আইসিটি ১ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : অতীতের শিল্পবিপ্লবের অনুরূপ এই মুহূর্তে আমরা একটি শিল্পবিপ্লবের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। যে বিপ্লবটিকে আমরা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিপ্লব বলে আখ্যায়িত করতে পারি। এই বিপ্লবটির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে এটি পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি মানুষের জীবনধারাকে স্পর্শ করেছে। পুরো পৃথিবীর সকল মানুষ প্রথমবার পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সহমর্মিতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একটি অভিন্ন মানবগোষ্ঠী হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করার সুযোগ পেয়েছে।
আইসিটি ১ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন—১: নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
বিপ্লবী ও কেয়া দুইজনই উচ্চ-মাধ্যমিক স্তরে পড়াশোনা করে। তাদের আইসিটি শিক্ষক ‘বিশ্বের পরিচ্ছন্ন শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থায় ব্যবহৃত প্রযুক্তি ঢাকায় ব্যবহার’ বিষয়ে অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করতে দিলেন। বিপ্লবী কলেজ লাইব্রেরি এবং অন্যান্য লাইব্রেরিতে বসে বই পড়ে এবং ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করল। অ্যাসাইনমেন্টে সে তথ্যসূত্র উল্লেখ করল। কেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিনিয়র ভাইয়ের অ্যাসাইনমেন্ট ইন্টারনেট থেকে নিয়ে কিছুটা পরিবর্তন করে জমা দিল। কেয়ার অ্যাসাইনমেন্ট দেখে আইসিটি শিক্ষকের বুঝতে অসুবিধা হলো না এটি কপি করা।
ক. ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কী?
খ. ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে মৌলিক গবেষণা সম্ভব নয়’—ব্যাখ্যা কর।
গ. বিপ্লবী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কোন অবদান ব্যবহার করেছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. প্রযুক্তির ব্যবহার বিবেচনায় বিপ্লবী এবং কেয়ার কাজের বৈসাদৃশ্য মূল্যায়ন কর।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হচ্ছে কম্পিউটারের মাধ্যমে তৈরি কৃত্রিম একটি পরিবেশ, যা মানুষকে বাস্তব পরিবেশের মতো অনুভব করায়।
খ. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) হলো মানুষের তৈরি একটি প্রযুক্তি, যা পূর্বে বিদ্যমান তথ্য বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে বা কাজ করতে পারে। তবে, মৌলিক গবেষণা বলতে বোঝায় নতুন জ্ঞান, তত্ত্ব, ধারণা বা উদ্ভাবন তৈরি করা—যার জন্য গভীর চিন্তাভাবনা, সৃজনশীলতা এবং নিত্যনতুন প্রশ্ন তোলার ক্ষমতা দরকার। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেহেতু নিজ থেকে কিছু চিন্তা বা নতুন তত্ত্ব উদ্ভাবন করতে পারে না, বরং মানুষের দেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে কাজ করে, তাই অও-এর মাধ্যমে মৌলিক গবেষণা সম্ভব নয়। এটি কেবল মানুষের গবেষণাকে সহায়তা করতে পারে, নেতৃত্ব দিতে পারে না।
গ. বিপ্লবী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ‘ইন্টারনেট’ এর অবদান ব্যবহার করেছে। সে তার অ্যাসাইনমেন্ট তৈরির জন্য ইন্টারনেটের বিভিন্ন উৎস থেকে প্রয়োজনীয় ও প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহ করেছে। ইন্টারনেট এমন একটি প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী তথ্য কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যায়। ইন্টারনেট তাকে বই-পুস্তকের বাইরে থেকেও বিভিন্ন নিবন্ধ, প্রতিবেদন, গবেষণালব্ধ তথ্য এবং বিদেশি শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থার প্রযুক্তিগত দিক নিয়ে বিস্তারিত জানতে সাহায্য করেছে।
