রেইনকোট গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ঢাকার পরিস্থিতি নিয়ে রেইনকোট গল্পটি রচিত। মুক্তিযুদ্ধের তখন শেষ পর্যায় । ঢাকায় তখন মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণ শুরু হয়েছে। তারই একটি ঘটনা এ গল্পের বিষয। যেখানে ঢাকা কলেজের সামনে গেরিলা আক্রমণের ফলে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কলেজের শিক্ষকদের তলব করে এবং তাদের মধ্য থেকে নুরুল হুদা ও আবদুস সাত্তার মৃধাকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা করে । নুরুল হুদার জবানিতে গল্পের অধিকাংশ ঘটনা বিবৃত হয়েছে ।
বিবৃত হয়েছে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বর নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞের মধ্যে ঢাকা শহরের আতঙ্কগ্রস্ত জীবনের চিত্র । গেরিলা আক্রমণের ঘটনা ঘটে যে রাতে, তার পরদিন সকালে ছিল বৃষ্টি । তলব পেয়ে সেই বৃষ্টির মধ্যে নুরুল হুদাকে কলেজে যেতে যে রেইনকোটটি পরতে হয় সেটি ছিল তার শ্যালক মুক্তিযোদ্ধা মন্টুর ৷ গল্পে এই রেইনকোটের প্রতীকী তাৎপর্য অসাধারণ । মুক্তিযোদ্ধা শ্যালকের রেইনকোট গায়ে দিয়ে সাধারণ ভীতু প্রকৃতির নুরুল হুদার মধ্যে সঞ্চারিত হয় যে উষ্ণতা, সাহস ও দেশপ্রেম তারই ব্যঞ্জনানাময় প্রকাশ ঘটেছে এ গল্পে ।
রেইনকোট গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন ১: নিচের চিত্রটি লক্ষ্য কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
(চিত্র: মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী হানাদের নির্মম অত্যাচারের দৃশ্য।)
ক. ‘রেইনকোট’ গল্পে মিলিটারি ক্যাম্প কোথায় স্থাপন করা হয়?
খ. দেশে একটা কলেজ ও শহিদ মিনার অক্ষত নেই কেন?
গ. চিত্রে ‘রেইনকোট’ গল্পের যে দিকটি ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. চিত্রিত দিকটি “রেইনকোট” গল্পের খণ্ডাংশমাত্র বিশ্লেষণ কর।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘রেইনকোট’ গল্পে মিলিটারি ক্যাম্প কলেজের জিমন্যাশিয়ামে স্থাপন করা হয়।
খ. শহিদ মিনার বাঙালি জাতির স্বাধিকার চেতনার উৎস এবং পাকিস্তানের আদর্শের পরিপন্থী বলেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দেশের সব কলেজ থেকে শহিদ মিনার ভেঙ্গে ফেলে। ১৯৫২ সালের ভাষা-আন্দোলনে শহিদের স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মাণ করা হয়েছিল শহিদ মিনার, যা চিরকালই বাঙালির স্বাধিকার চেতনার উৎস। এছাড়া পাক-সরকার শহিদ মিনারকে পাকিস্তানের আদর্শের পরিপন্থী মনে করত। তাই পাকিস্তানকে বাঁচাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সব কলেজ থেকে শহিদ মিনার ভেঙ্গে দিয়েছিল।
গ. চিত্রে ‘রেইনকোট’ গল্পের পাকিস্তানিদের বর্বরতার দিকটি ফুটে উঠেছে।
শোষকশ্রেণির মানুষেরা চিরকালই অসহায়-দুর্বলের ওপর কর্তৃত্ব বজায় রাখতে নির্মম নির্যাতন চালায়। এক্ষেত্রে তাদের মধ্যে সামান্যতম মানবতার ছোঁয়ামাত্র দেখা যায় না। বরং মধ্যযুগীয় কায়দায় তারা দুর্বলের ওপর চালায় নির্মম নির্যাতন, যা সহ্য করা ছাড়া দুর্বলের আর কিছুই করার থাকে না।
