রানার কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর : শপথের চিঠি’ বলতে কবি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় শ্রমজীবী মানুষের জাগরণের বাণীবদ্ধ চিঠিকে বুঝিয়েছেন। রানার কবিতায় সমাজে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। রানার এখানে অসাম্য ও অমানবিকতার শিকার। রানার সামান্য বেতনে অসামান্য দায়িত্ব পালন করে।
রানার কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. ‘রাত নির্জন, পথে কত ভয়, তবুও রানার ছোটে’—রানার কেন ছোটে?
উত্তর: রানার জীবনের দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অনটন, ক্লান্তি, ভয়Ñএসবের পরও সে অবিরাম ছুটে চলে, কারণ তার দায়িত্ব হলো খবর পৌঁছে দেওয়া। রাত যতই নির্জন ও ভয়ঙ্কর হোক না কেন, রানার নির্ভীক ও দায়িত্বপরায়ণ। তার কাঁধে খবর ও চিঠির বোঝা, যা মানুষের সুখ-দুঃখ, আশা-ভরসার বাহক। সে জানে, শহর বা গ্রামের মানুষের কাছে খবর পৌঁছানো তার দায়িত্ব, তাই সে ভয় উপেক্ষা করে পথ চলতে বাধ্য। যদিও সে ক্ষুধার্ত, ক্লান্ত, এবং দস্যুদের ভয় রয়েছে, তবু সে থামে না। রানার শুধু নিজের জন্য নয়, বরং ভবিষ্যতের পরিবর্তনের বার্তা পৌঁছে দিতেও ছুটে চলে।
২. ‘কাজ নিয়েছে সে নতুন খবর আনার’—চরণটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: চরণটিতে বোঝানো হয়েছে—রানারের কাজ হলো নির্দিষ্ট স্থানে যথাসময়ে খবর পৌঁছে দেওয়া। রানার ছুটে চলে দুর্বার গতিতে। সব বাধা অতিক্রম করে রানার ছুটে চলে খবরের ঝোলা নিয়ে। চিঠিতে থাকে সুখ-আনন্দ, দুঃখ-শোক ভরা সংবাদ। যার জন্য অপেক্ষায় থাকে প্রিয়জনরা। আর রানারের কাজ এই খবর যথাসময়ে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়া। তাই বলা হয়েছে, রানার কাজ নিয়েছে নতুন খবর আনার।
৩. ‘দস্যুর ভয়, তারো চেয়ে ভয় কখন সূর্য ওঠে।’—রানার কেন সূর্য ওঠার ভয়ে ভীত? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: সূর্য ওঠার আগেই রানারকে শহরে পৌঁছাতে হবে। দায়িত্বশীলতার কারণে রানার ভীত। অন্ধকার রাতে রানারের চলার পথ সহজ নয়। রানারের কাঁধে থাকে চিঠিপতের বোঝা, সাথে টাকা-পয়সাসহ মূল্যবান জিনিস। নির্জন রাতে রানারের চলার পথে রয়েছে দস্যুর ভয়। কিন্তু দায়িত্বের বোঝা নিয়ে রানারকে সূর্য ওঠার আগেই শহরে পৌঁছাতে হবে। পাছে দেরি হয় এটাই রানারের বড় ভয়।
৪. ‘আরো পথ, আরো পথ-বুঝি হয় লাল ও পূর্ব কোণ’—বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর: চরণটি দ্বারা সূর্যোদয়ের আগে রানারের শহরে পৌঁছানোর ব্যাকুলতা প্রকাশ পেয়েছে। রানার তার দায়িত্ব নিয়ে ছুটে চলে রাতের অন্ধকার পথে। তাকে ভোর হওয়ার আগেই শহরে পৌঁছাতে হবে। দিগন্ত থেকে দিগন্তের পানে ছুটে চলে রানার। চলার পথে সে কোনো বাধা মানে না। কিন্তু তাকে আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। মনের মধ্যে থাকে, এক ভাবনা—কখন সূর্যোদয় হয়।
৫. “এর কথা ঢাকা পড়ে থাকবেই কালো রাত্রির খামে।”—ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: “এর কথা ঢাকা পড়ে থাকবেই কালো রাত্রির খামে।” চরণটিতে সাহসী রানারের অবদান অপ্রকাশিত থাকার কথা বলা হয়েছে। রানার ছুটে চলে টাকার বোঝা পিঠে নিয়ে। কিন্তু নিজ সততার গুণে রানার তা ছুঁয়েও দেখে না। নির্জন রাতে পথের ভয়কে অতিক্রম করে রানার ছুটে চলে মানুষের প্রয়োজনে। নিজে কষ্ট সহ্য করে অন্যের মুখে হাসি এনে দেয় রানার। কিন্তু তা কারও কাছে প্রকাশিত হয় না। ঢাকা পড়ে থাকে রাতের অন্ধকারে।
