রুপাই কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : কবি জসীমউদ্দীন রচিত ‘নকশী কাঁথার মাঠ’ নামক কাহিনীকাব্যের এ অংশটুকু “রুপাই’ কবিতা শিরোনামে সংকলিত হয়েছে। এ কবিতায় কবি গ্রাম-বাংলা প্রকৃতি কৃষকের রূপ ও কর্মোদ্যোগ অসাধারণ ভাষায় প্রকাশ করেছেন। গ্রাম-বাংলার প্রকৃতির মধ্যে কালো ভ্রমর, রঙিন ফুল, কাঁচা ধানের পাতা এবং কচি মুখের মায়াবী কৃষককে প্রায়শই দেখতে পাওয়া যায়। কৃষকের বাহু দুইখানি লাউয়ের কচি ডগার মতো বলে মনে হয়। রোদে পুড়ে কৃষকের শরীরের রং কালো হয়ে যায়। এ কালো কালি দিয়েই পৃথিবীর সমস্ত কেতাব বা গ্রন্থ।
রুপাই কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
সৃজনশীল—১: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
পল্লিগ্রামের পিতৃহীন এক দুরন্ত বালক ছমির শেখ। ফসল বোনার ওস্তাদিতে দশগ্রামে তার সুনাম আছে। বন্যা-খরা তথা গ্রামের শত বিপদে বৃক্ষের ছায়ার মতো তাকে সবাই কাছে পায়। যাত্রাপালার অভিনয়ে তার জুড়ি মেলা ভার। গ্রামের সবাই তাকে স্নেহ করে, যেমন প্রকৃতি করে গ্রামকে।
ক. চাষির ছেলের ‘গা-খানি’ দেখতে কেমন?
খ. ‘চাষিদের ওই কালো ছেলে সব করেছে জয়’—চরণটির মাধ্যমে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
গ. ‘উদ্দীপক ও ‘রূপাই’ কবিতার আলোকে তোমার দেখা কোনো পল্লিগ্রামের বর্ণনা দাও।
ঘ. ‘উদ্দীপকটি ‘রূপাই’ কবিতার মূল ভাবের খণ্ডাংশ মাত্র’—যুক্তিসহ বিশ্লেষণ করো।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. চাষির ছেলের ‘গা-খানি’ দেখতে শাওন শ্রাবণ. মাসের তমাল তরুর মতো।
খ. ‘চাষিদের ওই কালো ছেলে সব করেছে জয়’—চরণটির মাধ্যমে কবি কৃষক রুপাইয়ের গুণ, শ্রম ও প্রতিভার প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন। যদিও রুপাই শারীরিকভাবে কালো, তবুও তার কাজের মাধ্যমে সে সম্মান অর্জন করেছে। তার শক্তি, দক্ষতা এবং শারীরিক প্রতিভা গ্রামে সকলের কাছে প্রশংসিত, এবং সে সকল কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কবি এই চরণে বোঝাতে চেয়েছেন যে, একজন মানুষের প্রকৃত মূল্য তার গায়ের রঙের নয়, বরং তার কর্ম ও চরিত্রের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়।
গ. উদ্দীপক ও ‘রুপাই’ কবিতার আলোকে যে পল্লিগ্রামের বর্ণনা করতে পারি, তা হলো একটি শান্তিপূর্ণ, স্নেহময় এবং সহযোগিতামূলক পরিবেশ যেখানে প্রকৃতি এবং মানুষ একে অপরকে ধারণ করে এবং সাহায্য করে। যেমন ‘রুপাই’ কবিতায় রুপাই, একজন চাষি, তার শক্তি, গুণ এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে গ্রামের মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়। তিনি যেমন শারীরিকভাবে শক্তিশালী, তেমনি তার হাসি, সহজতা এবং সততা সকলের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠে। এমন একটি গ্রাম, যেখানে ছমির শেখের মতো একজন ব্যক্তি সব বিপদের মধ্যেও তার দৃঢ়তা এবং দক্ষতা দিয়ে গ্রামের মানুষকে সাহায্য করে। গ্রামে একে অপরকে সহযোগিতা করার মনোভাব দেখা যায়, বিশেষত যখন কোনো বিপদ আসে, তখন সবাই একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করে।
