সপ্তম শ্রেণির গণিত সূচকের গল্প সমাধান : অঞ্চলে একজন রাজা ছিলেন। একদিন রাজার দরবারে এক বিদেশি পর্যটক এলেন, সাথে নিয়ে এলেন ভীষণ সুন্দর এক চিত্রকর্ম। রাজা খুশি হয়ে পর্যটককে সেই চিত্রকর্মের মূল্য দিতে চাইলেন।
কিন্তু পর্যটক সরাসরি কোন মূল্য না চেয়ে বললেন, “এই চিত্রকর্মের মূল্য দেওয়ার নিয়ম একটু ভিন্ন ” রাজা জিজ্ঞেস করলেন, “বলো দেখি কি নিয়ম!” পর্যটক বললেন, টানা ৫০ দিন ধরে এর মুল্য নিবেন। প্রথম দিন তিনি ১ টাকা নিবেন। দ্বিতীয় দিন তার দ্বিগুণ, অর্থাৎ ২ টাকা। তার পরের দিন নিবেন দ্বিতীয় দিনের দ্বিগুণ, অর্থাৎ ৪ টাকা। এভাবে তিনি ৫০ দিন ধরে এ চিত্রকর্মের মূল্য নিবেন। হিসাবটি অনেকটা নিচের ছকের মত।
সপ্তম শ্রেণির গণিত সূচকের গল্প সমাধান
রাজা ভাবলেন, এ আর এমন কি, তিনি রাজি হয়ে গেলেন। এভাবে প্রত্যেকদিন পর্যটক এসে রাজ দরবার থেকে মূল্য নিয়ে যান। কিন্তু ২০ দিন যাওয়ার পর রাজার টনক নড়ে বসলো। ভাবো তো কি কারণে সেটি হল? তোমরা ছক ০.১ এর ন্যায় একটি ছক খাতায় তৈরি করে ৫ম দিন হতে ২০তম দিন পর্যন্ত টাকার পরিমাণটি নির্ণয় করো। কিন্তু পর্যটক কী পদ্ধতিতে হিসাবটি দীড় করিয়েছে, তা কি ধরতে পারছো? হিসাবটি বুঝার জন্য হাতে কলমে আরও একটি কাজ করে দেখি, চলো।
কাগজ ভাঁজের খেলা
কাগজ ভাঁজের খেলাটি খেলার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করো:
১. A4 বা বড় খাতার মাপের একটি কাগজ নাও।
২. কাগজটির চারপাশে এমনভাবে কলম দিয়ে দাগ টানো যেন কাগজটিকে একটি আয়তক্ষেত্র মনে হয়।
৩. এখন কাগজটিকে সমান ২ ভাগে ভাঁজ করো কোনো ভাঁজ নেই এক ভাঁজ দুই ভাজ এবং ভাঁজ বরারবর কলম দিয়ে দাগ টানো। ফলে দুইটি ঘর পাওয়া গেল।
৪. আগের ভাঁজটি ঠিক রেখেই আবার কাগজটিকে ২ ভাগে ভাঁজ করো এবং আগের মত করেই দাগ দাও। এবার কয়টি সমান ঘর পাওয়া গেলো?
৫. অনুরূপ ভাবে আগের ভাঁজটি ঠিক রেখে আরও ৩ বার ভাজ করো এবং দাগ দাও। একই ভাবে ভাঁজ করতে থাকলে কততম ভাঁজে কয়টি ঘর পাওয়া যাবে নিচের ছকে (১.১) পূরণ করার চেষ্টা করো। পরবর্তীতে, দুইটি সমান ভাঁজের জায়গায় প্রতিবারে ৩ টি করে ভাজ করো এবং মোট ৪ বার ভাঁজ করে ছক ১.১ এর ন্যায় ছক ১.২ পূরণ করো।
ছকে গুণাকারে লিখতে অনেক জায়গা ও সময় লাগলো, তাই না? কিন্তু, আসলে খুব সহজে, তল্ল জায়গায় ও একদম অল্প সময়ে এরকম বড় বড় গুণাকারগুলো লিখে ফেলা সম্ভব। চিন্তা করে দেখো, তো ছক ১.৩ থেকে ছক ১.৬ -এ, প্রতি ক্ষেত্রে গুণাকারে কতটি করে সংখ্যা ছিল? আমরা খুব সহজেই সেটির সাহায্যে গুণাকারটিকে অন্য উপায়ে লিখতে পারি। এক্ষেত্রে আমরা আরেকটি ছকের সাহায্য নিবো।
এবার চিন্তা করো। তুমি তোমার নেয়া সংখ্যাটিকে ১০ বার, ১১ বার এবং ১২ বার গুণ করে ছক পুরণ করেছিলে। কাজটি করতে কষ্ট হয়েছিল তাই না? তাহলে নিচের ছকটিতে নতুন যে নিয়ম শিখলে সেটি অনুযায়ী দেখো তো লিখতে পারো কীনা?
