পদার্থবিজ্ঞান ১০ম অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর : উত্তর: কোনো একটি ছোট আকারের পরিবাহক ধনাত্মক আধান লাভ করলে এর বিভব বৃদ্ধি পায় এবং এর পরিমাণ নির্ণয় করা যায়। কিন্তু পরিবাহকটি যদি অতি বিশাল আকারের গোলক হয় তাহলে এতে ধনাত্মক আধান বৃদ্ধির কারণে বিভবান্তর পরিলক্ষিত হয় না।
আমাদের পৃথিবী এমনি একটি বিশাল আকারের পরিবাহক। পৃথিবী একটি ঋণাত্মক আধানের বিশাল ভাণ্ডার। তাই এ থেকে কিছু ইলেকট্রন বের করে নিলে অথবা এতে কিছু ইলেকট্রন দিলে এর বিভবের কোনো পরিবর্তন হয় না। সে জন্য পৃথিবীর বিভবকে শূন্য ধরা হয়।
পদার্থবিজ্ঞান ১০ম অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
১. চুল আঁচড়ে চিরুনি কাগজের ছোট ছোট টুকরার কাছে আনলে তা আকর্ষণ করে কেন?
উত্তর: চিরুনি দ্বারা চুল আঁচড়ানো হলে চিরুনিতে স্থির তড়িৎ উৎপন্ন হয়। এবার এ চিরুনি ছোট ছোট কাগজের টুকরার কাছে আনলে কাগজগুলোতে বিপরীতধর্মী আধানের সঞ্চার হয় বলে চিরুনিটি কাগজের টুকরাগুলোকে আকর্ষণ করে।
২. তড়িৎ আবেশের মাধ্যমে কীভাবে একটি আধান নিরপেক্ষ বস্তুকে স্থায়ীভাবে আহিত করা যায় তা সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
উত্তর: একটি আধান নিরপেক্ষ বস্তুর সন্নিকটে একটি আধানযুক্ত বস্তু আনলে আধানবিহীন বস্তুর দুই প্রান্তে দুই বিপরীত আধানের সঞ্চারণ ঘটে। দূরবর্তী প্রান্তকে ভূমির সাথে সংযুক্ত করলে ওই আধান নিষ্ক্রান্ত হয়। এবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আধানযুক্ত বস্তুটি সরিয়ে নিলে আধানবিহীন বস্তুটি আধানপ্রাপ্ত হয় এবং ওই আধান বস্তুটির সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
৩. রং স্প্রে করার কাজে স্থির তড়িতের ধর্ম কীভাবে ব্যবহার করা হয় তা বর্ণনা কর।
উত্তর: রং স্প্রে গানের সুচালো প্রান্তটি একটি স্থির তড়িৎ জেনারেটরের এক প্রান্তের সাথে সংযুক্ত করা হয়। জেনারেটরের অপর প্রান্তটি যে ধাতব পাতটি রং করতে হবে তার সাথে সংযুক্ত করা হয় যা অবশ্যই ভূসংযুক্ত থাকে। একটি গাড়ি রং করার ক্ষেত্রে স্প্রে গান থেকে নির্গত আহিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা গাড়ির বাইরের কাঠামো দ্বারা আকৃষ্ট হয়। ফলে গাড়ির বহিরাবরণের উপর রং এর একটি সুষম আস্তরণ পড়ে। এভাবে রং স্প্রে করার কাজে স্থির তড়িতের ধর্ম ব্যবহার করা হয়।
৪. তড়িৎক্ষেত্রের কোনো বিন্দুর বিভব কীভাবে পরিমাপ করবে—ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: অসীম হতে তড়িৎক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে একটি একক ধনাত্মক আধান আনতে যে পরিমাণ কাজ করতে হয় তাকে ওই বিন্দুর বিভব বলে। সুতরাং তড়িৎক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে বিভব পরিমাপ করতে অসীম হতে একক ধনাত্মক আধানকে ওই বিন্দুতে আনা হয় এবং সম্পন্ন কাজের পরিমাণ হিসাব করা হয়।
৫. বিভব পার্থক্যের ব্যবহারিক প্রয়োগ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: দুটি বস্তু বা বিন্দুর মধ্যে বিভব পার্থক্য থাকলে এদের একটি হতে অপরটিতে আধানের স্থানান্তর ঘটে এবং তড়িৎপ্রবাহের সৃষ্টি হয়। সৃষ্ট তড়িৎপ্রবাহ কোনো বৈদ্যুতিক যন্ত্রের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করলে এর পর্দায় ছবি দেখতে পাই, হিটারের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করলে তাপ উৎপন্ন হয়। বিদ্যুৎশক্তি হলো শক্তির সবচেয়ে সুবিধাজনক রূপ এবং এটি হতে অপরশক্তি পাওয়া যায় বিভব পার্থক্যকে ব্যবহারিকভাবে প্রয়োগ করে।
৬. বিমানে জ্বালানি ভরার সময় স্থির তড়িতের বিপদ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: আকাশে যখন বিমান ওড়ে তখন বায়ুর সাথে ঘর্ষণের ফলে এটি তড়িৎগ্রস্ত হতে পারে। বিমানের আধান বাড়তে থাকলে বিমান ও ভূপৃষ্ঠের মধ্যে বিভব পার্থক্য বাড়তে থাকে। এত উচ্চ বিভব পার্থক্যের কারণে বিমানে যখন জ্বালানি ভরা হয় তখন কিছু আধান ভূমিতে চাপ যাওয়ার সময় স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা বিরাট বিস্ফোরণের কারণ হতে পারে।
৭. পৃথিবীর বিভব শূন্য ধরা হয় কেন?
