পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র ৭ম অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : সরকার রাষ্ট্রের কান্ডারী স্বরূপ। সরকারের প্রকৃতির উপরই রাষ্ট্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য প্রতিফলিত হয়। সুদীর্ঘ সংগ্রাম ও ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। মুক্তির এ সংগ্রামের মূল লক্ষ্য ছিল জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা।
বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থাও জনগণের দ্বারা পরিচালিত হবে। বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক, এককেন্দ্রিক ও সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার রাষ্ট্র, যার সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ, জনগণের সবোর্” চ কল্যাণ ও অংশগ্রহণ নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে সরকার কাঠামো কেন্দ্রিয় ও স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তবে সরকার প্রধানত তিনটি বিভাগের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। সেগুলি হলো আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। প্রত্যেক বিভাগের স্বতন্ত্র কার্যক্রম রয়েছে
বাংলাদেশ সরকারের কাঠামো
১. শাসন বিভাগ: শাসন বিভাগের প্রকৃত ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে প্রধানমন্ত্রীর হাতে। রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতি দেশের প্রতিনিধিত্ব করবে; কিন্তু সকল ক্ষেত্রে তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ গ্রহণ করতে হয়। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীপরিষদেরও প্রধান। মন্ত্রীপরিষদের সদস্যদের প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দান করেন।
মন্ত্রীদের মধ্যে দায়দায়িত্ব বন্টন করেন প্রধানমন্ত্রী। সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী সরকার ব্যবস্থার প্রধান নীতিনির্ধারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে আইন বাস্তবায়নগত সকল ক্ষমতা শাসন বিভাগের এখতিয়ারে। বাংলাদেশের শাসন বিভাগ এর ব্যাপ্তি সমুন্নত রেখেছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ থেকে একেবারে তৃণমূল পযায় পর্যন্ত। এ কারণে সরকারের এই বিভাগটির মাধ্যমেই রাষ্ট্রের সকল স্তরে আইন বাস্তবায়ন সম্ভব হয়।
২. আইন বিভাগ: বাংলাদেশ সরকারের আইন বিভাগ আইন প্রণয়ন, পরিবর্তন ও সংশোধন করার অধিকার রাখে, যা সংবিধান কর্তৃক স্বীকতৃ । বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থায় সংসদীয় পদ্ধতি গৃহীত হওয়ার দরুণ আইনসভাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের হাতেই নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে।
সরকার কর্তৃক শাসনব্যবস্থা পরিচালিত করার ক্ষমতা মহান সংসদের হাতে থাকার কারণে বাংলাদেশে সংসদের সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। এর অর্থ হল-আইন ও শাসন প্রণয়নগত সকল বিষয়ে সংসদ কতৃর্ক গৃহীত নীতিমালাই প্রযােজ্য হবে এবং তা শাসন বিভাগ কতৃর্ক বাস্তবায়িত হবে। এর ব্যতয় হওয়া সাংবিধানিকভাবে আইন লংঘনের শামিল।
৩. বিচার বিভাগ: বাংলাদেশের সরকার কাঠামোতে বিচার বিভাগ সরকারের সকল প্রকার বিচারিক কার্য সম্পাদন করে থাকে। বিচারিক কার্যের অংশ হিসেবে এই বিভাগটি মূলত: সংবিধান ও আইন অনুযায়ী অপরাধীকে শাস্তি প্রদান করে থাকে ও জনগণের অধিকার রক্ষা করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে থাকে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়টি দেশের সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত। সেদিক থেকে বাংলাদেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিষয়টি সংবিধান কর্তৃক রীতিসিদ্ধ।
এ ছাড়া সংবিধান সমুন্নত রেখে বিচার বিভাগ তার বিচারিক কার্যাদি সম্পন্ন করে থাকে। উপরিউল্লিখিত সরকারের তিনটি বিভাগের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার রাষ্ট্রের নিরাপত্তা দান, জনগণের অধিকার সংরক্ষণ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা, ন্যায়বিচার ইত্যাদি নিশ্চিতকরণসহ সকল প্রকার জনকল্যাণমূলক কার্যাদি করে থাকে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের উপরিউক্ত কার্যাবলি সম্পাদনের অধিকার সংবিধান কর্তৃক প্রণীত। বাংলাদেশের সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় সরকারই সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি ও কৌশল নির্ধারণ করে।
বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামো
১. কেন্দ্রীয় প্রশাসন বা সরকার: কেন্দ্রীয় সরকার বলতে মূলত সরকারের তিনটি বিভাগ যথা: ক. আইন বিভাগ, খ. শাসন বিভাগ ও গ. বিচার বিভাগকে বোঝানো হয়। সকল ধরনের আদালত সংক্রান্ত কার্যাবলি উচ্চ আদালত দেখভাল করে তার নিজস্ব কাঠামোর মধ্যে। জাতীয় সংসদ আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত কাজ করে এবং তার নিজস্ব সচিবালয়ের মাধ্যমে দাপ্তরিক কার্যাবলি সম্পাদন করে। রাষ্ট্রের সকল প্রশাসনিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য রাজধানী ঢাকায় একটি কেন্দ্রীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।
এই সচিবালয়ের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের সকল কার্যাবলি সম্পাদন করা হয়। রাষ্ট্রের বৈদেশিক সম্পর্ক থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সকল অঞ্চলের সকল প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার কার্যাবলি পরিচালনার জন্য এই সচিবালয় মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। আইন অনুসারে দেশের রাষ্ট্রপতি এই প্রশাসনিক দপ্তরের প্রধান এবং তাঁর নামেই সকল কর্মকান্ড পরিচালিত হয়।
তবে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত থাকায় প্রধানমন্ত্রী প্রকৃত প্রধান হিসেবে বিভিন্ন মন্ত্রীর মাধ্যমে এই সচিবালয়ের সকল কাজকর্ম পরিচালনা করে থাকে। একজন মন্ত্রিপরিষদ সচিব যিনি রাষ্ট্রের স্থায়ী প্রশাসনের প্রধান, প্রধানমন্ত্রীকে সকল কাজের দাপ্তরিক প্রধান হিসেবে সহযোগিতা করে থাকেন। কেন্দ্রীয় প্রশাসন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ, সচিবালয়, মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য শাখাসমূহে বিস্তৃত।
২. স্থানীয় প্রশাসন বা সরকার : সরকারের প্রবর্তিত নীতিসমূহ বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় পর্যায়ে নিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি কর্তৃক এলাকাভিত্তিক শাসন ব্যবস্থাকে স্থানীয় প্রশাসন বলে। স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃপক্ষ সরকারের নির্দেশে এবং প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণাধীনে দায়িত্ব পালন করে। স্থানীয় প্রশাসন প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ঠ যারা, তারা সকলেই সরকারী কর্মচারী। স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের নীতি ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়।
পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র ৭ম অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন ১ : বিলাশ একটি বই পড়ে জানতে পারল বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র একই ধরনের সরকারব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। ক্ষমতা বন্টনের নীতি অনুসারে এই দুই দেশের সরকার পরিচালনা পদ্ধতি ভিন্ন। বাংলাদেশে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান ভিন্ন ব্যন্তি এবং আইন বিভাগ শক্তিশালী। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে একই ব্যক্তি রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান এবং রাষ্ট্রপতি ক্ষমতাশালী।
ক. একনায়কতন্ত্র কী?
খ. যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সরকারগুলো একই পদ্ধতির সরকারের ভিন্নরূপ – ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত দুটি সরকারের পার্থক্য বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্ন ২ : “ক” রাষ্ট্রে সরকার প্রধানসহ মন্ত্রীপরিষদের সকল সদস্যদের আইনসভার কাছে জবাবদিহি করতে হয়। অন্যদিকে “খ” রাষ্ট্রে শাসন বিভাগ আইন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন। ফলে শাসন বিভাগকে তার কাজের জন্য আইন বিভাগের কাছে জবাবদিহি করতে হয় না।
ক. এককেন্দ্রিক সরকার কী?
খ. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে কী বোঝায়?
গ. “ক” রাষ্ট্রে কী ধরনের সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “ক” রাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থা “খ” রাষ্ট্রের চেয়ে উত্তম – বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৩ : করিম সাহেব সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের সদস্য। তার প্রধান দায়িত্ব হলো জনগণের মৌলিক অধিকার ও সংবিধানের প্রাধান্য রক্ষা করা। তিনি তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন।
ক. গণভোট কী?