তথ্য সংগ্রহ শেষে সে নিজের বিশ্লেষণ ও চিন্তাশক্তি প্রয়োগ করে একটি মৌলিক অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করেছে এবং সঠিকভাবে তথ্যসূত্র উল্লেখ করেছে। এটি ইন্টারনেটের সৃজনশীল ও নৈতিক ব্যবহারের একটি ভালো উদাহরণ। ফলে বলা যায়, বিপ্লবী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ইন্টারনেট-এর যথাযথ ব্যবহার করে তার অ্যাসাইনমেন্টটি সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।
ঘ. বিপ্লবী ও কেয়া দুজনেই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে, তবে তাদের ব্যবহার পদ্ধতিতে রয়েছে স্পষ্ট বৈসাদৃশ্য। বিপ্লবী ইন্টারনেটকে একটি গবেষণার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করেছে। সে বিভিন্ন অনলাইন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে নিজে বিশ্লেষণ করে একটি মৌলিক অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করেছে এবং তথ্যসূত্র সঠিকভাবে উল্লেখ করেছে। তার কাজটি সৃজনশীল, দায়িত্বশীল এবং নৈতিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণযোগ্য।
অন্যদিকে, কেয়া প্রযুক্তি ব্যবহার করলেও তা ছিল অনৈতিক। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনিয়রের তৈরি অ্যাসাইনমেন্ট ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে কেবল কিছু অংশ পরিবর্তন করে জমা দিয়েছে। এটি সরাসরি নকল বা প্লেজিয়ারিজমের শামিল, যা শিক্ষার মৌলিক উদ্দেশ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং নৈতিক শিক্ষার পরিপন্থী।
সুতরাং, প্রযুক্তির ব্যবহার বিবেচনায় বিপ্লবীর কাজ তথ্যপ্রযুক্তির সঠিক ও নৈতিক ব্যবহারের উদাহরণ, আর কেয়ার কাজ তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার ও অনৈতিক আচরণের প্রতিফলন। এই দুই কাজের মধ্যে মৌলিকতা, সততা ও দায়িত্বশীলতার দিক থেকে একটি বড় পার্থক্য বিদ্যমান।
সৃজনশীল প্রশ্ন—২: নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
ইমা তার বাসায় আনা নতুন টিভিতে একটি সিনেমা দেখল। সিনেমা দেখার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ ধরনের চশমা ব্যবহার করলে নিজেকে সিনেমার অংশ মনে হয়। সে খুবই আনন্দিত হলো। সে তার বাবাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারল একটি বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে টিভি এবং সিনেমাটি তৈরি করা হয়েছে। ইমা তার এই আনন্দ অনুভূতি তার Facebook Account এর মাধ্যমে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করল।
ক. রোবোটিক্স কী?
খ. ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এর ধারণাটি ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে ব্যবহৃত প্রযুক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বন্ধুদের সাথে ইমার আনন্দ-অনুভূতি শেয়ার ‘বিশ্বগ্রাম ধারণা সংশ্লিষ্ট’—এর যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা কর।
২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. রোবোটিক্স হলো একটি প্রযুক্তি শাখা, যেখানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে সক্ষম রোবট তৈরি, নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করা হয়।
খ. ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বলতে বোঝায় দেশের প্রতিটি খাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে একটি প্রযুক্তিনির্ভর উন্নত রাষ্ট্র গঠন। এই ধারণার মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য মোচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহার করে জনগণের জীবনমান উন্নয়ন করা। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে এই লক্ষ্য অর্জনের পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং চারটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি—মানবসম্পদ উন্নয়ন, জনগণের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সুশাসন ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারকে সামনে রেখে কার্যক্রম শুরু করে। এই ধারণা প্রযুক্তিনির্ভর, দক্ষ ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার একটি জাতীয় রূপরেখা হিসেবে কাজ করছে।