৬. শপথের চিঠি’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: শপথের চিঠি’ বলতে কবি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় শ্রমজীবী মানুষের জাগরণের বাণীবদ্ধ চিঠিকে বুঝিয়েছেন। রানার কবিতায় সমাজে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। রানার এখানে অসাম্য ও অমানবিকতার শিকার। রানার সামান্য বেতনে অসামান্য দায়িত্ব পালন করে।
রাতের বেলা সবাই যখন আরামে নিদ্রা যায়, সে তখন লণ্ঠন জ্বেলে খবরের বোঝা হাতে শহরের দিকে ছুটে চলে। ক্ষুধার ক্লান্তিতে ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়, তবু সে ছুটে চলে। গভীর রাতে পথের দস্যু অপেক্ষা তার সূর্য ওঠার ভয় বেশি। শ্রমজীবী মানুষের এমন দুঃখময় জীবনের অবসানকল্পে কবি এখানে তাদের জাগরণ প্রত্যাশা করেছেন।
জেগে উঠলেই তারা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। কবি তাই নতুন দিনের নতুন স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য শপথের চিঠি’ তথা বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার চেতনা নিয়ে রানারকে এগিয়ে যেতে বলেছেন।
৭. রানারের প্রিয়া কেমন করে রাত কাটায়? বর্ণনা কর।
উত্তর: রানারের প্রিয়া বেদনা আর অভিমান নিয়ে একা একা নিদ্রাহীন রাত কাটায়। রানার চিঠি নিয়ে রাতের পথে পথে ছুটে চলে। ঘরে তার প্রিয়া তার জন্য অপেক্ষার প্রহর গােনে। নিঃসঙ্গ রাত প্রিয়ার কাছে তখন অসহ্য আর যন্ত্রণাময় মনে হয়। রানারের প্রতীক্ষায় প্রিয়া সারা রাত জেগে থাকে।
বিরহে তার চোখে ঘুম আসে না, তবুও রানার আসে না, ফলে প্রিয়ার মনে সৃষ্টি হয় বেদনাময় হাহাকার। তার প্রিয়ার এই বেদনা রানার জানে, তবু তার কিছুই করার থাকে না; কারণ তার কাঁধে অনেক মানুষের কাছে চিঠি পৌছানোর দায়িত্ব।
৮. তাঁর জীবনের স্বপ্নের মতো পিছে সরে যায় বন’—বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: রানারের জীবন নিয়ে দেখা কোনো স্বপ্নই যে পূরণ হয়নিÑ এখানে সে কথাই বোঝানো হয়েছে।
সবার জীবনেই স্বপ্ন থাকে- কারোটা পূরণ হয় আবার কারোটা পূরণ হয় না। তেমনি স্বপ্ন ছিল রানারেরও। তবে সে স্বপ্ন পূরণ হওয়ার কোনো তথ্য আমাদের জানা নেই। তার সকল স্বপ্ন পেছনে চলে গেছে যেমন তার চলার পথ থেকে বন বনন্ত সরে যায় ক্রমশু। বন নানা গাছে সমৃদ্ধ থাকে তেমনি তার জীবনের স্বপ্নগুলোও হয়তো নানা শাখা-প্রশাখায় ভরপুর ছিল; কিন্তু পূরণ হয়নি কোনোটাই।
৯. জীবনের সব রাত্রিকে ওরা কিনেছে অল্প দামে বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: সামান্য বেতনের বিনিময়ে রানার রাতের ঘুম উপেক্ষা করে ডাক নিয়ে ছুটে যায়—আলোচ্য উক্তি দ্বারা এ কথাই বোঝানো হয়েছে।
রানার দেশের এক মহান পেশায় নিয়োজিত সামান্য বেতনভুক্ত কর্মচারী। তার পরিশ্রমের তুলনায় পারিশ্রমিক খুবই নগণ্য। সে সামান্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে রাতের ঘুম উপেক্ষা করে ডাকের বোঝা নিয়ে ছুটে যায়। সামান্য বেতনের বিনিময়ে সে যে রাতের ঘুমের আরামকে বিসর্জন দিয়েছে, সেটা বোঝাতেই কবি আলোচ্য মন্তব্য করেছেন।
১০. চলার পথে রানার কোনো নিষেধ মানে না কেন?
উত্তর: দায়িত্বশীলতার কারণে চলার পথে রানার কোনো নিষেধ মানে না।
রানার মানুষের অতি প্রয়োজনীয় চিঠিপত্র নিয়ে বহু দূর থেকে দূরান্তে পৌছে দেয়। মানুষের অনেক গুরুত্বপূর্ণ খবর, দলিল-দস্তাবেজ তাকে বহন করতে হয়। তাকে খুব সতর্ক ও দায়িত্বশীলতার সাথে এসব যথাস্থানে পৌঁছাতে হয়। এই দায়িত্বশীল চেতনার কারণে চলার পথে রানার কোনো নিষেধ মানে না।
আরও দেখো— নবম দশম শ্রেণির বাংলা সকল গল্প-কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে রানার কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post