শ্রাবণে কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর | ‘শ্রাবণে’ কবিতায় বর্ষা প্রকৃতির প্রাণবন্ত রূপটি ফুটে উঠেছে। গ্রীষ্মের দাবদাহে বিপন্ন প্রকৃতি বর্ষার আগমনে যেন প্রাণ ফিরে পায়। বর্ষার জলের ছোঁয়ায় গাছপালা ফিরে পায় সজীবতা। নদী-নালা, মাঠ, খেত জলে পূর্ণ হয়ে নবযৌবন লাভ করে। গ্রীষ্মকালের রোদের চিহ্ন মুছে দিয়ে এসময় প্রকৃতি এক নবরূপ পায়। আর তার সঙ্গে মানবমনের আশা-আকাঙ্ক্ষা, সুখ-দুঃখেরও পরিবর্তন ঘটে।
পৃথিবীর ছাত পিটে ঝমঝম বারিধার’—উক্তিটি দ্বারা বৃষ্টি পতনের শব্দকে ছাদ পেটানোর শব্দের সাথে তুলনা করা হয়েছে। বর্ষার বারিধারার ঝমঝম শব্দ খুবই মনমুগ্ধকর। কবির কাছে এটি ছাদ পেটানোর শব্দের মতো মনে হয়েছে। পৃথিবী নামক ছাদে বৃষ্টি যেন ঝমঝম শব্দ করে পেটাচ্ছে।
শ্রাবণে কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
সৃজনশীল—১: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
উদ্দীপক (১): আজিকার রোদ ঘুমায়ে পড়িছে—ঘোলাটে মেঘের আড়ে,
কেয়া বন পথে স্বপন বুনিছে—ছল ছল জলধারে।
কাহার ঝিয়ারী কদম্ব শাখে—নিঝুম নিরালায়,
ছোট ছোট রেণু খুলিয়া দিয়াছে—অস্ফুট কলিকায়।
উদ্দীপক (২): কেউবা রঙিন কাঁথায় মেলিয়া বুকের স্বপনখানি,
তারে ভাষা দেয় দীঘল সুতার মায়াবী আখর টানি।
ক. প্রাণখোলা বর্ষায় কে স্নান করে?
খ. ‘উন্মাদ শ্রাবণ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. ১ম উদ্দীপকে ‘শ্রাবণে’ কবিতায় বর্ণিত বর্ষার কোন দিকটি চিত্রিত হয়েছে? বর্ণনা কর।
ঘ. ২য় উদ্দীপকটি ‘শ্রাবণে’ কবিতার শেষ চরণে প্রতিফলিত হয়েছে কি? যুক্তিসহ বিচার কর।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রাণখোলা বর্ষায় স্নান করে গাছপালা।
খ. ‘উন্মাদ শ্রাবণ’ বলতে এখানে শ্রাবণ মাসের অবস্থা বোঝানো হয়েছে, যা বর্ষাকাল তথা বৃষ্টির সময়। এই উন্মাদনা মূলত বর্ষার মূর্ছনায় তীব্রতা, আনন্দ, ও উৎফুল্লতা প্রকাশ করে। বর্ষা যেমন প্রকৃতির মাঝে এক ধরনের অস্থিরতা বা বিশাল পরিবর্তন নিয়ে আসে, তেমনি মানুষের মনেও আনন্দ ও উন্মাদনা সৃষ্টি করে। এই প্রেক্ষিতে ‘উন্মাদ শ্রাবণ’ বৃষ্টি ও প্রকৃতির উন্মত্ততা বা অবিশ্বাস্য রূপকে নির্দেশ করছে।
গ. প্রথম উদ্দীপকে বর্ণিত কবিতাটি ‘শ্রাবণে’ কবিতার বর্ষাকালের শান্ত, মায়াবী এবং কোমল দিকটির চিত্র তুলে ধরেছে। এখানে প্রথমে ‘আজিকার রোদ ঘুমায়ে পড়িছে—ঘোলাটে মেঘের আড়ে’ এই লাইনটি দিয়ে বোঝানো হয়েছে যে, আজকের দিনে সূর্যের আলো মেঘের আড়ালে লুকিয়ে গেছে, অর্থাৎ আবহাওয়া হয়ে উঠেছে ধোঁয়াটে, মেঘলা। এর মাধ্যমে বর্ষাকালের এক নির্জন, মৃদু, শান্ত পরিবেশকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যেখানে সূর্যের তাপ নেই এবং মেঘের ছায়ায় প্রকৃতি স্থির ও শান্ত।
