুষের দায়িত্বশীল উদ্যোগ সমাজ থেকে অন্যায় দূরীকরণে সক্ষম। যেমন : বাঙালিদের মনে সাবুর মতো ক্ষোভের সৃষ্টি হওয়ার ফলেই আমরা পাকিস্তানিদের অপশাসন দূর করতে সক্ষম হয়েছি। তাদের আমরা পরাজিত করেছি।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, সাধারণ মানুষের মনে সঞ্চিত ক্ষোভ কোনো বড় শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রেরণা জোগায়। তাই বলা যায় অজয়, সাবু এদের মনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভই অন্যায় দমনে যথেষ্ট।
সৃজনশীল প্রশ্ন—৩: শান্তিপূর্ণ গ্রামটা যেন হঠাৎ করেই মৃত্যুপুরী হয়ে গেল। কোথাও কোনো মানুষ নেই। এমনকি জীবজন্তুর চোখে পড়ে না। শুধু দু-একটা পাখি এদিক-ওদিকে ভীতস্বরে ডেকে উঠছে। পাশের ঝোপে লুকিয়ে এসব ভাবতে ভাবতেই আশ্চর্য হয় তাপস। তার বয়স পনেরো বছর। দুদিন আগে তাদের পাশের গ্রামে মিলিটারি এসেছে। তারপর থেকেই গ্রামটা নিশ্চুপ। এমন সময় পায়ের আওয়াজ শুনল তাপস। তারপর দেখল সবুজ হেলমেট আর খাকি পোশাক পরা মিলিটারিরা আসছে। খালি গ্রাম দেখে তারা শূন্য ঘরগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিল। এই দৃশ্য দেখে তাপস উত্তেজনায় কাঁপতে থাকে। হাতের মুঠো শক্ত হয়। দৃঢ় শপথ নেয় একাকী দাঁড়িয়ে। এ অন্যায় রুখে দেবে সে, যেভাবেই হোক।
ক. মিসেস রহমানের বাসা ঢাকার কোন এলাকায় ছিল?
খ. ‘গরিব হইতাম পারি, কিন্তু আমরা জানোয়ার না’—উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে ‘তোলপাড়’ গল্পের কোন ভাবটি প্রকাশ পেয়েছে?
ঘ. “উদ্দীপকের তাপস ‘তোলপাড়’ গল্পের সাবু চরিত্রেরই প্রতিনিধি।”—বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্ন—৪: আবিদের বয়স ১৮ বছর। সে একজন রিকশাচালক। একদিন তার রিকশায় একজন বয়স্ক ভদ্রলোক ভুলে একটি ব্যাগ ফেলে চলে যায়। আবিদ ব্যাগের মধ্যে তার মোবাইল নম্বর খুঁজে পেয়ে তাকে ফোন করে বিষয়টি জানায়। বয়স্ক ভদ্রলোকটি আবিদের ফোন পেয়ে দ্রুত ছুটে আসে এবং ব্যাগটি বুঝে পেয়ে সে আবিদকে ১০০ টাকা বখশিশ দিতে চাইলে আবিদ টাকাটি নিতে অস্বীকৃতি জানায়। আবিদ বলে, ‘মানুষের উপকার করার বিনিময়ে কিছু নেয়া উচিত নয়।
ক. ধলা পরির মতো দেখতে মহিলাটির নাম কী?
খ. “মাফ করবেন, টাকা নিলে আমারে মা বাড়ি থাইকা বাইর কইরা দিব”—ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে রিকশাচালকের সঙ্গে ‘তোলপাড়’ গল্পের কোন চরিত্রটির সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়? নিরূপণ কর।
ঘ. ‘মানুষের উপকারের বিনিময়ে কিছু নেয়া উচিত নয়’—‘তোলপাড়’ গল্পের আলোকে রিকশাচালক আবিদের উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।
আরও দেখো—ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা গল্প-কবিতার সমাধান
ষষ্ঠ শ্রেণির প্রিয় শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের চারুপাঠ বাংলা বই থেকে তোলপাড় গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। একইসাথে এই অধ্যায় থেকে পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য মোট ৪টি প্রশ্ন উত্তরসহ দেওয়া হয়েছে। Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে উত্তরগুলো সংগ্রহ করে নাও। এছাড়াও অধ্যায়ভিত্তিক জ্ঞানমূলক, অনুধাবনমূলক এবং বহুনির্বাচনী প্রশ্নের সমাধান পেতে উপরে দেওয়া লিংকে ভিজিট করো।
Discussion about this post