খেয়াল করো: চিত্র ৭.২.৩-তে দেখো, একই সংখ্যা বার বার গুণ আকারে লেখার বদলে আমরা ঐ সংখ্যার ডানপাশে উপরে ছোট করে নির্দেশ করে দিচ্ছি একই সংখ্যাকে কতবার গুণ করা হয়েছে। গণিতের ভাষায় একে বলে সূচক। নিচের ছবিটি দেখো। ৩ হলো ভিত্তি। আর ৩-কে যেহেতু ৪ বার গুণ করা হয়েছে, তাই ৪ হলো ৩-এর সূচক। আমরা নতুন আরও একটি শব্দ শিখেছি- শক্তি বা power.
তাহলে বোঝা গেলো যে সূচকের মাধ্যমে আমরা খুব সহজেই বড় একটি গুণের কাজকে এক নিমেষেই সংক্ষেপে প্রকাশ করতে পারি। তাহলে এবার দেখে নেওয়া যাক সূচক দিয়ে সংখ্যাকে প্রকাশ করলে তা কীভাবে পড়বো।
এই যে বড় বড় গুণাকারকে সহজে লেখার যে পদ্ধতি দেখানো হল, সেটিই মূলত সূচকীয় পদ্ধতি। এখন আরেকটি বিষয় নিয়ে ভাবি। এতক্ষণ দেখা গিয়েছে, একটি গুণাকার কাঠামোতে, একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা বা ভিত্তি যে কয়বার থাকছে, সেই সংখ্যাটিকে ওই ভিত্তির জন্য আমরা সূচক বা ঘাত হিসেবে ব্যবহার করতে
পারি। না বুঝতে পারলে উপরের চিত্রটি আবার দেখো। এবার, ছক ১.৮ থেকে একটি উদাহরণ দেখা যাক। ১০১2 ১০ ১০ ১০ এখানে ৩ টি ১০ গুণাকারে আছে দেখে ১০ এর উপর ঘাত হিসেবে রয়েছে ৩। তাহলে চিন্তা করে দেখো, ছক ১.৩ এ তুমি কি করেছিলে? গুনে দেখো সেখানে কতটি সংখ্যা ছিল? সেখানে কিন্তু ১টি মাত্র সংখ্যা ছিল।
আবার উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শুধু ১০ লিখলে সেখানে ১ টিই ১০ থাকে। এই ক্ষেত্রেও সূচকীয় প্রকাশ করা যায়। আর সেই ঘাত বা সূচকটি আমাদের নতুন শেখা নিয়ম অনুযায়ীই হবে। অর্থাৎ, শুধু একটি সংখ্যা বা ১০ কে লেখা যায় ১০১ হিসেবে। তাহলে ছক ১.১১ পূরণ করো। পরবর্তীতে ছক ১.১১ এর ন্যায় ছক নিজের খাতায় অঙ্কন করো এবং ৯ সংখ্যাটির জন্য সেটি পূরণ করো।
চলো, আমরা আবার আমাদের সেই কাগজ ভীঁজের খেলার কথা ভাবি। তোমরা সেখান থেকে কি সূচকের কোন ধারণা করতে পারো? যদি পারো, তাহলে, ছক ১.১৪ পূরণ করো এবং পরবর্তীতে প্রতিবারে সমান ৩ ভাগ করে ভাঁজের জন্য ছক ১.১৪ এর ন্যায় নিজের খাতায় ছক অঙ্কন করে পূরণ করো।
এখন একটি বিষয় চিন্তা করো, তুমি যখন কোন ভাঁজ করো নি, তখনও কিন্তু চারপাশে দাগটানা পুরো কাগজটিকেই একটি ঘর হিসেবে চিন্তা করা যায়। কোন ভীঁজ না থাকলে ভাঁজ সংখ্যা ০, কিন্তু ঘর কতটি থাকছে? ১ টি। এবার আরেকটি মজার বিষয় দেখো, তুমি প্রতিবারে যে কয়টি করেই ধনাত্মক সংখ্যক ভাজ করতে চাও না কেন, একদম প্রথমবারে, অর্থাৎ শূণ্য ভাজে ঘর সেই ১ টিই থাকবে। এখান থেকে তোমরা কিছু বুঝতে পারছো কি?