পরবর্তীভাবে, ‘কেয়া বন পথে স্বপন বুনিছে—ছল ছল জলধারে’ এই লাইনটি থেকে বোঝা যায় যে, বর্ষাকালে কেয়া বন পথে জলধারা প্রবাহিত হচ্ছে, যা স্বপ্নের মতো অনুভূতি সৃষ্টি করে। জলধারার স্নিগ্ধতা ও রোমাঞ্চ বর্ষার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য, যা প্রকৃতিকে এক নূতন রূপে উপস্থাপন করে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চিত্র হলো ‘কাহার ঝিয়ারী কদম্ব শাখে- নিঝুম নিরালায়’। এখানে কদম্ব গাছের শাখায় ঝিয়ারী ঝুলছে, এবং পুরো পরিবেশ নির্জন ও শান্ত। এর মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে যে, বর্ষার দিনে প্রকৃতি নিরবতা ও শান্তিতে পরিপূর্ণ থাকে।
শেষে ‘ছোট ছোট রেণু খুলিয়া দিয়াছে—অস্ফুট কলিকায়’ এই লাইনটি বর্ষার পরবর্তী প্রভাব তুলে ধরেছে, যেখানে ছোট ছোট রেণু ও কলিকা খুলে যায়, যা প্রকৃতির এক নতুন জীবনধারার শুরু নির্দেশ করে। এই সমস্ত চিত্র বর্ষাকালের কোমলতা, মায়া ও শান্ত পরিবেশকে ফুটিয়ে তোলে, যা সাধারণত বর্ষার শান্ত এবং মধুর রূপে অভ্যস্ত।
ঘ. দ্বিতীয় উদ্দীপকে ‘শ্রাবণে’ কবিতার শেষ চরণের ভাবধারা প্রতিফলিত হয়েছে। সুকুমার রায় ‘শ্রাবণে’ কবিতায় অত্যন্ত দক্ষতার সাথে বর্ণনা করেছেন কীভাবে বর্ষা প্রকৃতিকে বদলে দেয়, এবং সেই সাথে কীভাবে এই পরিবর্তন মানব মনের পরিবর্তনকে প্রভাবিত করে। কবি প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের মনের সম্পর্ক তুলে ধরেছেন, যেখানে প্রকৃতির পরিবর্তনের সাথে মানুষের মনও নতুন রূপ ধারণ করে। এই কবিতায় দেখা যায়, যেমন প্রকৃতির অবস্থান পরিবর্তিত হয়, তেমনি মানুষের আশা, আকাক্সক্ষা, সুখ ও দুঃখও পরিবর্তিত হয়।
উদ্দীপকে মানব মনের চিরন্তন স্বপ্নময়তার প্রতিফলন ঘটে। মানুষ জীবনে স্বপ্ন দেখেই এগিয়ে চলে। রঙিন কাঁথার মতো, সে তার স্বপ্নের জাল ছড়িয়ে দেয়। ঠিক যেমন রঙিন কাঁথার মধ্যে ফুল ফুটানো হয়, তেমনি মানুষ তার মনের স্বপ্নকে বুনে যায়। রঙিন কাঁথার মতোই, সে তার অন্তহীন ভাবনা ও কল্পনাকে মেলে ধরতে চায়। দীঘল সুতার মায়াবী অক্ষরে সে তার মনের কথাগুলো লিখে যায়।
‘শ্রাবণে’ কবিতায় বলা হয়েছে যে, ঋতুর পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে মানব মনের আশা-আকাক্সক্ষা এবং সুখ-দুঃখেরও পালাবদল ঘটে। বর্ষার প্রবল বর্ষণ মানব মনে গভীর প্রভাব ফেলে, যা মনের শূন্যতা থেকে নতুন কল্পনা ও ভাবনা সৃষ্টি করে। উদ্দীপক (২)-এ এই চিন্তা এবং অনুভূতিরই প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়, যেখানে কল্পনার রঙিন কাঁথা সেলাইয়ের মাধ্যমে সেই ভাবনা ও কল্পনা জীবন লাভ করেছে।
সৃজনশীল—২: নিচের চিত্রটি লক্ষ্য করো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
ক. বর্ষায় কীসের শেষ নাই?