উত্তর: কোনো একটি ছোট আকারের পরিবাহক ধনাত্মক আধান লাভ করলে এর বিভব বৃদ্ধি পায় এবং এর পরিমাণ নির্ণয় করা যায়। কিন্তু পরিবাহকটি যদি অতি বিশাল আকারের গোলক হয় তাহলে এতে ধনাত্মক আধান বৃদ্ধির কারণে বিভবান্তর পরিলক্ষিত হয় না। আমাদের পৃথিবী এমনি একটি বিশাল আকারের পরিবাহক। পৃথিবী একটি ঋণাত্মক আধানের বিশাল ভাণ্ডার। তাই এ থেকে কিছু ইলেকট্রন বের করে নিলে অথবা এতে কিছু ইলেকট্রন দিলে এর বিভবের কোনো পরিবর্তন হয় না। সে জন্য পৃথিবীর বিভবকে শূন্য ধরা হয়।
৮. বজ্রপাত কীভাবে সৃষ্টি হয়—ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: জলীয় বাষ্প বায়ুমণ্ডলের আহিত আয়নগুলোর উপর ঘনীভূত হয়ে পানি কণার সৃষ্টি করে এবং তড়িতাহিত হয়। এই ধরনের পানির কণাগুলো একত্রিত হলেই মেঘের উৎপত্তি হয়। মেঘ ধনাত্মক বা ঋণাত্মক যেকোনোভাবেই আহিত হতে পারে। তড়িতাহিত মেঘে যদি তড়িতের পরিমাণ বেশি হয়, তাহলে তা তড়িৎক্ষরণের মাধ্যমে পৃথিবীতে চলে আসে। এভাবে বজ্রপাত সৃষ্টি হয়।
৯. বজ্রবৃষ্টির সময় গাছের নিচে দাঁড়ানো বিপজ্জনক কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: বজ্রপাতের সময় তড়িতাহিত মেঘ থেকে তড়িৎক্ষরণের মাধ্যমে আধান পৃথিবীতে চলে আসে। আর এই আধান সবসময় পরিবাহীর মধ্য দিয়ে সংক্ষিপ্ততম পথে চলে। তাই বজ্রপাতের সময় এই তড়িৎ প্রবাহ গাছের মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে আসে যা গাছের নিচে দাঁড়ানো কোনো মানুষকে শক করার সম্ভাবনা থাকে। তাই বজ্রবৃষ্টির সময় গাছের নিচে দাঁড়ানো বিপজ্জনক।
১০. বজ্র নিরোধক কীভাবে কাজ করে?—ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: যখন তড়িৎগ্রস্ত মেঘ বাড়ির উপরে আসে, তখন বজ্র নিরোধক বিপরীত আধানে আবিষ্ট হয়। কিন্তু দণ্ডের উপরি প্রান্ত তীক্ষ্মাগ্র বিশিষ্ট হওয়ায় ওই তীক্ষ্মাগ্রগুলোতে বেশি আধান জমা হয় এবং সূচিমুখ দিয়ে তড়িৎক্ষরণ হয়। বায়ুকণাগুলো এই আধান দিয়ে আহিত হয় এবং মেঘের বিপরীত আধান কর্তৃক আকৃষ্ট হয়ে মেঘের দিকে চলে যায় এবং মেঘকে নিস্তড়িত করে। ফলে বজ্রপাতের সম্ভাবনা কম থাকে।
১১. পরমাণুর গঠনের ভিত্তিতে কোনো বস্তুর আহিত হওয়ার ঘটনা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: কোনো পরমাণুতে ইলেকট্রনের সংখ্যা এবং প্রোটনের সংখ্যা সমান থাকলে পরমাণু নিস্তড়িৎ অবস্থায় থাকে। কিন্তু যখন পরমাণুতে এদের সংখ্যা অসমান হয় তখন পরমাণু তড়িৎগ্রস্ত বা আহিত হয়। কোনো পরমাণুতে ইলেকট্রনের সংখ্যা কমে গেলে প্রোটনের আধিক্য দেখা যায়। এ অবস্থাকে বলা হয় ধনাত্মক আধানে আহিত হওয়া। আবার বহিঃস্থ ইলেকট্রন কোনো পরমাণুর সাথে যুক্ত হলে ওই পরমাণুর ইলেকট্রন সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। একে বলে ঋণাত্মক আধানে আহিত হওয়া।
১২. কোনো বস্তুকে ঘর্ষণ পদ্ধতিতে কীভাবে আহিত করা যায় বর্ণনা কর।
উত্তর: স্বাভাবিক অবস্থায় প্রত্যেক পদার্থের পরমাণুতে সমানসংখ্যক ইলেকট্রন ও প্রোটন থাকে। তবে প্রত্যেক পরমাণুরই প্রয়োজনের অতিরিক্ত ইলেকট্রন গ্রহণের প্রবণতা আছে। যখন দুটি বস্তুর মধ্যে ঘর্ষণ হয় তখন যে বস্তুর ইলেকট্রন গ্রহণের প্রবণতা বেশি সে বস্তু ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক আধানে আহিত হয় এবং অপর বস্তুটি ইলেকট্রন হারিয়ে ধনাত্মক আধানে আহিত হয়।
আরও দেখো—এসএসসি পদার্থবিজ্ঞান সৃজনশীল কমন সাজেশন
শিক্ষার্থীরা, তোমাদের আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার জন্য পদার্থবিজ্ঞান ১০ম অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য ১২টি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তরসহ রয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করে তোমরা পরীক্ষার জন্য কমন পেয়ে যাবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post