আমার পলাডাঙ্গা গ্রামটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ, যেখানে নদী, মাঠঘাট, গাছপালা এবং কৃষিজমি রয়েছে। প্রাকৃতিক এই সৌন্দর্য গ্রামবাসীদের জীবিকা ও শান্তির উৎস, তারা ধান ক্ষেত, ফলের বাগান, এবং কৃষিকাজে ব্যস্ত থাকে। এসব প্রাকৃতিক উপাদান গ্রামের মানুষের জীবনকে সুন্দর এবং সমৃদ্ধ করে। ছমির শেখ বা রুপাইয়ের মতো চরিত্ররা গ্রামবাসীদের মধ্যে সবার প্রিয় হয়ে ওঠে, কারণ তারা গ্রাম জীবনের প্রতিচ্ছবি, যেখানে পরিশ্রম, সততা, মানবিকতা এবং প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা রয়েছে। এভাবে পল্লিগ্রামের পরিবেশ হয়ে ওঠে একটি সমন্বিত সমাজ যেখানে সবাই একে অপরকে স্নেহ, সহানুভূতি এবং সম্মান দেয়।
ঘ. ‘উদ্দীপকটি ‘রূপাই’ কবিতার মূল ভাবের খণ্ডাংশ মাত্র’—মন্তব্যটি সঠিক।
‘রূপাই’ কবিতার মূল ভাব হলো পল্লি সমাজের একজন অতি সাধারণ, কিন্তু অসাধারণ পরিশ্রমী এবং গুণী চাষির ছেলে, রুপাইয়ের জীবন। কবিতায় রুপাইয়ের শারীরিক গঠন, তার শক্তি, প্রতিভা, এবং গাঁয়ের মানুষের সঙ্গে তার সম্পর্কের চিত্র ফুটে উঠেছে। রুপাই, যিনি শারীরিকভাবে শক্তিশালী এবং অনন্য, গ্রামে সব কাজে পারদর্শী, যেমন কৃষি কাজে, যাত্রাপালা অভিনয়ে, এবং অন্যদের সেবা করতে। তার কালো চেহারা এবং গায়ের গায়ের রঙ, তার জীবনের মূল্য এবং গুণের ওপর কোনও প্রভাব ফেলেনি। বরং সে তার গ্রামের মানুষের কাছে এক কিংবদন্তি, যিনি গ্রামটির কৃষ্টি, সংস্কৃতি, এবং কাজের প্রতি নিজের দক্ষতা দিয়ে জীবনকে আলোকিত করেছেন।
অপরদিকে, উদ্দীপকটি একটি পল্লিগ্রামের আরেকটি চরিত্র, ছমির শেখের কথা তুলে ধরেছে, যিনি দুরন্ত, প্রাকৃতিক পরিবেশে বাস করেন এবং তার দক্ষতা ও প্রতিভা দিয়ে গ্রামের মানুষের সাহায্য করেন। এই উদ্দীপকটি গ্রামে এক অনন্য ব্যক্তির গুণাবলী এবং তার ভূমিকা বর্ণনা করেছে, কিন্তু এটি শুধুমাত্র রুপাইয়ের মতো একজনের একটি খণ্ডাংশ এবং তার চরিত্রের সম্পূর্ণ চিত্রকে উপস্থাপন করে না।
তাহলে, বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘রূপাই’ কবিতার মূল ভাবের খণ্ডাংশ মাত্র কারণ এটি পুরো কবিতার গভীরতা, রুপাইয়ের চরিত্রের প্রকৃত সমগ্রতা এবং তার মানবিকতা ও গ্রামে তার প্রভাবের পূর্ণতা তুলে ধরে না। উদ্দীপক শুধুমাত্র ছমির শেখের মতো একজন গুণী চরিত্রের স্নেহ, সহানুভূতি এবং দক্ষতা সম্পর্কে আলোচনা করেছে, যা কবিতার বিস্তৃত ভাব এবং রুপাইয়ের জীবনের সার্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে কিছুটা সীমিত।
সৃজনশীল—২: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
শাহাদাত ভালো লাঠি খেলোয়াড়। এলাকায় তার সুনাম আছে। লাঠি খেলার পাশাপাশি সে ভালো কুস্তিও খেলে। তার শরীরে যেমন শক্তি তেমনি তার ভয়ঙ্কর চেহারা। তার চেহারা দেখেই প্রতিপক্ষ হতাশ হয়ে পড়ে। এমন কোনো কাজ নেই যা শাহাদাত পারে না। ভালো খারাপ সব কাজই সে করে টাকার বিনিময়ে।
ক. জসীমউদ্দীন রচিত উপন্যাসের নাম কী?
