স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস pdf : বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস স্নাতক ও স্নাতক সম্মানের ছাত্রদের জন্য এই প্রথমবার অবশ্য পাঠ্য [২০১৩-২০১৪ থেকে কার্যকর] করা হয়েছে। বিষয়টির পূর্ণমান ১০০, ক্রেডিট সংখ্যা ৪। আমরা দীর্ঘদিন বিষয়টি অবশ্য পাঠ্য করার জন্য দাবি জানিয়েছিলাম । আমরা মনে করেছি জাতীয় ইতিহাস না পড়লে একজন শিক্ষার্থী দেশ সম্পর্কে প্রায় কিছু না জেনেই ডিগ্রি পাবেন।
তিনি জানবেন না স্বাধীনতার পটভূমি, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মত্যাগ, মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্ব। ১৯৭১ সালে ত্রিশ লক্ষের আত্মত্যাগ, প্রায় ছয় লক্ষ নারীর আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল একটি অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ।
এই না জানার ফলেই-গত.-তিন দশকে নতুন জেনারেশন মেনে নিয়েছে বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থা যেখানে-অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্ম নিরপেক্ষতা কয়েকটি শব্দ মাত্র। এ কারণেই দেশে উদ্ভব হয়েছে জঙ্গি মৌলবাদের। বিরোধিতা করা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধ বিচারের । তাছাড়া জাতীয় ইতিহাস না জানলে নতুন প্রজন্ম হয়ে পড়বে শেকড়হীন।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস pdf
২০১৩ সালে শিক্ষাবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি আমাদের [বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী] দাবির পরিপ্রেক্ষিতে একটি শুনানী করে এবং কমিটির সব সদস্য একমত হন যে, জাতীয় ইতিহাস অবশ্য পাঠা জরুরি। কমিটির নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও একাডেমিক কাউন্সিলে বিষয়টি উত্থাপন করেন এবং তার উদ্যোগকে সবাই সমর্থন জানান।
এ পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যাদয়ের ইতিহাস অবশ্য পাঠ্য হিসেবে ঘোষিত হয়। এই ঘোষণার পরপরই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এই বিষয়ের পাঠক্রম তৈরির জন্য একটি কমিটি গঠন করে । কমিটিতে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোঃ সেলিম, বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মকফুর রহমান ও ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যাপক ডালিয়া আহমেদ।
সিলেবাস প্রণয়নের সময় স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের শুরুটা কবে থেকে হবে তা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। অনেক বিতর্কের পর সিদ্ধান্ত হয় যে সিলেবাসটিকে কয়েকটি পর্বে ভাগ করা যেতে পারে। তৃতীয় অধ্যায় পর্যন্ত সর্বভারতীয় এবং অভিন্ন বাংলার পরিপ্রেক্ষিতে একটি পটভূমি । দ্বিতীয় পর্বে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি, ১৯৪৭ সাল থেকে যার শুরু। চতুর্থ অধ্যায় থেকে দ্বাদশ অধ্যায় পর্যন্ত এর বিস্তৃতি।
তৃতীয় পর্ব মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর শাসনকাল। এ সিলেবাসের শেষ ১৯৭৫ সাল। এর কারণ, দীর্ঘ লড়াইয়ের পর আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, মুক্তিযুদ্ধের যে আদর্শে বঙ্গবন্ধু দেশ পরিচালনা করছিলেন তার সমান্তি ঘটে ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার মাধ্যমে। মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জন নস্যাৎ করার কাজ শুরু হয় বঙ্গবন্ধু হত্যার পর। দেশে ফিরিয়ে আনা হয় দ্বিজাতিতত্ব।
১৯৪৭ সাল থেকে দ্বিজাতিতত্ব নস্যাৎ করার যে লড়াই তার সমাপ্তি ঘটে ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের মাধ্যমে । আমরা এটাকেই মনে করেছি ইতিহাসের মূল ধারা। ১৯৭৫ পরবর্তী শাসকরা প্রমাণ করতে চেয়েছেন, না এটি মূল ধারা নয়, মূলধারা দ্বিজাতিতত্ব, ১৯৭১-৭৫ বিচ্যুতি । ১৯৭৫ সালেই আবার দেশ ফিরে এসেছে মূল ধারায়। কিন্তু আমাদের তা ইতিহাস বলে না।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস
সিলেবাস প্রণয়ন শেষ হলে আলোচনায় আসে এ পাঠক্রম সব শাখায়ই কার্যকর হবে । কলেজগুলোর অবস্থা, লাইব্রেরি, রেফারেন্স বইয়ের অভাব, শিক্ষক স্বল্পতা-সব কিছু এই শিক্ষাক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। তখন আলোচনার ভিত্তিতে মূল [অর্থাৎ প্রথমে প্রস্তাবিত] পাঠ্যক্রম থেকে কয়েকটি অধ্যায় বাদ দিয়ে বর্তমান পাঠ্যক্রম অনুমোদিত হয় [পরিশিষ্ট ১] যা সংযোজিত হয়েছে।
কিন্তু আমরা এখনও মনে করি ১৪টি অধ্যায়ে আমরা যে পাঠক্রম তৈরি করেছিলাম তা যুক্তিযুক্ত। ছাত্রদের সুবিধার জন্য আমরা একটি রেফারেন্স বই লেখার সিদ্ধান্ত নিই। এই শিক্ষা বছর-ধরার জন্য সময় ছিল কম। তবুও আমরা একটি ডেটলাইন ঠিক করি।
অধ্যাপক. কামাল ও অধ্যাপক সেলিম অন্যত্র ব্যস্ত থাকার জন্য কাজটি সম্পন্ন করতে পারেননি । ভবিষ্যতে কোন নতুন সংস্করণ হলে হয়ত তারা যোগ দেবেন। তাই আমরা বর্তমান সিলেবাস অনুযায়ী কাজটি সম্পন্ন করেছি। একটি অধ্যায় শুধু বেশি সংযোজন করেছি, ছাত্রদের যা পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় না হতে পারে কিন্তু দেশের ইতিহাস জানার জন্য জরুরি ।
উল্লেখ্য, এ বিষয়ে আমাদের দু’জনের অনেক প্রকাশিত লেখা/বই ছিল। আমরা সে সব এখানে ব্যবহার করেছি। এখানে আরো বলা প্রয়োজন ভূমিকায় আমরা যে ধরনের পাঠক্রম চেয়েছিলাম সে আলোকেই বর্তমান [অর্থাৎ ১৪ অধ্যায়] আলোচনা করেছি। কিন্তু বইটি লেখা হয়েছে বর্তমান পাঠক্রম অনুসরণ করেই।
Discussion about this post