গ. উদ্দীপকে ব্যবহৃত প্রযুক্তিটি হলো ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, যা একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবহারকারী নিজেকে একটি কৃত্রিম বা কল্পিত পরিবেশে অবস্থান করছে বলে অনুভব করে। ইমা যে বিশেষ চশমা ব্যবহার করে সিনেমা দেখেছে, তা মূলত ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট, যা ত্রিমাত্রিক (3D) ও ঘিরে রাখার মতো বাস্তব অনুভূতি তৈরি করে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে টিভি ও সিনেমা এমনভাবে তৈরি করা হয় যেন দর্শক শুধু দেখছে না, বরং সিনেমার ঘটনাপ্রবাহের অংশ হয়ে উঠছে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সাধারণত বিশেষ ধরনের চশমা, সেন্সর, সফটওয়্যার এবং কম্পিউটার প্রযুক্তির সাহায্যে কাজ করে। এটি ব্যবহারকারীর চোখ, কান ও শরীরের অনুভূতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে একটি ভার্চুয়াল পরিবেশ তৈরি করে। ফলে দর্শক মনে করে সে সেই পরিবেশের বাস্তব অংশ।
এই প্রযুক্তি বর্তমানে শুধু বিনোদনেই নয়, শিক্ষা, চিকিৎসা, সামরিক প্রশিক্ষণ, গেমিং ও স্থাপত্য ডিজাইনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হচ্ছে। ইমার আনন্দের অনুভূতি এবং বন্ধুদের সঙ্গে ফেসবুকে তা ভাগ করে নেওয়া আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সমাজ ব্যবস্থারই প্রতিফলন।
ঘ. ইমা তার আনন্দ-অনুভূতি বন্ধুদের সাথে Facebook-এর মাধ্যমে মুহূর্তেই শেয়ার করেছে, যা ‘বিশ্বগ্রাম’ (Global Village) ধারণার সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। বিশ্বগ্রাম বলতে বোঝায়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের মানুষ একে অপরের সাথে খুব সহজে, দ্রুত এবং তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করতে পারছে—যেমনটি আগে গ্রামের মানুষের মধ্যে দেখা যেত।
ইমা যেমন মুহূর্তের মধ্যে তার আনন্দ সারা বিশ্বের যেকোনো স্থানে থাকা বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পেরেছে, তেমনি তার বন্ধুরাও তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে। এই দ্রুত তথ্য বিনিময় এবং অনুভূতি ভাগ করে নেওয়ার ক্ষমতা তথ্যপ্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের অবদানে সম্ভব হয়েছে, যা বিশ্বকে একটি ছোট গ্রামে রূপান্তর করেছে।
এই জন্যই বলা যায়, ইমার এই কাজ ‘বিশ্বগ্রাম’ ধারণার একটি বাস্তব প্রয়োগ—যেখানে দূরত্ব কোনো বাধা নয়, প্রযুক্তিই সবকিছুকে এক সূত্রে গাঁথছে।
সৃজনশীল প্রশ্ন—৩: নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
গবেষক ড. হাসিব সকালে তাঁর ল্যাবে প্রবেশ করতে গিয়ে দরজা খুলতে পারছেন না। কারণ গতকাল তিনি তার হাতের একটি আঙ্গুল কেটে যাওয়ায় ব্যান্ডেজ করে রেখেছেন। ফলে তাঁকে সহকর্মী শাফায়াত না আসা পর্যন্ত বাইরে অপেক্ষা করতে হলো। এতে বিরক্ত হয়ে তিনি ল্যাবের দরজা খোলার জন্য পাসওয়ার্ডযুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করলেন।
ক. ন্যানোটেকনোলজি কী?
খ. বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে ব্যাখ্যা কর।
গ. ল্যাবে কোন প্রযুক্তির ব্যবহার করে ড. হাসিব দরজা খুলে থাকেন—ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ড. হাসিব কর্তৃপক্ষকে যে প্রস্তাব দিলেন, তা কি যৌক্তিক বিশ্লেষণ কর।
আরও দেখো: আইসিটি অনুধাবনমূলক এবং বহুনির্বাচনি প্রশ্ন উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির আইসিটি ১ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। এখানে মূল বইয়ের প্রশ্নের পাশাপাশি পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য আরও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন-উত্তর রয়েছে। আমি আশা করছি, এই প্রশ্নগুলো প্রাকটিস করলে তোমরা পরীক্ষার জন্য শতভাগ কমন পেয়ে যাবে। সবগুলো সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর পিডিএফ আকারে সংগ্রহের জন্য উপরে ‘ANSWER SHEET’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post