খ. ‘আখড়াতে তার বাঁশের লাঠি অনেক মানে মানী’ কথাটি দিয়ে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের সাথে রুপাই কবিতার সাদৃশ্য বা বৈসাদৃশ্য যুক্তি দিয়ে দেখাও
ঘ. “উদ্দীপকের শাহাদাত রুপাই কবিতার রুপাইর মতো নামি-দামি হলেও রুপাই কবিতার মূল বক্তব্য প্রতিফলিত হয়নি।” কথাটির যথার্থতা যাচাই কর।
২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জসীমউদ্দীন রচিত উপন্যাসের নাম ‘বোবা কাহিনি’।
খ. “আখড়াতে তার, বাঁশের লাঠি অনেক মানে মানী”—কথাটির মধ্যদিয়ে রুপাইয়ের বীরত্বের কথা বলা হয়েছে।
লাঠিয়াল, পালায় রুপাই ছিল সবার সেরা। তাই আখড়ার সবাই তার লাঠিটাকে সম্মান করে। সে সম্মানটি মূলত রুপাইর নিজেরই।
গ. লাঠি খেলায় পারদর্শিতা ও ন্যায়নীতির দিক দিয়ে উদ্দীপক ও রুপাই কবিতার সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য উভয়ই আছে।
‘রুপাই’ কবিতায় রুপাই লাঠি খেলায় ওস্তাদ। তার সাথে কেউ পেরে ওঠে না। এজন্য আখড়ায় সবাই তাকে সম্মানের চোখে দেখে তার বীরত্ব ও কৃতিত্বের জন্য। লেখক নিজেই বলেছেন—এমন বাপের বেটা কেউ কখনো দেখেনি।
উদ্দীপকের শাহাদাত ভালো লাঠি খেলোয়ার। কুস্তিতেও সে ভালো। তার ভয়ঙ্কর চেহারা দেখে প্রতিপক্ষ ভীত হয়ে পড়ে। কিন্তু তার ভেতর ন্যায় অন্যায়বোধ নেই। সে টাকার জন্য সব করতে পারে। লাঠি খেলায় পারদর্শিতার দিক দিয়ে রুপাইয়ের সাথে শাহাদাতের সাদৃশ্য রয়েছে। কিন্তু রুপাই শাহাদাতের মতো লোভী নয়। আবার রুপাইয়ের চেহারা মায়াবী কিন্তু শাহাদাতের চেহারা ভয়ঙ্কর যা দেখে অন্যরা ভীত বা হতাশ হয়ে পড়ে। তাই উদ্দীপকের শাহাদাতের সাথে রুপাইয়ের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য উভয়ই আছে।
ঘ. “শাহাদাত ‘রুপাই’ কবিতার রুপাইয়ের মতো নামিদামি হলেও- ‘রুপাই’ কবিতার মূল বক্তব্য উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়নি”- কথাটি যথার্থ।
‘রুপাই’ কবিতায় রুপাই তার সুন্দর ব্যবহার পরোপকার ও বীরত্বের জন্য সবার প্রিয়। মুরব্বি লোকেরা বলে, ছেলে না, ও যেন পাগাল লোহা। যেকোনো কাজেই সে দক্ষ। তার ন্যায়নীতিবোধের জন্য সে সকলের হৃদয় জয় করতে সক্ষম হয়েছে।