তোমাদের বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঠিক করেছে, তোমাদের শ্রেণিতে মোট ৫ দিন ধরে ক্যান্ডি দেয়া হবে। তবে সেক্ষেত্রে কয়েকটি নিয়ম আছে। প্রথমত কে কতটি করে ক্যান্ডি পাবে, তা নির্ভর করবে প্রত্যেকের রোল নম্বরের উপর। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর রোল নম্বরের শেষ অঙ্কের সাপেক্ষে এই ক্যান্ডি প্রদান করা হবে। এখন যাদের রোল এক অঙ্কের, তাদের ওই এক অঙ্কেরই গ্রহণযোগ্য অঙ্ক।
এখন কীভাবে রোলের শেষ অঙ্কের সাহায্য নিয়ে ক্যান্ডি প্রদান করা হবে? প্রথম দিন রোলের শেষ অঙ্ক যা, একজন শিক্ষার্থীকে সেই সংখ্যক ক্যান্ডি দেয়া হবে। পরের দিন, অর্থাৎ দ্বিতীয় দিন একজন শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত ক্যান্ডি সংখ্যা হবে, আগের দিনে পাওয়া ক্যান্ডির সংখ্যার সাথে তার রোলের শেষ অঙ্ক গুণ করা হলে, পুণফল যা হবে সেই সংখ্যক।
তৃতীয় দিনে, গত দুইদিন সে যে কয়টি ক্যান্ডি পেয়েছিলো, সেটির সাথে তার রোলের শেষ অঙ্কের যে গুণফল, সেই গুণফলের সংখ্যক ক্যান্ডি পাবে। এই নিয়মেই বাকি দুইদিন সকলে ক্যান্ডি পাবে। প্রথমেই তোমরা তোমাদের রোল নম্বর চিন্তা করো এবং নিজের রোলের শেষ অংকটি নাও। নিয়ম অনুযায়ী, তোমার রোল যদি এক অঙ্কের হয়, তাহলে সেটিই তোমার রোলের শেষ অঙ্কর বা গ্রহণযোগ্য অঙ্ক তাহলে, নিচের ছকটি পূরণ করে ফেলো তো।
এখন তোমরা একটি বিষয় দেখো তো। তোমাদের শ্রেণিতে যাদের রোলের শেষে ০ অথবা ১ ছিল, তারা আসলে ৫ দিন শেষে কতটি ক্যান্ডি পেয়েছে? কিংবা তাঁদের প্রতিদিনের প্রাপ্ত ক্যান্ডির সংখ্যা কত?
খেয়াল করলে দেখবে যাদের রোলের শেষ অঙ্ক ০ তারা কোনদিনই ক্যান্ডি পায় নি। আবার যাদের রোলের শেষ অঙ্ক ১, তারা প্রতিদিনই একটি করে ক্যান্ডি পেয়েছে গেছে। অর্থাৎ, তাদের কারোরই প্রতিদিনে প্রাপ্ত ক্যান্ডি সংখ্যায় কোন পরিবর্তন আসে নি। অর্থাৎ ০ ও ১ এর উপর সূচক বসলেও তা যথাক্রমে ০ও ১ ই থাকে। তবে মনে রাখবে ০ এর উপর কিন্তু কখনও সূচক হিসেবে ০ হয় না। কেন হয় না ভেবে দেখতে পারো কী?
আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির গণিত সকল অধ্যায়ের সমাধান
সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, ওপরে দেওয়া Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে তোমার সপ্তম শ্রেণির গণিত সূচকের গল্প সমাধান সংগ্রহ করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post