খ. রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে নির্দেশিত অঙ্গটির স্বাধীনতা রক্ষার উপায় বর্ণনা করো।
ঘ. উদ্দীপকে নির্দেশিত অঙ্গটি কীভাবে সংবিধানের প্রাধান্য ও জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা করে? ব্যাখ্যা করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৪ : ‘ক’ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রের একটি বিভাগ দুনীতি দমন বিষয়ক একটি আইন পাস করে। প্রতি অর্থবছরের শুরুতে সরকারের আয় ও ব্যয়ের হিসাব নির্ধারণ করে। দেশ ও জাতির প্রয়োজনে দেশটি ১৬ বার সংবিধান সংশোধন করেছে। তবে শাসন ও বিচার কার্যে এ বিভাগ তেমনটা হস্তক্ষেপ করে না।
ক. আইনসভার প্রধান কাজ কী?
খ. বর্তমানে শাসনবিভাগের সদস্যরাই রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেয়। ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে কোন বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত ‘ক’ রাষ্ট্রের বিভাগটির কার্যাবলির থেকে পাঠ্যবইয়ের আলোচিত কার্যাবলি অনেক ব্যাপক – বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৫ : সুমনের দেশে কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রাদেশিক বা স্থানীয় সরকারের মধ্যে ক্ষমতার কোনো বন্টন নেই। সেখানে সকল ক্ষমতা সংবিধান অনুযায়ী কেন্দ্রের হাতে ন্যাস্ত।
ক. এরিস্টটলের মতে সরকারের বিকৃত রূপ কোনটি?
খ. দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে নির্দেশিত সরকারের সুবিধা-অসুবিধা বিশ্লেষণ করো।
ঘ. স্থানীয় নেতৃত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এই ধরনের সরকার কতটা সহায়ক? ব্যাখ্যা করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৬ : গৌরনদী হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকের অবহেলায় এক নবজাতক শিশুর মৃত্যু হয়। শিশুটির বাবা এ ডাক্তারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। গৌরনদী থানার ওসি কামরুল সাহেব অভিযুক্তকে বিধি মোতাবেক গ্রেফতার করে। জেলা জজ শফিকুল ইসলাম সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযুক্ত ডাক্তারকে শাস্তি প্রদান করেন।
ক. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রবক্তা কে?
খ. যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বলতে কী বোঝায়?
গ. জনাব কামরুল সরকারের কোন বিভাগের সদস্য? উক্ত বিভাগের কার্যক্রম ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর, জনাব শফিকুলের বিভাগের স্বাধীনতা আইনের শাসন নিশ্চিত করে? বিশ্লেষণ কর।
►► পৌরনীতি ১ম পত্র – ১ম অধ্যায়: পৌরনীতি ও সুশাসন পরিচিতি
►► পৌরনীতি ১ম পত্র – ২য় অধ্যায়: সুশাসন
►► পৌরনীতি ১ম পত্র – ৩য় অধ্যায়: মূল্যবোধ, আইন, স্বাধীনতা ও সাম্য
►► পৌরনীতি ১ম পত্র – ৪র্থ অধ্যায়: ই-গভর্নেন্স ও সুশাসন
►► পৌরনীতি ১ম পত্র – ৫ম অধ্যায়: নাগরিক অধিকার, কর্তব্য ও মানবাধিকার
►► পৌরনীতি ১ম পত্র – ৬ষ্ঠ অধ্যায়: রাজনৈতিক দল, নেতৃত্ব ও সুশাসন
►► পৌরনীতি ১ম পত্র – ৭ম অধ্যায়: সরকার কাঠামো ও সরকারের অঙ্গসমূহ
►► পৌরনীতি ১ম পত্র – ৮ম অধ্যায়: জনমত ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি
►► পৌরনীতি ১ম পত্র – ৯ম অধ্যায়: জনসেবা ও আমলাতন্ত্র
►► পৌরনীতি ১ম পত্র – ১০ম অধ্যায়: দেশ প্রেম ও জাতীয়তা
এইচএসসি শিক্ষার্থীরা তোমাদের অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে এখানে ক্লিক করো। নতুন সাজেশন পেতে জয়েন করো SSC and HSC Candidates, Bangladesh ফেসবুক গ্রুপে। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post