খ. ‘পৃথিবীর ছাত পিটে ঝমাঝম্। বারিধার’—উক্তিটির অর্থ ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের ছবিটির সাথে ‘শ্রাবণে’ কবিতার সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. “জলেজলে জলময় দশদিক টলমল। কথাটি উদ্দীপক ও ‘শ্রাবণে’ কবিতার মূলভাবটিকে ধারণ করেছে—বিশ্লেষণ কর।
২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বর্ষায় প্লাবনের শেষ নেই।
খ. ‘পৃথিবীর ছাত পিটে ঝমঝম বারিধার’—উক্তিটি দ্বারা বৃষ্টি পতনের শব্দকে ছাদ পেটানোর শব্দের সাথে তুলনা করা হয়েছে। বর্ষার বারিধারার ঝমঝম শব্দ খুবই মনমুগ্ধকর। কবির কাছে এটি ছাদ পেটানোর শব্দের মতো মনে হয়েছে। পৃথিবী নামক ছাদে বৃষ্টি যেন ঝমঝম শব্দ করে পেটাচ্ছে।
গ. সারাদিন-সারারাত জল ঝরা ও চারিদিক জলময় হবার দিক দিয়ে উদ্দীপকের ছবিটির সাথে শ্রাবণে কবিতার সাদৃশ্য রয়েছে।
‘শ্রাবণে’ কবিতায় কবি সুকুমার রায় বর্ষার দৃশ্যকল্প অংকন করেছেন। অপূর্ব সুন্দর ছাদ তিনি বর্ষাকে উপস্থাপন করেছেন। বর্ষার অবিরাম জল ঝরে শিশুর ধারাপাত পড়ার মতো শব্দ করে। আর বর্ষার এই প্লাবনের যেন শেষ নেই। চতুর্দিক জলে পরিপূর্ণ হয়ে তবে। বৃষ্টির ঘনঘোর উৎসবে শ্রাবণ যেন উন্মাদ হয়ে পড়েছে।
উদ্দীপকের চিত্রটিতে বর্ষার দিনের এক সুন্দর ও বাস্তব রূপ ফুটে উঠেছে। যেখানে ফসলের জমি জলে পরিপূর্ণ। নারী ও শিশুর কর্দমাক্ত পিচ্ছিল পথে হেঁটে যাচ্ছে। কেউ ছাতা মাথায় বৃষ্টি থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে। কেউ বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে রাস্তা অতিক্রম করছে। এটি বর্ষাকালের চিরকালীন এক গ্রামীণ দৃশ্য। তাই দেখা যায় শ্রাবণে কবিতার সাথে উদ্দীপকের সাদৃশ্য বিদ্যমান।
ঘ. জলেজলে জলময় দশদিক টলমল—কথাটি উদ্দীপকে ও শ্রাবণে কবিতার মূলভাবটিকে ধারণ করেছে।
‘শ্রাবণে’ কবিতায় উল্লিখিত প্রশ্নোক্ত চরণে বর্ষার চারদিক কীরূপ হয়েছে। দিনরাত বৃষ্টিপাত হলে প্রকৃতির অবস্থা কেমন হয় তা সহজেই অনুমেয়। তখন নদীনালা জলে ভরে ওঠে। প্লাবনের যেন আর শেষ নেই। জলে জলময় হয়ে দশদিক টলমল করে। উদ্দীপকের চিত্রটি বর্ষার বৃষ্টিঝরা দিনের। যখন অনবরত বৃষ্টি ঝরে। রাস্তাঘাট কর্দমাক্ত হয়। বিস্তীর্ণ ফসলি জমি পানিতে ডুবে যায়। বৃষ্টিতে ভিজে মানুষ হয়ে যায় কাকের ছা-এর মতো। বর্ষার এই সময়ে চারিদিকে শুধু জল আর জল।