উদ্দীপকের শাহাদাত লাঠি ও কুস্তি খেলায় পারদর্শী। এ ব্যাপারে তার সুনাম রয়েছে। শাহাদাত সব কাজ করতে পারে। টাকায় বিনিময়ে সে ভালোকাজ খারাপকাজ সবই করে। ‘রুপাই’ কবিতায় রুপাই শুধু একটি চাষা পরিবারের সন্তান না। সে দিন দিন কৃষক সমাজের প্রতিনিধি হয়ে উঠেছে। প্রকৃতির সন্তান হিসেবে সে বেড়ে উঠেছে। কবিতায় গ্রাম-বাংলার প্রকৃতি কৃষকের রূপ ও কর্মোভোগ প্রকাশিত হয়েছে। প্রকৃতির মধ্যে কালো, ভ্রমর, রঙিন ফুল, কাঁচা ধানের পাতা, কচি মুখের মায়াবি রূপ ইত্যাদি উপমা ও উপাদান ব্যবহৃত হয়েছে। কবি অপরিসীম দক্ষতায় নানা বিষয়ের অবতারণা করেছেন। কিন্তু উদ্দীপকে শুধু শাহাদাত প্রসঙ্গেই আলোচনা করা হয়েছে। তাই ‘রুপাই’ কবিতার মূল বক্তব্য উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়নি।
রুপাই কবিতা জসীমউদ্দীন
সৃজনশীল—৩: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
সজল স্কুলের সেরা ছাত্র। সে যেমন পড়াশোনায় ভালো তেমনি খেলাধুলায়। সজল ভালো ছবি আঁকতে পারে। কিন্তু তার চেহারা খুবই খারাপ। গায়ের রং যেমন কালো তেমনি বিশাল তার দেহ। দুষ্ট ছেলেরা তাকে কসাই বলে ডাকে। স্যারেরা ডাকে কালোমানিক নামে।
ক. রুপাইয়ের বাহু কীসের মতো সরু?
খ. ‘কাঁচা ধানের পাতার মতো কচি মুখের মায়া।’—বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘রুপাই’ কবিতার সাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর
ঘ. ‘কালো মুখেই কালো ভ্রমর, কীসের রঙিন ফুল!’ কথাটি উদ্দীপক ও রুপাই কবিতার মূল কথা—যুক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত কর।
সৃজনশীল—৪: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
গ্রামে কবিগান হচ্ছে। প্রথম কবিয়াল কালোর পক্ষ নিয়েছে। দ্বিতীয় নিয়েছে সাদার পক্ষ। দ্বিতীয় কবিয়াল কালোর বিরুদ্ধে অনেক কথা বলল। বলল, কালো মন্দের প্রতীক। কালো মানে সব খারাপ। কালোর পক্ষ নেওয়া প্রথম কবিয়াল কালো সম্পর্কে বলল, চোখ কালো, বইয়ের লেখা, কেতাব, কোরআন, মৃত্যু-জন্ম সব কালো। শেষে প্রথম কবিয়াল বলল, কালো যদি মন্দ তবে কেশ পাকিলে কাঁদো কেনে?
ক. জসীমউদ্দীনের গ্রামের নাম কী?
খ. ‘রং পেলে ভাই গড়তে পারি রামধনুকের হার।’ কথাটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে
গ. উদ্দীপকের প্রথম কবিয়াল কালোর যে বর্ণনা দিয়েছে তাতে ‘রুপাই’ কবিতার রুপাইয়ের কোন বৈশিষ্ট্যটি ফুটে উঠেছে—ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “গায়ের রং নয়, মানুষের প্রকৃত সৌন্দর্য প্রকাশিত হয় তার কর্মে।”—কথাটি রুপাই কবিতা ও উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ কর
আরও দেখো—অষ্টম শ্রেণির বাংলা সকল গল্প-কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে রুপাই কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য অতিরিক্ত বেশকিছু সৃজনশীল প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post