চিত্রে পাকিস্তান সেনাদের বর্বর অত্যাচারের দিকটি প্রত্যক্ষ করা যায়। তারা পাঁচজন মিলে একজন নিরীহ মানুষের ওপর চালিয়েছে নির্মম নির্যাতন। শুধু তাই নয়, তারা তাকে শেয়াল-কুকুরের মতো টেনে-হেঁচড়ে নিয়ে যায়। অন্যদিকে ‘রেইনকোট’ গল্পেও নুরুল হুদার জবানিতে পাকিস্তানিদের বর্বরতার কথা বর্ণিত হয়েছে। মিলিটারিদের নির্যাতনের ভয়ে সে নিজেই নানা সময় পালিয়ে বেড়িয়েছে নানা স্থানে। এছাড়া তার মতো হাজারো অসহায় বাঙালির ওপর পাকিস্তানিবাহিনী চালিয়েছিল অত্যাচারের স্টিম রোলার। সুতরাং বলা যায়, চিত্রে ‘রেইনকোট’ গল্পের পাকিস্তানিদের বর্বর অত্যাচারের দিকটি ফুটে উঠেছে।
ঘ. আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচিত ‘রেইনকোট’ গল্পে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বহুমুখী উপস্থাপন বর্তমান। উদ্দীপকে বর্ণিত মুক্তিযুদ্ধের যে চিত্র রয়েছে তা গল্পটির খণ্ডাংশ।
‘রেইনকোট’ গল্পে লেখক নুরুল হুদার চিন্তারাজি এবং অন্যান্য চরিত্রের কথোপকথনের মাধ্যমে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের একটি সামগ্রিক চিত্র উন্মোচনের প্রয়াস চালিয়েছেন। যদিও লেখকের মূল লক্ষ্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। অর্থাৎ, একজন মুক্তিযোদ্ধার ব্যবহৃত রেইনকোট কীভাবে ভীরু, দুর্বলচিত্ত, পলায়নপর রসায়নের শিক্ষক নুরুল হুদাকে একজন মানসিক যোদ্ধায় পরিণত করে-সেটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন লেখক। অন্যদিকে উদ্দীপকের বর্ণনায় আমাদের যুদ্ধের একটি খণ্ড চিত্র রয়েছে।
উদ্দীপকে পশ্চিম, থেকে আসা পাকিস্তানি নরঘাতকদের অগ্নিসংযোগ এবং নরহত্যার বিষয়টি ব্যক্ত হয়েছে। পাকিস্তানি- বাহিনী এদেশের গ্রামে গ্রামে আগুন জ্বালিয়ে অট্টহাসিতে মেতে উঠেছিল। মার কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে চালিয়েছিল গণহত্যা, এমনকি পিতার সামনে মেয়েকে কেটে রক্তস্নান করেছে। অর্থাৎ, উদ্দীপকের মূল লক্ষ্য অগ্নিসংযোগ এবং গণহত্যার বিষয়টিতে নিবিষ্ট, যা ‘রেইনকোট’ গল্পটিতে আংশিক প্রতিনিধিত্ব করে।
‘রেইনকোট’ গল্পটিতে মুক্তিযুদ্ধের যে বহু বিচিত্র চিত্র রয়েছে উদ্দীপকে তা মেলে না। উদ্দীপকে আছে কেবল গল্পে বর্ণিত পাকবাহিনীর নরহত্যার বিষয়টি। তাই বলা যায়, “উদ্দীপকটি ‘রেইনকোট’ গল্পটির খন্ডাংশ সম্পূর্ণ নয়।”
সৃজনশীল প্রশ্ন ২: ছোট্ট শুভ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার ক্রিকেট খেলায় হাত ধরে মাঠে ঢোকার সুযোগ পায়। জাতীয় সঙ্গীত পর্ব সমাপ্ত হলে শচীন অটোগ্রাফসহ নিজের ক্যাপটি শুভকে উপহার দেন। উপহারটি পেয়ে শুভ বিস্মিত হয়ে যায়। সে সিদ্ধান্ত নেয় বড় হয়ে একজন ক্রিকেটার হবে।
ক. নুরুল হুদাকে রেইনকোটটি কে পরতে বলে?
খ. রেইনকোট খুলে ফেললেও নুরুল হুদার শরীরে তার ওম লেগে থাকার কারণ কী?