‘শ্রাবণে’ কবিতা ও উদ্দীপক বিশ্লেষণ করলে এ দৃশ্যপটই আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয় যে, বর্ষা প্রকৃতিতে বৃষ্টির প্রভাবে চারিদিক জলময় হয়ে উঠে। তাই প্রশ্নোক্ত বক্তব্যটি ‘শ্রাবণে’ কবিতা ও উদ্দীপকের মূল ভাব ধারণ করে।
শ্রাবণে কবিতা সুকুমার রায়
সৃজনশীল—৩: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
“নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে
তিল ঠাঁই আর নাহি রে।
ওগো আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।
বাদলের ধারা ঝরে ঝর-ঝর।
আউশের খেত জলে ভর-ভর
কালী মাখা মেঘে ওপারে আঁধার
ঘনিয়ে দেখ চাহি রে।”
ওগো আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।
ক. ‘জর্জর’ শব্দের অর্থ কী?
খ. ‘অফুরান নামতায় বাদলের ধরাপাত’—কথাটি ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের কবিতাংশের সাথে শ্রাবণ কবিতার সাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘শ্রাবণে’ কবিতার সামগ্রিক ভাবার্থ ধারণ করতে পেরেছে কি? যুক্তিসহ ব্যাখ্যা কর।
সৃজনশীল—৪: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
(i) ধেয়ে চলে আসে বাদলের ধারা
নদী ধান্য দুলে দুলে সারা,
কুলায় পাখির বাসা কাঁপিছে কাতর কপোত,
দাদুরি ব্যাঙ ডাকিছে সঘনে বারবার।
(ii) নবতৃণদলে ঘনবনছায়ে
হরষ আমার দিয়েছি বিছায়ে
পুলকিত নীপ-নিকুঞ্জে আজি
বিকশিত প্রাণ জেগেছে।
ক. নদীনালা কেমন জলে ভরে ওঠে?
খ. ‘অবিরাম এক গান, ঢালো জল, ঢালো জল’—কথাটি দিয়ে কী বুঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
গ. ১ম ও ২য় উদ্দীপকটি ‘শ্রাবণে’ কবিতার মূলভাব সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ কী? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘২য় উদ্দীপকের শেষ দু’লাইন ও ‘শ্রাবণে’ কবিতার শেষ দু’লাইন সমার্থক’—কথাটি যুক্তিসহ বিশ্লেষণ কর।
আরও দেখো—সপ্তম শ্রেণির বাংলা গল্প-কবিতার সমাধান
সপ্তম শ্রেণির প্রিয় শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের সপ্তবর্ণা বাংলা বই থেকে শ্রাবণে কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায় থেকে পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য ৪টি প্রশ্ন উত্তরসহ দেওয়া হয়েছে। Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে উত্তরগুলো সংগ্রহ করে নাও। এছাড়াও অধ্যায়ভিত্তিক অনুধাবনমূলক, জ্ঞানমূলক এবং বহুনির্বাচনি প্রশ্নের সমাধান পেতে উপরে দেওয়া লিংকে ভিজিট করো।
Discussion about this post