গ. উদ্দীপকের শুভ এবং ‘রেইনকোট’ গল্পের নুরুল হুদার ভাবনার মাঝে বৈসাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. “উদ্দীপকের শুভর কাছে ক্যাপ এবং ‘রেইনকোট’ গল্পে নুরুল হুদার কাছে রেইনকোট জীবনের পালাবদলকারী চেতনার প্রতীক হিসেবে দেখা দিয়েছে।”- উক্তিটির স্বপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন কর।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৩: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
কীসে কী হইল, পশ্চিম হতে নরঘাতকেরা আসি
সারা গাঁও ভরি আগুন জ্বালায়ে হাসিল অট্টহাসি।
মার কোল হতে শিশুরে কাড়িয়া কাটিল সে খান খান
পিতার সামনে মেয়েরে কাটিয়া করিল রক্তস্নান।
ক. কারা ঢাকা শহরে বাজার পোড়ায়, বস্তিতে আগুন লাগিয়ে মানুষ মারে?
খ. ‘এসব হলো ইনটার্নাল অ্যাফেয়ার।’- কথাটি কী নির্দেশ করে?
গ. উদ্দীপকে এবং ‘রেইনকোট’ গল্পে বর্ণিত পাকবাহিনীর নির্যাতনের একটি তুলনামূলক বর্ণনা দাও।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘রেইনকোট’ গল্পটির আংশিক প্রতিনিধিত্ব করে, স¤পূর্ণ নয়।”- উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৪: মালেক মেম্বার একজন রাজাকার। যুদ্ধের সময় সে নিজের গ্রামে মিলিটারি ডেকে এনে অগ্নিসংযোগ ও মানুষ হত্যা করিয়েছে। এছাড়া মিলিটারিকে সন্তুষ্ট রাখতে আশপাশের গ্রাম থেকে সুন্দরী মেয়েদের ধরে নিয়ে পৌঁছে দিয়েছে ক্যাম্পে।
ক. প্রিন্সিপালের পিওনের নাম কী?
খ. মিলিটারি প্রাদুর্ভাবের পর পিওনকে দেখে সবাই তটস্থ থাকত কেন?
গ. যুদ্ধের সময় মালেক মেম্বারের কর্মকা- এবং ‘রেইনকোট’ গল্পে বর্ণিত রাজাকারদের কর্মকাণ্ডের তুলনা কর।
ঘ. মানুষ হত্যা, নারী নির্যাতন, মিলিটারিকে সহযোগিতা করে রাজাকাররা দেশদ্রোহী ও নরঘাতকের পরিচয় দিয়েছে।” ‘রেইনকোট’ গল্প এবং উদ্দীপকের আলোকে মন্তব্যটির যৌক্তিকতা বিচার কর।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৫: সেলিনা হোসেন-এর ‘যুদ্ধ’ উপন্যাসে নিখিল ও সরলা অত্যাচারিত হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। যুদ্ধের সময় হিন্দুদের বেছে বেছে নির্যাতন করা হয়। জীবন বাঁচানোর জন্য নিখিল ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্মান্তরিত হয়। টুপি মাথায় দিয়ে নামাজ পড়ে সে। মনে অসহনীয় বেদনা থাকলেও কালেমা সবসময় মুখস্থ রাখে।
ক. রাস্তায় বেরুলে নুরুল হুদা সবসময় ঠোঁটের ওপর কী রেডি রাখে?
খ. নুরুল হুদা অনেক সুরা মুখস্থ করেছে কেন?
গ. উদ্দীপকের নিখিল ও ‘রেইনকোট’ গল্পের নুরুল হুদার জীবন বাস্তবতার তুলনা কর।
ঘ. “জীবন বাস্তবতার সাদৃশ্য থাকলেও উগ্র সাম্প্রদায়িক প্রবণতা নিখিলের জীবনকে বেশি বিপন্ন করেছে।”- উদ্দীপক ও ‘রেইনকোট’ গল্প অনুযায়ী উক্তিটির যথার্থতা নির্ণয় কর।
◉ আরও দেখ: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সকল গল্প-কবিতার CQ-MCQ সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা মূল বই থেকে রেইনকোট গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। একই সাথে পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য আরও অতিরিক্ত ৪টি প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। সবগুলো সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর পিডিএফ আকারে সংগ্রহের জন্য উপরে ‘ANSWER SHEET’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post